আজ ১৯ ফেব্রুয়ারি রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেকে সেনা-সেটলার হামলার দশ বছর পূর্ণ হলো।
২০১০ সালের এ দিনে সেনা-সেটলাররা যৌথভাবে সাজেক ইউনিয়নে পাহাড়িদের কয়েকটি পাহাড়ি গ্রামে বর্বরোচিত হামলা, লুটপাট ও ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে ব্যাপক তাণ্ডবলীলা চালায়।
পরদিন ২০ ফেব্রুযারিও একইভাবে হামলা চালানো হয়।

হামলার সময় সেনা জওয়ানরা নিরস্ত্র পাহাড়ি জনগণের ওপর নির্বিচারে গুলি বর্ষণ করলে ঘটনাস্থলে নিহত হন বুদ্ধপুদি চাকমা ও লক্ষী বিজয় চাকমা নামে দু’জন স্থানীয় বাসিন্দা।
হামলাকারী সেনা-সেটলাররা নিরীহ গ্রামবাসীদের হত্যা করেই ক্ষান্ত হয়নি। তারা অগ্নিসংযোগ করে ২টি বৌদ্ধ বিহার ও ৩টি গীর্জাসহ ১১টি গ্রামের পাহাড়িদের পাঁচ শতাধিক ঘরবাড়ি পুড়ে ছাই করে দেয়।
এটা ছিল সাজেকের দ্বিতীয় বারের মত হামলা। এর আগে ২০০৮ সালে সাজেকে সেনা সহায়তায় সেটলাররা পাহাড়িদের কয়েকটি গ্রামে হামলা চালিয়ে বেশকিছু ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছিল।
উক্ত হামলার প্রতিবাদে সাজেকের জনগণ ব্যাপক গণ প্রতিরোধ গড়ে তোলে। পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশ-বিদেশে ব্যাপক প্রতিবাদ বিক্ষাভ সংগঠিত হয়।
ভূমি বেদখল বিরোধী আন্দোলনের প্রক্রিয়ায় বাঘাইহাট বাজার বয়কট করে এলাকার জনগণ গঙ্গারাম দোরে উজো বাজার নামে একটি বাজার গড়ে তোলে। যা এখনো চালু রয়েছে।

এই উজো বাজার সাজেকের জনগণের সংগ্রামের এক মূর্ত প্রতীক। ‘উজো’ একটি চাকমা শব্দ, যা যুদ্ধে বা সংগ্রামে রণধ্বনি হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
পার্বত্য চট্টগ্রামের আন্দোলনের ইতিহাসে উজো বাজারের এক বিশেষ তাৎপর্য আছে বলেই সরকার ও সেনাবাহিনী এ বাজারকে ধ্বংস করার জন্য শুরু থেকেই উঠেপড়ে লেগে যায়। তারা জনগণকে ভয়ভীতি, হুমকি প্রদর্শন, ব্যবসায়ীদের উজো বাজারে যেতে বাধা দেয়াসহ নানাভাবে বাজারটি বন্ধ করে দেয়ার জন্য এখনো চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কিছুদিন আগেও তারা এ ধরনের চেষ্টা চালিয়েছে।
বর্বরোচিত এ্ হামলার ১০ বছর অতিক্রান্ত হলেও বিচার ও শাস্তি হয়নি হামলায় জড়িত সেনা-সেটলারদের। উপরন্তু পর্যটন কেন্দ্র নির্মাণের মাধ্যমে সাজেক থেকে পাহাড়ি উচ্ছেদসহ নতুন নীল-নক্সা বাস্তবায়ন করছে সরকার।