লামা সরই ভূমি রক্ষা সংগ্রাম কমিটির বিক্ষোভ সমাবেশ, ৪০০ একর জুম ভূমি রক্ষার দাবি

নিজস্ব প্রতিনিধি।।লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ কর্তৃক পূনরায় জঙ্গল কেটে ম্রো-ত্রিপুরাদের ৪০০ একর জুম ভূমি জবরদখলের চেষ্টার প্রতিবাদে এবং দায়েরকৃত ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, ঝিরিতে বিষ প্রয়োগ ও ফলদ বাগান কর্তনের সাথে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে লামা সরই ভূমি রক্ষা সংগ্রাম কমিটি।

আজ শনিবার (২৯ অক্টোবর ২০২২) সকাল ১১টায় লামা লাংকম ম্রো (কারবারি) পাড়ায় অবস্থিত সড়কের সামনে এই বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করা হয়। সমাবেশে রেংয়েন ম্রো পাড়া, লাংকম ম্রো পাড়া ও জয়চন্দ্র ত্রিপুরা পাড়ার বাসিন্দারা অংশগ্রহণ করেন।

“আমাদের ভূমি আমাদের জীবন” শ্লোগানে আয়োজিত সমাবেশে লামা সরই ভূমি রক্ষা সংগ্রাম কমিটির আহবায়ক রংধজন ত্রিপুরা সভাপতিত্বে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, ভূমি রক্ষা সংগ্রাম কমিটির যুগ্ম আহবায়ক রেংয়েন ম্রো(কারবারি). যুগ্ম আহবায়ক সংলেহ ম্রো, সদস্য সচিব লাংকম ম্রো (কারবারি), রেংইয়ুঙ ম্রো ও দুইঠ্যাঙ ম্রো প্রমুখ। সমাবেশে সঞ্চালনা করেন ভূমি রক্ষা সংগ্রাম কমিটির সদস্য মথি ত্রিপুরা।

ভূমি রক্ষা সংগ্রাম কমিটির আহবায়ক রংধজন ত্রিপুরা বলেন, আমরা ৬ মাস ধরে ম্রো এবং ত্রিপুরাদের ৪০০ একর জুম ভূমি রক্ষার্থে নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি। রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড-এর লোকেরা আমাদের ৩ পাড়াবাসীদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলা দিয়ে ভয় ভীতি দেখিয়ে যাচ্ছে। আমরা যখন নিজ ভূমিতে ফলদ, বনজ চারা, আম, কলা চারা ইত্যাদি যখন রোপন করতে যাই তখন তারা আমাদের সকলকে সন্ত্রাসী বলে তকমা দেওয়া হয়। অথচ যারা অবৈধ, ভূইফোঁড় কথিত লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ আমাদের উৎপাদিত বিভিন্ন ফলদ, বনজ, কলা, আম চারা এবং বাঁশ বাগান কেটে ধ্বংস করে দিলেও তাদেরকে নিয়ম রক্ষাকারী বা বৈধতা দেয়া হয়। কি আজব!  

তিনি বলেন, আমরাতো এদেশের নাগরিক এবং স্থায়ী বাসিন্দা। আমাদের সকলের জাতীয় পরিচয়পত্র আছে। তাহলে আমরা কোন ধরনের নিয়মতান্ত্রিক দেশে বসবাস করছি?

তিনি অভিযোগ করে বলেন,  লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ পূনরায় জঙ্গল পরিষ্কার করে আমাদের সৃজিত আম চারা, কলা চারা, বাঁশ বাগান কেটে দিয়ে জুম ভূমি জবরদল করে নতুন করে রাবার চারা সৃজনের পাঁয়তারা করছে। প্রশাসনকে বারবার জানানোর পরেও তারা নীরব ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। তিনি লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ’র এই ধরনের ন্যাক্কারজনক গণবিরোধী কাজে আমি তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।

তিনি ম্রো ও ত্রিপরাদের ৪০০ একর জুম ভূমি রক্ষার দাবি জানিয়ে বলেন, আমাদের এই ভূমি রক্ষার সংগ্রাম চলমান থাকবে। এই সংগ্রাম সফল করতে তিনি সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।

ভূমি রক্ষা সংগ্রাম কমিটির যুগ্ম আহবায়ক রেংয়েন ম্রো (কারবারি) বলেন, লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ ৬০ জনের শ্রমিক নিয়ে প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে পূনরায় গত ২৩-২৬ অক্টোবর ৪দিন আমাদের জুমভূমিতে জঙ্গল পরিষ্কার করেছে। তারা আমাদের সৃজিত আম চারা, কলা চারা, আমড়া চারা কেটে দিয়েছে। উক্ত জঙ্গল কাটার কাজে সরাসরি নেতৃত্ব দিয়েছেন লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ’র সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক আবদুল মালেক ও দেলোয়ার হোসেন। এ বিষয়ে প্রশাসনকে অবহিত করার পরও প্রশাসন নিরব ভূমিকা পালন করেছে।

ভূমি রক্ষা কমিটির সদস্য সচিব লাংকম ম্রো (কারবারি) বলেন, লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ শ্রমিক লেলিয়ে দিয়ে কলাইয়া ঝিরিতে বিষ প্রয়োগ করে গ্রামবাসীদের হত্যার চেষ্টা করেছে। আইন অমান্য করে ত্রিপুরা ও ম্রোদের জুম ভূমি জবরদখলের জন্য পূনরায় জঙ্গল পরিস্কার করে যাচ্ছে। জেলা প্রশাসন কোন ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে না। রাবার কোম্পানির এই ধরনের কর্মকাণ্ডে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।

উল্লেখ্য, চলতি বছর গত ৯ এপ্রিল লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ বহিরাগত রোহিঙ্গা শ্রমিক নিয়ে এসে ম্রো ও ত্রিপুরাদের ভোগদখলীয় ৪০০ জুম ভূমিতে জঙ্গল ও বাগান-বাগিচা কেটে দেয়। এরপর ২৬ এপ্রিল তাতে আগুন লাগিয়ে দিয়ে ম্রো-ত্রিপরাদের জুমভূমি, বাগান-বাগিচা, জুমখেত, বাঁশবাগান পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এরপর থেকে ধারাবাহিকভাবে হামলা, মামলা, ফসল লুট, কলাবাগান কর্তন, পানির উৎসে বিষ প্রয়োগ, হুমকি-ধমকিসহ গ্রামবাসীদের বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র ও হয়রানিমূলক কর্মকাণ্ড অব্যাহত রেখেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *