
নিজস্ব প্রতিনিধি।। বান্দরবানের লামা উপজেলার লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড কর্তৃক আবারো লামা সরই ইউনিয়নে ভূমি রক্ষা সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক রংধজন ত্রিপুরা ও সদস্য সচিব লাংকম ম্রোসহ ১৪ জন ম্রো ও ত্রিপুরা গ্রামবাসীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।
গত ৪ সেপ্টেম্বর ২০২২ লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ’র ডেপুটি ম্যানেজার পরিচয়ধারী মো. আব্দুল মালেক (৩৮), পিতা-মৃত আব্দুল হান্নান, সাং- কেয়াজু পাড়া, ৭নং ওয়ার্ড, সরই ইউপি, লামা বান্দরবান (মোবাইল নং-০১৮১৯৬৪৬৭১৩) সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত, লামা, বান্দরবান-এ উক্ত মামলাটি (সিআর মামলা নং-৩১৩/২০২২) দায়ের করেন। উক্ত মামলার ধারাগুলো হচ্ছে-১৪৩/৪৪৭/৪২৭/৩৭৯/৫০৬(২)/১০৯/৩৪।
সিনিয়র ম্যাজিস্ট্রেট বেলাল উদ্দিন মামলাটি তদন্ত করে আগামী ৩/১০/২০২২ তারিখে তদন্ত রিপোর্ট দাখিলের জন্য লামা সহকারী কমিশনার (ভূমি)-অফিসারকে নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলায় আসামী হিসেবে যাদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে তারা হলেন- ১. রংধজন ত্রিপুরা (৩০) পিতা- মৃত পদ্মমনি ত্রিপুরা ২. মতি ত্রিপুরা (২৫) পিতা-দয়ারাম ত্রিপুরা, ৩ লাংকম মুরং (৩৬) পিতা পাইচং মুরং, ৪. রিংরং মুরং (৪৫), পিতা- রিপিত মুরং, উভয়সাং- মেরাইত্যা নয়াপাড়া, ৯নং ওয়ার্ড, সরই; ৫. রেংয়োং মুরং (৩০) পিতা মৃত চিত্ত রঞ্জন মুরং ৬. দুই থং মুরং (৩০), পিতা- লাালে মুরং, ৭. রেংয়েন মুরং (৪৫), পিতা লাইপু মুরং , ৮. ফদারাম ত্রিপুরা (৪০) পিতা জতিচন্দ্র ত্রিপুরা, ৯. কাদিং মুরং (২৫) পিতা আদই মুরং, ১০. ইয়াংইং মুরং (৩০) পিতা পাইচং মুরং ও ১১. ওয়াশিং ত্রিপুরা (২৮), পিতা যতিচন্দ্র ত্রিপুরা, ১২. সিংবত মুরুং (৪০), পিতা- রিপিও মুরুং, ১৩. মেনরিং মুরুং (২৭), পিতা-রিপিও মুরুং, ১৪. যোহন মুরুং (২৫), পিতা-রিংরং মুরুং। এছাড়া মামলায় আরো ১৫/২০ জনকে অজ্ঞাতনামা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
মামলায় উল্লেখিত ব্যক্তিরা সবাই লামা সরই ভূমি রক্ষা সংগ্রাম কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন।
মামলায় উক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে গত ২৫/০৮/২০২২ ইং তারিখ সকাল অনুমান ৮.০০ঘটিকার সময় ৩০৩ নং ডলুছড়ি মৌজার হোল্ডিং নং রাবার/৪০ এর ৮০০৭ নং দা/রাবার প্লটে এবং একই মৌজায় হোল্ডিং নং রাবার/৮৮ এর ১০৫৫/১৮ দাগ/রাবার প্লটে দা, কুড়াল ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে অনধিকার প্রবেশ করে রাবার গাছ কেটে ফেলা, খামার বাড়ি ভেঙে দেওয়া, রাবার চারা চুরি ও হুমকি প্রদানের মতো মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়েছে।
এর আগে গত ১৪ আগস্ট একই ব্যক্তি উক্ত আদালতে ১১ জনের নাম উল্লেখ করে আরেকটি মামলা দায়ের করেছিলেন। সেখানেও একই অভিযোগ আনা হয়েছিলো। নতুন মামলায় আরো ৩ জনের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, বিগত ২০১৯ সাল থেকে লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড-এর নামে লামা উপজেলার সরই ইউনিয়নে লাংকম কার্বারি (ম্রো) পাড়া, রেংয়েন কার্বারি (ম্রো) পাড়া ও জয়চন্দ্র কার্বারি (ত্রিপুরা) পাড়ায় বসবাসকারী পাহাড়িদের ভোগদখলীয় ৪০০ একর জুমভূমি বেদখলের পাঁয়তারা শুরু হয়। ইতোমধ্যে বেশকিছু জায়গায় তারা দখল করে নেয়। অবশিষ্ট জায়গাটুকু জবরদখল করতে তারা প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখে। এ বছর ৯ এপ্রিল রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ’র এর দায়িত্বরত লোকজন বাইরে থেকে শতাধিক রোহিঙ্গা নিয়ে এসে পাড়াবাসীদের জুমের জমি, বাগান-বাগিচা কেটে সাফ করে দেয়। এরপর ২৬ এপ্রিল সেই সাফ করা জমিতে তারা আগুন লাগিয়ে দিয়ে পাহাড়ি পাড়াবাসীদের জুমভূমি, জুমখেত, বাঁশবাগান, ফলজ বাগান-বাগিচা পুড়ে ধ্বংস করে দেওয়া হয়। উক্ত আগুন লাগিয়ে দেয়ার ঘটনাটি দেশের পত্র-পত্রিকায় ফলাও করে প্রচারিত হলে ব্যাপক আলোচিত হয়। এ ঘটনা নিয়ে সারাদেশে বিভিন্ন সংগঠন প্রতিবাদ বিক্ষোভ করে। কিন্তু রাবার কোম্পানির আগ্রাসী থাবা থেমে যায়নি। তারা সন্ত্রাসী লেলিয়ে দিয়ে গত ১৩ জুলাই ভূমি রক্ষা আন্দোলনের নেতা রংধজন ত্রিপুরার ওপর হামলা চালায় এবং ১০ আগস্ট রেংয়েন কার্বারি পাড়ায় নবনির্মিত অশোক বুদ্ধ বিহারে হামলা-ভাংচুর ও ২টি বুদ্ধমূর্তি লুট করে নিয়ে যায়।
উক্ত ৪০০ একর জুমভূমি রক্ষার দাবিতে এবং কোম্পানির লোকজন কর্তৃক অব্যাহত হয়রানি, হামলা-মামলার প্রতিবাদে গত ৫ সেপ্টেম্বর ২০২২ লামা সরই ভূমি রক্ষা সংগ্রাম কমিটি ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছে। এর আগে গত ১৪ আগস্ট তারা লামা লাংকম পাড়ায় মানববন্ধন করেছিলেন।