লংগদুতে বৌদ্ধ বিহার ঘেষা খেলার মাঠে এপিবিএন ক্যাম্প স্থাপনের জায়গা নির্ধারণ, এলাকাবাসীর আপত্তি

জায়গা পরিদর্শনে যাওয়া কর্মকর্তাগণ। সংগৃহিত ছবি

নিজস্ব প্রতিনিধি।। রাঙামাটির লংগদু উপজেলার বগাচতর ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের চিবেরেগা এলাকায় ধর্মছদক বৌদ্ধ বিহার ঘেষা খেলার মাঠে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) ক্যাম্প স্থাপনে জায়গা নির্ধারণ করা হয়েছে বলে জানা গেছে। এ নিয়ে এলাকাবাসী আপত্তি জানিয়েছেন।

জানা গেছে, গতকাল শনিবার (১০ সেপ্টেম্বর ২০২২) দুপুর ১২ টার দিকে এপিবিএন, উত্তরা, ঢাকা এর অতিরিক্ত ডিআইজি এ কে এম মোশারফ হোসেন মিয়াজি, খাগড়াছড়ি এপিবিএন এর বিশেষায়িত ট্রেনিং সেন্টারের অতিরিক্ত ডিআইজি মীর মোদাচ্ছের হোসেন ও রাঙামাটি জেলার অতিরিক্ত সুপার মো. মফিজুর রহমান এর নেতৃত্বে এপিবিএন ও পুলিশের একটি দল উক্ত  জায়গাটি পরিদর্শন করেন। এসময় লংগদু থানার এস আই মো. মাজহারুল হকও উপস্থিত ছিলেন।


পরিদর্শনকালে এপিবিএন ও পুলিশ কর্মকর্তাগণ উক্ত বৌদ্ধ বিহার এলাকা ও বিহার ঘেষা মাঠটি পরিমাপ করেন।

উক্ত পরিমাপকৃত জায়গায় খেলার মাঠ ছাড়াও আরো তিন গ্রামবাসীর জায়গা ও বসতবাড়ি রয়েছে বলে জানা গেছে।
ওই তিন গ্রামবাসী হলেন- ১. বিজয় শান্তি চাকমা, পিতা-পুনং চান কার্বারি, ২.রঞ্জন কুমার চাকমা, পিতা-ধেঙা চাকমা ও ৩.নিরত রঞ্জন চাকমা, পিতা-ভরত কুমার চাকমা।

এদিকে, উক্ত খেলার মাঠে এপিবিএন ক্যাম্প স্থাপনে জায়গা নির্ধারণের খবরে এলাকাবাসী উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং আপত্তি জানিয়েছেন।
একইভাবে আপত্তি ও নিন্দা জ্ঞাপন করেছেন সুগতলংকার ভান্তে নামে এক বৌদ্ধ ভিক্ষু।


তিনি তার নিজস্ব ফেইসবুক পোস্টে নিন্দা জ্ঞাপন করে বলেন, “ব্যাটালিয়ন ক্যাম্প নির্মাণের জন্য যে জায়গাটি নির্ধারন করা হয়েছে সেটি একেবারেই বৌদ্ধ বিহারটির গা ঘেষানো এবং এলাকাবাসীর একমাত্র খেলার মাঠ যেখানে শিশু কিশোররা বিকাল বেলায় ফুটবল-ক্রিকেট সহ বিভিন খেলাধুলা করে তাদের মনোরঞ্জন করে। ক্যাম্পটি প্রতিষ্ঠিত হলে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানটির উপর যে বিভিন্ন বিধিনিষেধের ছড়াছড়ি হবে তা হলফ করে বলা যায়। যার ফলে এলাকাবাসীর ধর্মীয় পরিবেশের উপর বিরুপ প্রভাব পড়বে। আমি ভিক্ষু সংঘ ও এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে এ ধরনের হঠকারী সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং অচিরেই এ সিদ্ধান্ত বাতিল করে এপিবিএন ক্যাম্প প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার জোর দাবি জানাচ্ছি”।

তিনি আরো বলেন, “শান্তি-শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তার জন্য ক্যাম্প প্রতিষ্ঠিত হোক আমরা তার বিরোধীতা করছিনা এবং করতে চাইও না।  কিন্তু এলাকার সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে বল প্রয়োগ নীতির মাধ্যমে ক্যাম্প প্রতিষ্ঠা করা কোনমতেই মেনে নেয়া যায়না এবং যাবে না। একটা বৌদ্ধ বিহারের গা ঘেষে এবং একটি এলাকার মানুষের একমাত্র খেলার মাঠ দখলে নিয়ে ক্যাম্প স্থাপনের সিদ্ধান্ত কোনমতেই গ্রহণযোগ্য নয়! এছাড়া সেই এলাকায় এমন কোন অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি হয়নি যে সেখানে তড়িঘড়ি করে ক্যাম্প স্থাপণ করতে হবে”।

ফেইসবুক পোস্টে তিনি বলেন, “আমরা কোনমতেই চাই না নতুন করে লংগদু এলাকায় আর কোন ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হোক! এলাকাবাসী ক্যাম্প স্থাপনকে কেন্দ্র করে চরম অনিশ্চয়তা ও নতুনভাবে উদ্ভাস্তু হওয়ার চরম আতংকের মধ্যে রয়েছে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক ও হতাশার। আশা করি প্রশাসন এ ব্যাপারে এলাকার সহজ-সরল মানুষগুলোর কথা বিবেচনায় নিয়ে ক্যাম্প স্থাপনের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে এলাকাবাসীকে স্বস্তিতে রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করবে।

তিনি এলাকাবাসী ও ভিক্ষুসংঘের পক্ষ থেকে
খেলার মাঠ দখল করে এপিবিএন  ক্যাম্প স্থাপন করার সিদ্ধান্ত বাতিল করে অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার দাবি জানিয়েছেন।

আর এ বিষয়ে তিনি পার্বত্য মন্ত্রী, রাঙামাটির এমপি, পুলিশ সুপারসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষেন সহযেগিতা কামনা করেছেন।

উল্লেখ্য, ২০২১ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকার সচিবালয়ে জেএসএস সভাপতি ও আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান সন্তু লারমার সাথে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল-এর এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে সেদিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাবাহিনীর ছেড়ে আসা পরিত্যক্ত ক্যাম্পগুলোতে আধুনিক পুলিশ মোতায়েনে করা হবে বলে জানিয়েছিলেন। এরপর এ বছর ১৩ এপ্রিল আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন হেডকোয়ার্টার্স থেকে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণ কমিটির ৫ম বৈঠকের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের’ কথা জানিয়ে “সেনাবাহিনীর প্রত্যাহারকৃত ২৪০টি ক্যাম্পে পর্যায়ক্রমে পুলিশ মোতায়েন করা হবে” মর্মে এক নির্দেশনা জারি করা হয়। “প্রাথমিকভাবে ৩০টি ক্যাম্পে পুলিশ মোতায়েন করা হবে” বলে ঐ নির্দেশনায় উল্লেখ ছিল।

গত  ২৫ মে ২০২২ রাঙামাটিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর উপস্থিতিতে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে এক আইন-শৃঙ্খলা সভা হয়। সেখানে সন্তু লারমাও উপস্থিত ছিলেন। সেদিনও সন্তু লারমার সাথে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী একান্তে  দীর্ঘ বৈঠক করেন বলে জানা যায় এবং বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সন্তু লারমাকে দাদা সম্বোধন করে তাকে পাশে রেখে পরিত্যক্ত সেনা ক্যাম্পের জায়গায় আর্মড পুলিশ মোতায়েনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের কথা সাংবাদিকদেরকে জানান। পরদিন ২৬ মে  স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের তিন পার্বত্য জেলা হেডকোয়ার্টার্স ও আঞ্চলিক কার্যালয় উদ্বোধন করেন।

পার্বত্য চুক্তি লঙ্ঘন করে সরকারের এ সিদ্ধান্তে ইউপিডিএফ আপত্তি জানিয়ে সংবাদ মাধ্যমে বিবৃতি দিলেও জেএসএস  এ নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কোন প্রতিবাদ জানায়নি। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *