প্রীতি ফুটবল ম্যাচ অনুষ্ঠিত
নিজস্ব প্রতিনিধি।। রাঙামাটির কাউখালীতে মুহুর্মুহু ‘রেঙ’ দিয়ে (এক প্রকার জয়ধ্বনি) আনন্দ-উচ্ছাসে সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপ ২০২২ জয়ী বাংলাদেশ দলের সদস্য ঋতুপর্ণা চাকমা, রূপনা চাকমা, আনাই মগিনী, আনুচিং মগিনী ও মনিকা চাকমা এবং তাদের প্রথম পৃষ্ঠপোষক বীরসেন চাকমা, কোচ শান্তিমনি চাকমা ও সুইহ্লামং মার্মাকে স্বজাতি ও স্বদেশের মুখ উজ্জ্বল করায় সংবর্ধনা দিয়েছে এলাকাবাসী।
আজ শুক্রবার (৭ অক্টোর ২০২২) বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে কাউখালী উপজেলার পানছড়ি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। প্রত্যন্ত এলাকাবাসীর পক্ষে ২নং ফটিকছড়ি ইউনিয়ন পরিষদ, পানছড়ি উচ্চ বিদ্যালয়, ঈরবান ক্লাব ও আগমুলিম ক্লাব অনুষ্ঠানটি আয়োজন করে।
সংবর্ধনা ও ক্রেস্ট প্রদান অনুষ্ঠানের আহ্বায়ক ও ২নং ফটিকছড়ি ইউপি চেয়ারম্যান উষাতন চাকমা এবং সদস্য সচিব ক্রীড়া সংগঠক সুরেশ কান্তি চাকমার নেতৃত্বে একদল এলাকাবাসী সকাল সাড়ে ১০টার দিকে রাস্তা মাথায় (উল্লো ব্রীজ) অতিথিদের অভ্যর্থনা জানান। এরপর তাঁদের নিয়ে ব্যান্ডের তালে তালে প্রায় আড়াই কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে পানছড়ি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এসে পৌঁছান।
এ সময় সমবেত শত শত দর্শক জুম্মোদের ঐতিহ্যবাহী জয়ধ্বনি “রেঙ” দিয়ে আনন্দ-উচ্ছাসে তাঁদের স্বাগত জানান।
অনুষ্ঠান মঞ্চে খেলোয়াড়দের প্রথম পৃষ্ঠপোষক বীরসেন চাকমা, কোচ শান্তিমনি চাকমা, পাহাড়ের পাঁচ কৃতি খেলোয়াড় ঋতুপর্ণা চাকমা, রূপনা চাকমা, আনাই মগিনী, আনুচিং মগিনী ও মণিকা চাকমাকে সাত শিশু ফুলের তোড়া ও মালা দিয়ে বরণ করেন। শারীরিক অসুস্থতার কারণে কোচ সুইহ্লামং মার্মা উপস্থিত থাকতে পারেননি।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ২ নং ফটিকছড়ি ইউপি চেয়ারম্যান উষাতন চাকমা । মঞ্চে আরো উপস্থিত ছিলেন পানছড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক সুনীল কান্তি তালুকদার ও পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের কাউখালী শাখার সভাপতি সান্তনা চাকমা।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন নিউটন চাকমা ও অনিল চাকমা।
এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন, পানছড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের নবাগত প্রধান শিক্ষক নতুন জয় চাকমা। এতে আরো বক্তব্য রাখেন সুনীল কান্তি তালুকদার, পৃষ্ঠপোষক বীরসেন চাকমা, কোচ শান্তিমনি চাকমা, খেলোয়াড় ঋতুপর্ণা চাকমা এবং মনিকা চাকমা।
সুনীল কান্তি তালুকদার তার বক্তব্যে বলেন, “সাফ ফুটবল শিরোপা জয়ী আমাদের মেয়েরা পাহাড়কে নতুন করে আলোকিত করেছেন। শত বাধা বিপত্তি পেরিয়ে তারা সফল হয়েছেন। তাদের সাফল্যে আমরা পাহাড়বাসী অত্যন্ত গর্বিত এবং আনন্দিত হয়েছি”।
পৃষ্ঠপোষক বীরসেন চাকমা বলেন, “পাহাড়ে আমাদের প্রতিভা চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। তারা একটু সহযোগিতা পেলেই সাফল্যের শিখরে উঠে আসতে পারে। ঋতু, রূপনা, আনাইদের এ পর্যায়ে আসতে শুধুমাত্র গুটিকয়েক ব্যক্তির অবদান নয়, এখানে প্রত্যেকের ভূমিকা রয়েছে। কাউখালীতে আমাদের শিক্ষকদের একটা ব্যাচ ছিল। ধারশমনি চাকমা, নলিনী চাকমা, শ্যামল মিত্র চাকমা, ধন কুমার তনচঙ্গ্যা, শশী মনি চাকমা এবং সর্বোপরি সহকারী শিক্ষা অফিসার কৌশিক চাকমা স্যারসহ সবার একটা আন্তরিক প্রচেষ্টা ও পরিশ্রমের ফসল হচ্ছে এরা”।
তিনি সংবর্ধিত খেলোয়াড়দের উদ্দেশ্যে সতর্ক করে বলেন, “অর্থ, যশ, খ্যাতি সবাই ধারণ করতে পারে না। আমি ঋতু, রূপনা, মনিকা ও আনাইদের বলবো, তারা যেন খ্যাতির মোহে বিভ্রান্ত না হয়। অহংকারী যাতে না হয়। নিজের সমাজ ও স্ব জাতির কথা যেন তারা ভুলে না যায়। তাদের সব সময় বিনয়ী হতে হবে”।
কোচ শান্তিমনি চাকমা বলেন, “এ ধরনের চমৎকার মহতী অনুষ্ঠান যারা আয়োজন করেছেন তাদেরকে ধন্যবাদ জানাই। সমাজে কারো না কারো এ ব্যাপারে ভূমিকা রাখতে হয়। বর্তমানে যুব সমাজ ইন্টারনেটে জুয়া ও গেম খেলে উচ্ছন্নে যাচ্ছে। একমাত্র খেলাধুলার মাধ্যমে তা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যেতে পারে”।
খেলোয়াড় ঋতুপর্ণা চাকমা বলেন, “আপনারা যে আমাদের সংবর্ধনা দিয়েছেন সেজন্য আমরা আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। এ পর্যায়ে আসতে আমাদের অনেক পরিশ্রম ও ত্যাগ তিতিক্ষা স্বীকার করতে হয়েছে। কঠোর নিয়ম শৃঙ্খলা আমরা মেনে চলেছি। সবাই একতাবদ্ধভাবে পরিশ্রম করেছি বলেই সফল হয়েছি”।
খেলোয়াড় মনিকা চাকমা বলেন,‘‘আপনারা আমাদের যেভাবে সংবর্ধিত করেছেন তা আজীবন মনে থাকবে। ভবিষ্যতে আমরা যাতে আরো ভালো করতে পারি সে আশীর্বাদ কামনা করছি”।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ক্রীড়াঙ্গনে পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান ও কৃতি ফুটবল খেলোয়াড় গড়তে অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ বীরসেন চাকমার হাতে সম্মাননা স্মারক ও নগদ অর্থ (প্রতীক সম্মানী) তুলে দেন সংবর্ধনা আয়োজক কমিটির সদস্য এবং ঘাগড়া ইউপির ৪ নং ওয়ার্ডের মেম্বার মুনিন্দ্র তালুকদার। আর ক্রীড়াঙ্গনে অবদান ও আন্তর্জাতিক মানের কৃতি ফুটবলার গড়তে মৌলিক ভূমিকার স্বীকৃতি স্বরূপ শান্তিমনি চাকমার হাতে সম্মাননা স্মারক ও নগদ অর্থ (প্রতীক সম্মানী) তুলে দেন ২ নং ফটিকছড়ি ইউপি চেয়ারম্যান উষাতন চাকমা।
ফুটবল খেলার মাধ্যমে স্বজাতি ও স্বদেশের মুখ উজ্জ্বল করায় পাঁচ খেলোয়াড় ঋতুপর্ণা চাকমা, মনিকা চাকমা, আনুচিং মগিনী, আনাই মগিনী ও রূপনা চাকমার হাতে সম্মাননা স্মারক ও নগদ অর্থ (প্রতীক সম্মানী) তুলে দেন যথাক্রমে ৯৭ নং মুবাছড়ি মৌজার হেডম্যান কালি রতন চাকমা, পানছড়ি উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি অনিল বিকাশ চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘ কাউখালী শাখার সভাপতি সান্তনা চাকমা, ক্রীড়া সংগঠক সুরেশ কান্তি চাকমা এবং ঘাগড়া ইউপির ৫ নং ওয়ার্ডের মেম্বার শশী রঞ্জন চাকমা ।
অনুষ্ঠানের সভাপতি উষাতন চাকমা তাঁর সমাপনী বক্তব্যে বলেন, “আমাদের ডাকে পৃষ্ঠপোষক, কোচ, খেলোয়াড়সহ অতিথিরা যেভাবে সাড়া দিয়েছেন তাতে আমরা অভিভূত। খেলোয়াড়দের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, আপনারা যে সুনাম অর্জন করেছেন, তা যেন নিজের সমাজের প্রতি অঙ্গীকার করে ধরে রাখতে পারেন। আর এ অনুষ্ঠান সফল করতে যারা শারীরিক, মানসিক ও আর্থিকভাবে সহযোগীতা করেছেন তাদের সবার প্রতি কৃতজ্ঞাতা প্রকাশ করছি। বিশেষ করে কাউখালী জোত মালিক সমিতি, পানছড়ি সমাজ কল্যাণ সমিতি, ১০১ নং ঘিলাছড়ি মৌজার হেডম্যান পুষ্পল কুসুম তালুকদার, ৯৭ নং মুবাছড়ি মৌজার হেডম্যান কালি রতন চাকমা, ঘাগড়া ইউপির মেম্বার পলি চাকমা, কিরণ চাকমা, শশী রঞ্জন চাকমা ও মুনিন্দ্র তালুকদার এ অনুষ্ঠানের পিছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন”।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠান শেষে খেলোয়াড় ও অতিথিদের সম্মানে বিশেষ ভোজ সভা আয়োজন করা হয়।
এরপর বিকেল ৪ টায় পানছড়ি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে পাঁচ খেলোয়াড় আয়োজক কমিটির সদস্যদের সাথে প্রীতি ফুটবল ম্যাচে অংশগ্রহণ করেন। এতে দর্শকরা তুমুল করতালি দিয়ে তাদের খেলা উপভোগ করেন।