৮ দফা দাবিতে নগরে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সমাবেশ

সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন বিচারের জন্য দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল গঠন করে দোষীদের দ্রুততম সময়ে উপযুক্ত শাস্তি প্রদান, ক্ষতিগ্রস্তদের যথোপযুক্ত ক্ষতিপূরণ প্রদান ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থাসহ ৮ দফা দাবিতে মহাসমাবেশ করছে বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চ নামের সদ্য ঘোষিত এক সংগঠনসহ সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অনান্য শক্তিশালী সংগঠনগুলো।

গতকাল শুক্রবার বিকেল ৩টায় নগরীর লালদিঘী মাঠে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে যোগ দিতে চট্টগ্রাম মহানগর ছাড়া ও আশেপাশের ১৫ উপজেলাসহ পার্বত্য অঞ্চলগুলো থেকে এসেছেন অসংখ্য মানুষ।

এ সময় সনাতনীরা স্লোগানে স্লোগানে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা যায়।

সমাবেশে সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রণালয় গঠন ও সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়নের দাবি জানিয়ে বক্তারা ৮ দফা দাবি আদায় না হলে ঢাকায় কঠোর কর্মসূচি দেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়। সমাবেশে বক্তারা বলেন, প্রতিবার সরকার পরিবর্তনের পর সংখ্যালঘুরা হামলা-নির্যাতনের শিকার হয়। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি।

সনাতন জাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ও হাটহাজারী পুন্ডরিক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণদাস ব্রহ্মচারী মহারাজের সভাপতিত্বে এবং গৌরাঙ্গ দাস ব্রহ্মচারীর সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন শংকর মঠ ও মিশনের অধ্যক্ষ শ্রীমৎ তপনান্দ গিরি মহারাজ, পটিয়া পাঁচরিয়া তপোবন আশ্রমের অধ্যক্ষ শ্রীমৎ রবীশ্বরানন্দ পুরী মহারাজ, ইসকন প্রবর্তক শ্রীকৃষ্ণ মন্দিরের অধ্যক্ষ লীলারাজ গৌর দাস ব্রহ্মচারী বাঁশখালী ঋষিধামের মোহন্ত সচিদানন্দ পুরী মহারাজ, শ্রীমৎ মুরারী দাস বাবাজী, তপোবন আশ্রমের অধ্যক্ষ শ্রীমৎ প্রাঞ্জলানন্দ পুরী মহারাজসহ সাংবাদিক, আইনজীবী, শিক্ষক প্রতিনিধি আর সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ।

এ সময় বক্তারা বলেন, ‘আমাদের আট দফা দাবি অত্যন্ত ন্যায্য। আমাদের দাবি ছিল শারদীয় দুর্গোৎসবে ৫ দিনের ছুটি। কিন্তু তা হয়নি। যে বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়তে গিয়ে এদেশের ছাত্র জনতা প্রাণ দিয়েছে, সেখানে সংখ্যালঘুদের প্রতি সরকারের বৈষম্য হবে কেন? আমরা এমন বৈষম্য চাই না।

বক্তারা আরও বলেন, স্বাধীনতাপরবর্তী প্রতিটি সরকার সনাতনীদের সঙ্গে বিমাতাসুলভ আচরণ করেছে। কোনো সরকারই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা-নির্যাতনের ঘটনার বিচার করেনি। তাই যে রাজনৈতিক দল আমাদের দাবি মানবে, আগামীতে আমরা সম্মিলিতভাবে সেই দলের পাশে আছি।

বক্তারা বলেন, ‘স্বাধীনতার ৫৩ বছরে সবার অধিকার বাস্তবায়ন হলেও বরাবরই সনাতনীরা অবহেলিত রয়ে গেছে। সরকার আসে যায়, ক্ষমতার পালাবদল হয় কিন্তু সনাতনীদের ভাগ্য বদলায় না। বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণে অপরাধীরা বারবার সনাতনীদের উপর প্রভাব কাটানোর সুযোগ পাচ্ছে’।

আট দফা দাবি বাস্তবায়ন না হলে আগামীতে আরো কঠোর আন্দোলনের ঘোষণা দিয়ে বক্তারা বলেন, সনাতনীদের  ৮ দফা দাবি মেনে নেওয়া কঠিন কিছু নয়। এই সরকার যদি সনাতনীদের ৮ দফা মেনে নেয় তাহলে সনাতনীরা আজীবন কৃতজ্ঞ থাকবে। আমাদের দাবির বাস্তবায়ন না হলে আগামীতে প্রতিটি জেলায়, মহানগরে, রাজধানীতে কঠোর আন্দোলনের সিদ্ধান্ত নেব। দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত আমরা রাজপথে থাকব।

মহাসমাবেশে পুন্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস বলেন, লালদিঘীর ময়দানে আজ সনাতনীদের গণজোয়ার এসেছে‌। আমাদের যত নির্যাতন করা হবে তত বেশি আমরা এক হবো। এই ঐক্য কোনোভাবে খ-িত করা যাবে না। ৮ দফা দাবি আদায়ের উদ্দেশ্য ইতোমধ্যে ১৯ সদস্যের সমন্বয়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে। যদি এই দেশ থেকে আমাদের উচ্ছেদ করে কেউ শান্তিতে থাকতে চান, তাহলে এটা আফগানিস্তান-সিরিয়া হবে, গণতান্ত্রিক শক্তি থাকবে না, সাম্প্রদায়িকতার অভয়ারণ্য হবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘সংখ্যালঘু পরিচয়ে ৯৩ জন হিন্দুকে পুলিশের চাকরি থেকে অব্যাহিত দেয়া হয়েছে। সংখ্যানুপাতিক হারে হিন্দুদের সংসদে আসন বিন্যাস করতে হবে।’

উল্লেখ্য ১৩ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে ৮ দফা দাবি পেশ করেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতারা।

আট দফা দাবিগুলো হলো- ১. সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিচারের জন্য ‘নিরপেক্ষ তদন্ত কমিশন’ গঠনের মাধ্যমে ‘দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল’ গঠনপূর্বক দোষীদের দ্রুততম সময়ে উপযুক্ত শাস্তি প্রদান, ক্ষতিগ্রস্তদের যথোপযুক্ত ক্ষতিপূরণ প্রদান ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা। ২. অনতিবিলম্বে ‘সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন’ প্রণয়ন করা। ৩. ‘সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রণালয়’ গঠন করা। ৪. হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টকে হিন্দু ফাউন্ডেশনে উন্নীত করার পাশাপাশি বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টকেও ফাউন্ডেশনে উন্নীত করা। ৫. ‘দেবোত্তর সম্পত্তি পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণ আইন’ প্রণয়ন এবং ‘অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ’ আইন যথাযথ বাস্তবায়ন করা। ৬. সরকারি/বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ও সব উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সংখ্যালঘু শিক্ষার্থীদের জন্য উপাসনালয় নির্মাণ এবং প্রতিটি হোস্টেলে প্রার্থনা কক্ষ বরাদ্দ করা। ৭. ‘সংস্কৃত ও পালি শিক্ষাবোর্ড’ আধুনিকায়ন করা। ৮. শারদীয় দুর্গাপূজায় ৫ দিন ছুটি দেওয়া। পাশাপাশি প্রতিটি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রধান প্রধান ধর্মীয় উৎসবে প্রয়োজনীয় ছুটি প্রদান করা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *