রাঙামাটিতে ২০২১ সালের এসএসসি উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা দিয়েছে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি)।

আজ শুক্রবার (১৪ জানুয়ারি ২০২২) পিসিপি’র রাঙামাটি জেলা শাখার উদ্যোগে এ সংবর্ধনা দেওয়া হয়।
‘যারা যোগ্য তাদের সমাজ ও জাতির প্রতি দায়িত্বও বেশি, এসো প্রকৃত শিক্ষা অর্জন করে নিজেকে নিপীড়িত মানুষের মুক্তির সংগ্রামে আত্মনিয়োগ করি’ স্লোগানে অনুষ্ঠিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে পিসিপি’র রাঙামাটি জেলা শাখার সভাপতি নিকন চাকমার সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক তনুময় চাকমার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন ইউপিডিএফ সংগঠক জয়েন চাকমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের রাঙামাটি জেলা সভাপতি ললিত ধন চাকমা, পিসিপি’র চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সহ-সাধারণ সম্পাদক সুদেব চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশন রাঙামাটি জেলা প্রতিনিধি নিশি চাকমা ও চায়না ন্যান্টং বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ভাস্কর চাকমা। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন পিসিপি’র রাঙামাটি জেলা শাখার সহসাধারণ সম্পাদক রিমি চাকমা।
অনুষ্ঠান শুরুর আগে এযাবৎকালের সকল শহীদদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। এরপর পাহাড়ি ছাত্র ছাত্রী দল গানটি পরিবেশনের মধ্য দিয়ে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
উক্ত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ নেহাতই শুধু একটি সংগঠন নয়। ১৯৮৯ সালে লংগদু গণহত্যার মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠা লাভকারী এই ছাত্র সংগঠনটির বহু নেতা-কর্মী তাদের বুকের তাজা রক্ত দিয়েছেন এবং জেল জুলুমের শিকার হয়েছেন। পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ এখনো সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার রয়েছে।

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বক্তারা বলেন, এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া শিক্ষার্থীদের একটি টার্নিং পয়েন্ট। শিক্ষাক্ষেত্রে সিড়ির এক ধাপ এগোনো মানে হচ্ছে আরও উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের পথের সূচনার সৃষ্টি। এভাবে বছরের পর বছর শতশত পাহাড়ি শিক্ষার্থী প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের জন্য বিভিন্ন সরকারি কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বারস্থ হয়। কিন্তু অনেক শিক্ষার্থীর স্বপ্ন অর্থের অভাবে থমকে যায়। আর যারা টিকতে পারে তারাও অনেকে মাঝপথে ব্যর্থ হতে বাধ্য হয়। পার্বত্য চট্টগ্রামের অধিকাংশ শিক্ষার্থীর বসবাস প্রত্যন্ত অঞ্চলে হওয়ায় এবং মুল ধারার পরিবেশের সাথে যোগাযোগ বিছিন্ন হওয়ায় মেধা ও যোগ্যতা থাকার পরেও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি বা উচ্চ শিক্ষা অর্জন করতে পারে না। তাদের সঠিক দিক নির্দেশনা দিয়ে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ সর্বদা পাশে থাকবে বলে বক্তারা আশ্বাস দেন।
বক্তারা আরো বলেন, ন্যায়বিচার ও অধিকার আদায়ের জন্য যুগে যুগে ছাত্র সমাজ অগ্রণী ভুমিকা পালন করেছেন। ছাত্ররা প্রমাণ করে দিয়েছেন শুধু আত্মকেন্দ্রীকতা নয় বরং জনগণের স্বার্থের জন্য ছাত্র সমাজ বড় ধরনের ভূমিকা পালন করতে পারে। তাই ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে পাহাড়ি শিক্ষার্থীদেরও উচিত রাষ্ট্রযন্ত্রের সকল অন্যায় নিপীড়ন ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে লড়াই-সংগ্রামে সামিল হওয়া।

বক্তারা বলেন, শুধু প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় শিক্ষিত না হয়ে শিক্ষার্থীদের সুশিক্ষিত ও জাতীয় আত্মমর্যাদাবোধ সম্পন্ন হতে হবে। পার্বত্য চট্টগ্রামের সকল জাতিসত্তার অস্তিত্ব রক্ষা ও ন্যায্য অধিকার আদায়ের জন্য আন্দোলনে সামিল হওয়ার জন্য বক্তারা শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানের ২য় পর্বে ২০২১ সালে এসএসসি পরীক্ষায় কৃতকার্য ১২০ জন শিক্ষার্থীর হাতে ফুল ও বই উপহার হিসেবে দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীরা তাদের অনুভতি প্রকাশ করেন।
অনুষ্ঠানে শেষ পর্বে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।