শঙ্খ নদে বিষ, জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের মুখে

কয়েকবছর আগেও শঙ্খ নদে বিভিন্ন প্রজাতির প্রচুর মাছ পাওয়া যেত। হাজার হাজার জেলেপরিবার শঙ্খ নদে মাছ আহরণ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। কিন্তু কয়েক বছর ধরে উপর্যুপরি বিষ প্রয়োগ করে মাছ ধরার কারণে প্রায় মাছ শূন্য হয়ে পড়েছে শঙ্খ নদ।
এক জেলে পরিস্থিতি জানান দিতে গিয়ে বলেন, মাত্র কয়েক বছর আগেও নদীতে জাল ফেললে কয়েক কেজি মাছ পাওয়া যেতো। এখন বিষ প্রয়োগের কারণে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ নিধন হচ্ছে। ফলে সারাদিন জাল ফেলেও অনেক সময় আধা কেজি মাছ পাওয়া যায় না। তিনি বলেন, বর্তমানে অনেক জেলেপরিবার অন্য পেশায় চলে গেছে বাধ্য হয়ে।
জানা গেছে, ১৫ দিনের ব্যবধানে গত শুক্রবার রাতে একদল দুর্বৃত্ত শঙ্খনদের দোহাজারী ও কালিয়াইশ অংশে বিষ প্রয়োগ করে। বিষের প্রভাবে দেখা দেয় মাছের মড়ক। শনিবার ভোর থেকে নদের পানিতে চিংড়ি, চিরিং ও বাইলাসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ভেসে যেতে দেখে ভোর থেকেই স্থানীয় কৃষক ও সাধারণ মানুষ মাছ ধরতে নদে নেমে পড়ে।
নদ-নদীতে বিষ প্রয়োগ করে মাছ নিধনে সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা থাকলেও এক শ্রেণির দুর্বৃত্ত রাতের অন্ধকারে নদীতে বিষ প্রয়োগ করে। বিষের প্রভাবে চিংড়িসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ মরে ভেসে উঠলে দুর্বৃত্তরা মরা মাছ ধরে ভোরের আলো ফুটতেই পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে ভোর হলে মরা মাছ ভেসে যেতে দেখলে তা ধরতে নদীতে নেমে পড়ে শতশত মানুষ। এই শুকনো মৌসুমে শঙ্খ নদে বার বার বিষ প্রয়োগ করে মাছ নিধনের ঘটনা ঘটলেও বরাবরের মতোই ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে বিষ প্রয়োগকারীরা।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, দোহাজারী ও কালিয়াইশ অংশে ভাড়ায় বসবাসকারী কয়েকজন রোহিঙ্গা নদীতে বিষ প্রয়োগ করছে। তারা রাতেই মাছ ধরে ভোরের আগে সটকে পড়ে। এ ব্যাপারে তদন্ত করলে বিষ প্রয়োগকারীরা সহজেই শনাক্ত হবে বলে মনে করেন তারা। ধোপাছড়ি থেকে দোহাজারী পর্যন্ত প্রায় ১৫ কিলোমিটার জুড়ে বিষ প্রয়োগ করার ফলে বহু প্রজাতির মাছের প্রজনন ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু মৎস্য অধিদপ্তর থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা কিংবা নদীতে বিষ প্রয়োগে নিরুৎসাহিত করতে কোন কার্যক্রম গ্রহণ করতে দেখা যায়নি। ফলে মারাত্মক ঝুঁকিতে শঙ্খ নদের বাস্তুতন্ত্র।
শুধু শঙ্খে নয়, বিভিন্ন সময়ে নদী, পুকুর ও দীঘিতে বিষ দিয়ে মাছ শিকার করা হয়। এতে একদিকে পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে মাছের উৎপাদন কমে যাচ্ছে অন্যদিকে এই মাছ খেয়ে জনস্বাস্থ্য হুমকির মুখে পড়ছে। এই দুষ্কর্ম বন্ধে সরকারকে কঠোর হতে হবে, জড়িতদের কঠিন শাস্তির দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জনগণকেও সচেতন করে তুলতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *