অস্তিত্ব সঙ্কটে মুন্ডা আদিবাসীরা

বিশেষ প্রতিনিধি।। অস্তিত্ব সঙ্কটে সাতক্ষীরার আদিবাসী মুন্ডা সম্প্রদায়। হারিয়ে যাচ্ছে তাদের বসতভিটা। নিরক্ষর, দরিদ্র সংখ্যালঘু এই আদিবাসিরা যুগ যুগ ধরে প্রভাবশালীদের দ্বারা নির্যাতিত, নিষ্পেষিত। হতদরিদ্র এই সম্প্রদায় সমাজে অবহেলিত। কৃষি জমি না থাকায় দিন মজুরি তাদের একমাত্র পেশা। মুন্ডা সম্প্রদায়ের লোক হওয়ায় অনেকে তাদের কাজে নিতে চায় না। তাই অতিকষ্টে কাজ জুটিয়ে দিন মজুরি করে অন্নের সংস্থান করতে হয় এই সম্প্রদায়ের সদস্যদেরকে।

মুন্ডা সম্প্রদায়ের প্রায় ৩০ ঘর পরিবারের বসত রয়েছে সুন্দরবন সংলগ্ন শ্যামনগর উপজেলার ঈশ্বরীপুরে। ১৯৫০ এর রাষ্ট্রীয় প্রজাস্বত্ব আইনে আদিবাসী সম্প্রদায়ের জমি বিক্রয় নিষিদ্ধ হলেও নাম ও পদবী পরিবর্তন করে এদের দখলীয় সম্পত্তি ক্রয় দেখিয়ে দখল করে নিচ্ছে এলাকার কতিপয় প্রভাবশালী মহল এমন অভিযোগ এলাকার নাগরিক সমাজের। মামলার পর মামলা দিয়ে এদেরকে এলাকা ছাড়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। উত্তরণ নামের একটি বেসরকারী সংস্থার আইনি সহযোগিতায় তারা ভূমি রক্ষার অধিকারে এখন উচ্চ আদালতে মামলা লড়ছে। মামলা ও দখলবাজদের হাত থেকে পরিত্রান চায় এই অঞ্চলের আদিবাসী মুন্ডা সম্প্রদায়।

বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের উপজেলা শ্যামনগর। ব্রিটিশ আমলে জঙ্গল কেটে আবাদ করার জন্য স্থানীয় জমিদাররা ভারতের সাঁওতাল পরগানা থেকে এদেরকে নিয়ে আসে। কঠোর পরিশ্রমী এই আদিবাসীদের পূর্ব পুরুষরা সুন্দরবনকে কেটে আবাদ করেন। সুন্দরবনকে স্থানীয়ভাবে বাদাবন বলা হয়।

নিজেদের বসবাসের জন্য বাদা কাটা সম্পত্তিতে আদিবাসীরা গ্রামের পত্তন করে। ব্রিটিশ আমল থেকে ৩০ ঘর মুন্ডা সম্প্রদায়ের লোক এই উপজেলার ঈশ্বরীপুর ইউনিয়নের কাশিমারী গ্রামে বসবাস করে আসছে। অসহায় গরিব ও অশিক্ষিত শ্রেণীর মানুষ হিসেবে এরা অপাঙ্ক্তেয়। দরিদ্র, নিঃস্ব, বঞ্চিত, নিরক্ষর সংখ্যালঘু মুন্ডাদের একমাত্র মাথা গোঁজার ঠাঁই বাস্তভিটা থেকে উচ্ছেদ করে উক্ত জমি জবর দখল করার অভিযোগ রয়েছে এলাকার কয়েক প্রভাবশালীর বিরুদ্ধে। এই নিয়ে উচ্চ আদালতে মামলাও চলছে।

প্রজাস্বত্ব আইনানুযায়ী আদিবাসীদের জমি অন্য সম্প্রদায়ের কেউ কিনতে পারবে না। কিন্তু এখানকার আদিবাসী অশ্বিনী মুন্ডার নামের শেষে মুন্ডা শব্দ পরিবর্তন করে সরদার পদবী বসিয়ে কৌশলে জমি রেজিস্ট্রি করে নেয় এলাকার এক প্রভাবশালী ব্যক্তি। এরপর থেকে তারা অশ্বিনি মুন্ডার ঘরবাড়ী দখলে তৎপর হয়ে ওঠে। এক পর্যায় অশ্বিনী মুন্ডা বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা উত্তরণ এর সহযোগিতায় পরিবারের নারী সদস্যরা ‘বলাকা’ ভূমিহীন নারী সমিতি নামে একটি সংগঠন তৈরি করে।

তাঁদের আবেদনের প্রেক্ষিতে উত্তরণ আমার প্রকল্পের মাধ্যমে আর্থিক সহায়তায় মুন্ডাদের পক্ষে আদালতে দেওয়ানী মামলা করা হয়। আইনি প্রক্রিয়ায় প্রভাবশালীদের নিষ্ক্রিয় করার লক্ষ্যে উত্তরণের সহযোগিতায় সুপ্রীম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে আপীল মামলা দায়ের করা হয়। এই মামলায় উচ্চ আদালত রুলনিশি জারি করেছে। সার্বিক অবস্থায় আদিবাসী এই সম্প্রদায় তাদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য বে-দখলকৃত জমির দখল ফিরে পেতে এবং তাদের জমি রক্ষায় সরকারের সহযোগিতা কামনা করছে।

তথ্যসূত্র: জনকন্ঠ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *