প্রেস বিজ্ঞপ্তি
স্বনির্ভর হত্যাকাণ্ডের ৩ বছর উপলক্ষে খাগড়াছড়িতে স্মরণসভা
রাষ্ট্রীয় মদদেই সন্ত্রাসীরা পরিকল্পিতভাবে স্বনির্ভর হত্যাকা- ঘটিয়েছিল : বিপুল চাকমা
রাষ্ট্রীয় মদদেই খুনী-সস্ত্রাসীরা পরিকল্পিতভাবে খাগড়াছড়ি শহরের স্বনির্ভর বাজারে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা সংঘটিত করেছিল বলে মন্তব্য করেছেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ও ইউনাইটেড পিপলস্ ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)-এর অন্যতম সংগঠক বিপল চাকমা।
আজ বুধবার, ১৮ আগস্ট ২০২১ স্বনির্ভর হত্যাকাণ্ডের ৩ বছরে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের আয়োজিত স্মরণ সভায় তিনি উক্ত মন্তব্য করেন। খাগড়াছড়িতে যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি পালন করেছে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি)। আজ সকাল ১০টায় খাগড়াছড়ি সদর এলাকায় সন্ত্রাসী হামলায় শহীদ ছাত্র নেতা তপন-এলটন, যুব নেতা পলাশ চাকমাসহ জিতায়ন, ধীরাজ, রূপম ও শান কুমার চাকমার স্মরণে নির্মিত অস্থায়ী স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে দিবসটির কর্মসূচি শুরু করা হয়।
পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন ইউনাইটেড পিপলস্ ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)-এর সদর উপজেলার সমন্বয়ক অংগ্য মারমা, পিসিপি’র কেন্দ্রীয় কমিটি সাধারণ সম্পাদক সুনীল ত্রিপুরা, খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সভাপতি সমর চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশন’র খাগড়াছড়ি জেলা আহ্বায়ক এন্টি চাকমা ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সদস্য কৃপায়ন চাকমা। পরে এক স্মরণ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
“ভাড়াটে দিয়ে খুন করা যায়, চেতনাকে ধ্বংস করা যায় না, শহীদ তপন-এলটন-পলাশদের বলীদানে পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের লড়াই হবে আরও জোরদার” এই শ্লোগানে Brig. Gen. মোত্তালেবের লেলিয়ে দেয়া ঘাতক কর্তৃক স্বনির্ভর হত্যাকাণ্ডের ৩ বছর উপলক্ষে আয়োজিত স্মরণ সভায় পিসিপি খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সভাপতি সমর চাকমার সভাপতিত্বে ও অর্থ সম্পাদক শান্ত চাকমার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন পিসিপি’র সাবেক সভাপতি ও ইউপিডিএফ-এর অন্যতম সংগঠক বিপুল চাকমা, পিসিপি’র কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সুনীল ত্রিপুরা, হিল উইমেন্স ফেডারেশন খাগড়াছড়ি জেলা আহ্বায়ক এন্টি চাকমা ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের জেলা দপ্তর সম্পাদক লিটন চাকমা প্রমুখ।
স্মরণ সভায় বিপুল চাকমা বলেন, ছাত্র-যুব নেতা তপন-এলটন-পলাশ চাকমাকে হত্যার ফলে পার্বত্য চট্টগ্রামে জনগণ ভবিষ্যত উজ্জ্বল নেতৃত্বকে হারিয়েছিলাম। ২০১৮ সালের আজকের এই দিনে রাষ্ট্রীয় মদদেই সন্ত্রাসীরা পরিকল্পিতভাবে স্বনির্ভর হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটিয়েছিল।
তিনি বলেন, ঘাতকরা সমগ্র জাতির স্বার্থকে বিকিয়ে দিয়ে নিজেদের স্বার্থের জন্য সেদিন স্বনির্ভর ও পেরাছড়ায় পৃথক দুটি স্থানে ৭ জনকে হত্যা করে। এর আগে তারা ইউপিডিএফ নেতা মিঠুন চাকমাসহ পাহাড়ে জনগণের প্রকৃত আন্দোলনে নিয়োজিত ইউপিডিএফ ও তার সকল সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী, সমর্থকদের হত্যা করতে পারলেও তাদের আদর্শ, চেতনা, স্বপ্ন ও লক্ষ্য থেকে বিচ্যুতি করতে পারেনি। শত শহীদদের রক্তের বিনিময়েও ইউপিডিএফ পাহাড়ি জনগণের প্রকৃত মুক্তির অধিকার পূর্ণস্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে লড়াই সংগ্রাম করে যাচ্ছে।
বিপুল চাকমা আরো বলেন, আন্দোলনকে স্তিমিত করতে ইউপিডিএফ’র বিরুদ্ধে ভূঁইফোঁড় বিভিন্ন সংগঠন দাঁড় করিয়ে তাদেরকে ইউপিডিএফ-এর পেছনে লেলিয়ে দিয়ে হত্যা-গুম-অপহরণের মত ঘটনা ঘটাচ্ছে। এতে ইউপিডিএফ’র কার্যক্রম কিছুটা বাধাগ্রস্ত হলেও লক্ষ্য পথে অবিচল থেকে নতুন উদ্যোমে আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। আগামীতেও ইউপিডিএফ’র নেতৃত্বে পার্বত্য চট্টগ্রামে জনগণের মুক্তির লড়াই সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে। সুতরাং যারা নিজের স্বার্থের জন্য জাতির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছেন তাদের প্রতি আমাদের আহ্বান- ‘আপনারা বিপথে পরিচালিত হবেন না, সকল অপকর্ম থেকে বিরত থেকে আসুন সমাজে ও জাতীয় অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তুলে আন্দোলন সংগ্রাম জোরদার করি’।
ছাত্র নেতা সুনীল ত্রিপুরা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে একদিকে জনগণের প্রকৃত আন্দোলনকে দমানোর জন্য ইউপিডিএফ ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের বিনা ওয়ারেন্টে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে গ্রেফতার করছে। অপরদিকে স্বনির্ভর হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত সন্ত্রাসীরা প্রশাসনের ছত্রছায়ায় খাগড়াছড়ি শহরের মধুপুর, তেঁতুলতলা, মহাজন পাড়ায় প্রকাশ্যে অস্ত্রসহ ঘোরাফেরা করলেও তাদেরকে গ্রেফতার করা হচ্ছে না। অথচ স্বনির্ভর ঘটনায় সিসি টিভি ফুটেজ প্রশাসনের কাছে সংরক্ষিত রয়েছে।
তিনি শাসকগোষ্ঠীর সকল ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে রুঁখে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ, প্রতিরোধ সংগঠিত করতে ছাত্র সমাজের প্রতি আহ্বান জানান।
নারী নেত্রী এন্টি চাকমা বলেন, পুলিশ-বিজিবিসহ বিভিন্ন বাহিনীর নিরাপত্তা বেষ্টনির মধ্যে দিবালোকে খাগড়াছড়ি শহরে স্বনির্ভর হত্যাকাণ্ডে ঘটিয়েছিল নব্য মুখোশ ও জেএসএস (এমএন লারমা) নামধারী সংস্কারপন্থীরা। এখানে পরিষ্কার যে এটি রাষ্ট্রীয় সেনা-প্রশাসন ও সন্ত্রাসীরা যৌথভাবে পরিকল্পিতভাবে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছিল। এদেরকে মদদ দিয়েছিল তখনকার খাগড়াছড়ি রিজিয়নের দায়িত্বরত বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মোত্তালেব।
যুব নেতা লিটন চাকমা বলেন, স্বনির্ভর হত্যাকাণ্ডে মধ্যে দিয়ে স্পষ্ট হয়েছে যে সরকার-রাষ্ট্রীয় বাহিনী পার্বত্য চট্টগ্রামে সংঘাতকে জিইয়ে রাখছে। পাহাড়ি জনগণের ওপর নিপীড়ন জারি রাখতে ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে এবং জাতি ধ্বংসর নীলনক্সা করছে।
তিনি শাসকগোষ্ঠীর সকল নীলনক্সা ভেস্তে দিয়ে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।
স্মরণ সভা থেকে বক্তারা স্বনির্ভর হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় শ্বেতপত্র প্রকাশ, প্রশাসনের কাছে থাকা সিসি টিভি’র ভিডিও ফুটেজে চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করে বিচার এবং পাহাড়ে রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের ওপর দমন-পীড়ন বন্ধের দাবি জানান।
এছাড়াও খাগড়াছড়ি জেলার দীঘিনালা, পানছড়ি, মহালছড়ি, গুইমারা-মাটিরাঙ্গা, রামগড়, মানিকছড়ি, লক্ষ্মীছড়ি ও বাঘাইছড়িতে স্বনির্ভর হত্যাকাণ্ডের ৩ বছর পালন করা হয়েছে।
বার্তা প্রেরক,
টনক চাকমা
দপ্তর সম্পাদক
পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি)
খাগড়াছড়ি জেলা শাখা।