ইউপিডিএফের মানবাধিকার পরীবিক্ষণ সেলের বার্ষিক রিপোর্টের তথ্য : ২০২০ সালে পার্বত্য চট্টগ্রামে রাষ্ট্রীয় বাহিনী দ্বারা ৬ জনকে হত্যা, ১১৫ জনকে গ্রেফতার

২০২০ সালে পার্বত্য চট্টগ্রামে রাষ্ট্রীয় বাহিনী দ্বারা বিচার বহির্ভুত হত্যা, অন্যায় গ্রেফতার, শারীরিক নির্যাতন, বেআইনি তল্লাশি, রাষ্ট্রীয় মদদপুষ্ট সন্ত্রাসী কর্তৃক খুন-অপহরণ, নারী নির্যাতন, সাম্প্রদায়িক হামলা ও ভূমি বেদখলের তথ্য তুলে ধরে ২০২০ সালের বার্ষিক মানবাধিকার রিপোর্ট প্রকাশ করেছে ইউপিডিএফ’র মানবাধিকার পরীবিক্ষণ সেল।

গতকাল ১১ জানুয়ারি ২০২১ এ রিপোর্টটি প্রকাশ করা হয়। এতে ২০২০ সালে রাষ্ট্রীয় বাহিনী দ্বারা ৬ জনকে বিচার বহির্ভুত হত্যা, ১১৫ জনকে গ্রেফতার, এলোপাতাড়ি ব্রাশফায়ারে ১ জন নারী নিহত হওয়া, ৪০ জনকে শারীরিক নির্যাতন, ১১৬ বাড়িতে বেআইনি তল্লাশি, রাষ্ট্রীয় বাহিনীর মদদপুষ্ট সন্ত্রাসী কর্তৃক ৬ জনকে খুন, ৬৩ জনকে অপহরণ, পাহাড়িদের ওপর ৪টি সাম্প্রদায়িক হামলা, ১৯ জন নারীর ওপর যৌন নির্যাতন ও ভূমি বেদখলের বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে।

রিপোর্টে বিচার বহির্ভুত হত্যার তথ্য তুলে ধরে বলা হয়, ২০২০ সালে সেনাবাহিনী কর্তৃক বিচার বহির্ভুত হত্যার শিকার হন ৬ জন। এর মধ্যে জানুয়ারিতে পরেশ ত্রিপুরা নামে ইউপিডিএফের এক সদস্যকে হত্যা করা হয়; ফেব্রুয়ারিতে অর্পণ চাকমা নামে ইউপিডিএফের এক সদস্যকে হত্যা করা হয়; অক্টোবরে আশাপূর্ণ চাকমা নামে ইউপিডিএফ’র এক সদস্য ও হিরণজয় চাকমা সম্ভু নামে একজন জেলেকে হত্যা করা হয়; ডিসেম্বরে নয়ন চাকমা নামে ইউপিডিএফের এক সদস্যকে ও মিল্টন চাকমা নামে জেএসএস সমর্থিত একজনকে হত্যা করা হয়।

রাষ্ট্রীয় বাহিনী কর্তৃক গ্রেফতারের তথ্য তুলে ধরে রিপোর্টে বলা হয়, ২০২০ সালে পার্বত্য চট্টগ্রামে রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন বাহিনী কর্তৃক অন্তত ১১৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়। এর মধ্যে ফেব্রুয়ারি মাসে ৬ জন, মার্চ মাসে ৫ জন, এপ্রিল মাসে ১০ জন, জুন মাসে ১ জন, জুলাই মাসে ১৬ জন, আগস্ট মাসে ৩৪ জন, সেপ্টেম্বর মাসে ১ জন, অক্টোবর মাসে ১৬ জন, নভেম্বর মাসে ৫ জন ও ডিসেম্বর মাসে ১৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে ২৩ জন রাজনৈতিক দলের কর্মী, ৬ জন জনপ্রতিনিধি, ১ জন শিক্ষক ও ২ জন ব্যবসায়ী রয়েছেন। এছাড়া আর বাকী সবাই সাধারণ গ্রামবাসী ও স্কুল—কলেজের ছাত্র। গ্রেফতারকৃতদের অনেকের বিরুদ্ধে অস্ত্র ও হত্যা মামলাসহ বিভিন্ন মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়।   

গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে ৩৮ জনকে হয়রানি ও নির্যাতনের পর ছেড়ে দেওয়া হয়, ২ জন জামিনে মুক্তিলাভ করেন এবং ১ জন সেনা হেফাজত থেকে পালিয়ে যেতে সক্ষম হন বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়।

উক্ত রিপোর্টে সেনাবাহিনীর এলোপাতাড়ি ব্রাশ ফায়ারে ১ জন জুম্ম নারী নিহত ও ২ শিশু ও ১ ছাত্র আহত হওয়ার ঘটনা তুলে ধরে বলা হয়, ১০ জুলাই বান্দরবানের রোয়াংছড়ি উপজেলার শামুকঝিড়িমুখ এলাকায় সেনাবাহিনীর অতর্কিত ব্রাশ ফায়ারে শান্তিলতা তঞ্চঙ্গ্যা নামে এক পাহাড়ি নারী নিহত ও অর্জুন তঞ্চঙ্গ্যা নামে তার ৪ বছরের শিশু সন্তান আহত হয়। এর আগে ২৬ মে রাঙামাটির জুরাছড়িতে সেনাবাহিনীর টার্গেট শুটিংকালে রিপন চাকমা নামে এক ছাত্র গুলিবিদ্ধ হয়। আর ৮ অক্টোবর রাঙামাটির সাজেকের উজো বাজার এলাকায় সেনাবাহিনীর অতর্কিত ব্রাশ ফায়ারে মনিময় চাকমা নামে ১২ বছরের এক শিশু গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়।

রাষ্ট্রীয় বাহিনী কর্তৃক নির্যাতন ও হয়রানির চিত্র তুলে ধরে রিপোর্টে বলা হয়, ২০২০ সালে ৪০ জনকে শারীরিক নির্যাতন, ১১৬ গ্রামবাসীর বাড়িতে তল্লাশি, ৫টি বাড়ি ভাঙচুর, ২টি ধর্মীয় পরিহানী (বৌদ্ধ বিহার নির্মাণে বাধাদান ও ধর্মীয় অনুষ্ঠান পন্ডের চেষ্টা), ৫টি হয়রানিমূলক ঘটনা (যার মধ্যে তল্লাশির নামে সেনা ক্যাম্পে ইঞ্জিনচালিত নৌকা আটকে রাখার কারণে রাঙামাটির সুবলঙে এক গর্ভবতী নারীর মৃত্যু হয়) এবং করোনা মহামারীর শুরুতে দেশে জারী করা লকডাউন ও কল—কারখানা বন্ধের কারণে চট্টগ্রামের বিভিন্ন গার্মেন্টস কারখানায় কর্মরত পাহাড়িরা বাড়ি ফেরার সময় খাগড়াছড়ির সীমান্তবর্তী নয়াবাজার সেনা চেকপোষ্টে ব্যাপক হয়রানির শিকার হন। এ সময় হয়রানির প্রতিবাদ করতে গিয়ে সেনা—পুলিশের লাঠিচার্জে চার নারীসহ কমপক্ষে ৫ জন আহত হন।

রিপোর্টে খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গায় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিজিবির হামলায় ৫ জন সেটলার নিহত তথ্যও তুলে ধরা হয়।

এছাড়া রিপোর্টে কারাগারে চিকিৎসা অবহেলায় ইউপিডিএফের এক নেতার মৃত্যু, হাইকোর্ট থেকে জামিন পাওয়ার পর নতুন মামলা দিয়ে গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের এক সদস্যকে জেলে আটক রাখা, খাগড়াছড়ির পানছড়িতে করোনাকালে বসানো অস্থায়ী বাজারে কেনাবেচায় বিজিবির বাঁধা ও দোকান ভাংচুর, পাহাড়িদের ঘরবাড়ি নির্মাণে বাধাদান, গণতান্ত্রিক অধিকারের উপর হস্তক্ষেপ, সেনাবাহিনী কর্তৃক রাঙামাটির জুরাছড়িতে জনগণের চলাচলে নিয়ন্ত্রণ আরোপ, সাজেকে মসজিদ নির্মাণে বালু ও পানি সরবরাহে এলাকাবাসীকে বাধ্যকরণ– ইত্যাদির উপর বিস্তারিত তুলে ধরা হয়।

রাষ্ট্রীয় মদদপুষ্ট সন্ত্রাসীদের দ্বারা সংঘটিত ঘটনা তুলে ধরে বার্ষিক মানবাধিকার রিপোর্টে বলা হয়, ২০২০ সালে করোনা মহামারীর সময়ও রাষ্ট্রীয় মদদপুষ্ট সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা সক্রিয় ছিল। তারা মূলতঃ নিরাপত্তা বাহিনীর ক্যাম্পের পাশে অবস্থান করে তাদের তৎপরতা চালিয়ে থাকে। সন্ত্রাসীদের হামলায় ৫ জন ইউপিডিএফ সদস্য ও ১ জন পিসিজেএসএস কর্মী প্রাণ হারিয়েছেন। হত্যার চেষ্টা চালানো হয় ১ জনকে। সন্ত্রাসীদের হাতে অপহরণের শিকার হয়েছেন ৬৩ জন, নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ১৫ জন। এছাড়া এই সন্ত্রাসীদের দ্বারা খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে হয়রানি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, ভাঙচুর—তল্লাশি, গুলিবর্ষণের অন্তত ৯টি ঘটনা সংঘটিত হয়েছে বলে রিপোর্টে তুলে ধরা হয়।

রিপোর্টে নারী নির্যাতনের তথ্য তুলে ধরে বলা হয়, ২০২০ সালে পার্বত্য চট্টগ্রামে ১৯ জন নারী যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে ধর্ষণ ও গণধর্ষণের শিকার হন ১৩ জন , ধর্ষণ চেষ্টার শিকার হন ৫ জন এবং শ্লীলতাহানির শিকার হন আরও ১ জন নারী। ধর্ষণের ঘটনাগুলো অধিকাংশই ঘটেছে সেটলার বাঙালি দ্বারা।
ঘটনার শিকার নারীদের মধ্যে খাগড়াছড়িতে ১ জন বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ও রাঙামাটিতে ১ জন মানসিক ভারসাম্যহীন নারী রয়েছেন। পার্বত্য চট্টগ্রামের বাইরে ফেনীতে বেড়াতে গিয়ে অপর এক পাহাড়ি তরুণী ধর্ষণের শিকার হন। আর পুলিশ সদস্য দ্বারা ধর্ষণের শিকার হয়েছেন এক স্কুল ছাত্রী।
খাগড়াছড়ি সদরে বলপিয়ে আদামে বুদ্ধি প্রতিবন্ধী নারীকে গণধর্ষণের ঘটনাটি ব্যাপক আলোচিত হয় এবং এ ঘটনার বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রতিবাদও সংগঠিত হয়। ফলে পুলিশ অভিযুক্ত ৭ জনকে গ্রেফতার করতে বাধ্য হয়। তবে এ ঘটনার ভুক্তভোগী ন্যায় বিচার পাওয়ার সম্ভাবনা এখনো অনিশ্চিত।
এছাড়া মহালছড়িতে সংঘটিত স্কুলছাত্রীকে গণধর্ষণের ঘটনাটিও আলোচনার ঝড় তুলে। এ ঘটনায় মহালছড়ি সদর ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা রতন কুমার শীল ১০ হাজার টাকা জরিমানায় ঘটনাটি মীমাংসা করতে চাইলে ব্যাপক সমালোচনা ও প্রতিবাদ দেখা দেয়।

রিপোর্টে সাম্প্রদায়িক হামলার তথ্য তুলে ধরে বলা হয়, ২০২০ সালে পাহাড়িদের ওপর অন্তত ৪টি সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে তিনটি হচ্ছে পার্বত্য চট্টগ্রামে ও একটি চট্টগ্রাম নগরীতে। পার্বত্য চট্টগ্রামে হামলাগুলো সংঘটিত হয় খাগড়াছড়ির জালিয়া পাড়া ও মাটিরাঙ্গায় এবং রাঙামিাটর লংগদুতে। পৃথকভাবে সংঘটিত এসব হামলায় অন্তত ১১ জন পাহাড়ি আহত হয়েছেন।

ভূমি দেখলের চিত্র তুলে ধরে রিপোর্টে বলা হয়, ২০২০ সালে পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন জায়গায় সেনা ও বিজিবি ক্যাম্প স্থাপনের নামে ভূমি বেদখল ও বেদখল পাঁয়তারা অব্যাহত ছিল। রাঙামাটির কাউখালী, লংগদু, বরকল—জুরাছড়ি, রাঙামাটি সদরের মগবান ও বিলাইছড়ির কেংড়াছড়ি এলাকায় ভূমি বেদখল করে অন্তত ৬টি ক্যাম্প স্থাপনের তথ্য পাওয়া যায়। এর মধ্যে রাঙামাটির কাউখালী উপজলার দোবাকাবা—নভাঙা এলাকায় স্থানীয় গ্রামবাসীদের জমি দখল করে ক্যাম্প স্থাপন করা হয়। নভেম্বর মাসের শেষ দিকে এই ক্যাম্পটি স্থাপনের কাজ শুরু করা হয়। এলাকাবাসীর ব্যাপক আপত্তি সত্ত্বেও ক্যাম্প স্থাপনের কাজ চালু রাখা হয়েছে।

এছাড়া মার্চ মাসে রাঙামাটির লংগদু উপজেলার গুলশাখালী শান্তিনগর এলাকায় এক পাহাড়ির মালিকানাধীন জায়গায় বিজিবির নতুন ক্যাম্প স্থাপনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়; এপ্রিল মাসে রাঙামাটি সদর উপজেলার মগবান ইউনিয়নের দেপ্পোছড়ি এলাকায় এক ব্যক্তির জায়গায়, বরকল ও জুরাছড়ি উপজেলার সীমান্তবর্তী বৈদ্য পাড়া—মদন পাড়া সংলগ্ন এলাকায়, মে মাসে বিলাইছড়ির কেংড়াছড়ি ইউনিয়নের মেরাংছড়া মারমা পাড়ায় এবং বান্দরবানের রুমায় গ্যালেঙ্গা ইউনিয়নের কিস্ত পাড়ায় এক ব্যক্তির জায়গা দখল করে সেনা ক্যাম্প স্থাপন করা হয়।

অপরদিকে খাগড়াছড়ির গুইমারা, পানছড়ি ও রাঙামাটির লংগদু ও সাজেকে অন্তত ৪টি স্থানে ক্যাম্প স্থাপনের নামে জায়গা বেদখলের পাঁয়তারা চালানো হয়। সাজেকে এক ব্যক্তির মাছ চাষের পুকুর দখলে নেওয়া হয় বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়।

সেটলার বাঙালি কর্তৃক রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানের বিভিন্ন স্থানে অন্তত ১২টি স্থানে ভূমি বেদখল ও বেদখল চেষ্টার ঘটনা ঘটেছে উল্লেখ করে রিপোর্টে বলা হয়, রাঙামাটির নান্যাচরের বেতছড়িতে সেটলাররা জোরপূর্বক জায়গা বেদখল করতে গেলে পাহাড়িরা প্রতিরোধ করে। এর জবাবে সেটলাররা বগাছড়ি এলাকায় মোটর সাইকেল আরোহীদের ওপর হামলা চালালে ১ জন পাহাড়ি আহত হয়। এছাড়া বান্দরবানের আলীকদমে নিজ জমিতে কাজ করতে গিয়ে এক পাহাড়ি নারী সেটলারদের দ্বারা হামলা ও মারধরের শিকার হন এবং লামার ফাঁসিয়াখলীতে সেটলার কর্তৃক ভূমি বেদখলকে কেন্দ্র করে পাহাড়ি-বাঙালির মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে উভয় পক্ষের অন্তত ৩ জন আহত হন।

পর্যটন ও বিভিন্ন কোম্পানির নামে ভূমি বেদখলের তথ্য তুলে ধরে রিপোর্টে বলা হয়,  বান্দরবানের চিম্বুক পাহাড়ে যুগ যুগ ধরে বসবাসরত ম্রো জনগোষ্ঠীর আনুমানিক এক হাজার একর জমি বেদখল করে সেনা কল্যাণ ট্রাস্ট ও সিকদার গ্রুপ একটি পাঁচতারকা হোটেল ও বিনোদন পার্ক নির্মাণ করছে। এর ফলে ম্রো জনগোষ্ঠীর লোকজন চরম উচ্ছেদ আতঙ্কের মধ্যে দিনযাপন করতে বাধ্য হচ্ছেন।

এছাড়া লামা রাবার ইন্ডাস্টি্রজ ও মেরিডিয়ান কোম্পানীসহ বিভিন্ন রাবার কোম্পানীর লোকজন লামা উপজেলার সরই ইউনিয়নে স্থানীয় ৩টি ম্রো পাড়ার বাসিন্দাদের নিজেদের ভিটেমাটি ও জায়গা ছেড়ে না গেলে তাদের বিরুদ্ধে মামলা, নির্যাতন-হয়রানি ও ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়ার হুমকি প্রদান করে এবং গজালিয়াা ইউনিয়নের ডলুছড়ি মৌজার দুর্গম কালু ম্রো পাড়ার ‘পাড়াবন’—এর জায়গা দখল করে সেখান থেকে জোরপূর্বক গাছ বাঁশ কেটে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

অপরদিকে, ভূমিদস্যু জসিম উদ্দিন মন্টু ও জিকে শামীম’র মালিকানাধীন সিলভান ওয়াই রিসোর্টের লোকজন কর্তৃক পাহাড়িদের মালিকানাধীন রাবার বাগানের ৫ হাজারের অধিক রাবার গাছ আগুনে পুড়িয়ে দেয়া এবং নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান মো: শফিউল্লাহ কর্তৃক পর্যটনের নামে পাহাড়িদের ভোগদখলীয় প্রায় এক হাজার একর জায়গা অবৈধভাবে দখলের অভিযোগ পাওয়া যায়।

রিপোর্টে উন্নয়নের নামে উচ্ছেদ ও সেটলার পুনর্বাসন পরিকল্পনার তথ্যও তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয়,  রাঙামাটির সাজেক ইউনিয়নের সিজকছড়া নামক স্থানে সেনাবাহিনী একটি বাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে বলে জানা যায়। বাঁধ নির্মাণ করা হলে ১০৫ পাহাড়ি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। অপরদিকে রাঙামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার বাঘাইহাট ও মারিশ্যার চারকিলো এলাকায় এবং লংগদুর ডাকঘর মোন এলাকায় ৫ শতাধিক বাঙালি সেটলার পরিবার পুনর্বাসনের গোপন পরিকল্পনা গ্রহণের তথ্য জানা যায়।

বাধ্যতামূলক শ্রম ও বর্ণবাদী আচরণের তথ্য তুলে ধরে রিপোর্টে বলা হয়, রাঙামাটির সাজেকে পাহাড়ি অধ্যুষিত পর্যটন এলাকায় মসজিদ নির্মাণের জন্য বালু, পানি উত্তোলন ও সরবরাহ করতে সেনাবাহিনী পাহাড়ি অধিবাসীদের বাধ্য করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। অপরদিকে এক পাহাড়ি যুবককে তার পিতা পাহাড়িদের একটি রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পৃক্ত থাকায় সেনাবাহিনীর চাকুরী থেকে অব্যাহিত দেয়া হয়।

এছাড়া করোনাকালে বান্দরবানে পাহাড়ি নারীদের স্থানীয়ভাবে সবজি বিক্রিতে পুলিশের বাধা দেয়া এবং থানচিতে দুর্গম পাহাড়ি গ্রামগুলোকে অবৈধ ঘোষণা করে প্রশাসনের চিঠি দেয়ার বিষয়টিও রিপোর্টে গুরুত্ব সহকারে তুলে ধরা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *