প্রতিষ্ঠার ২ দশকপূর্তিতে “যুব শক্তিই জাতীয় শক্তি, শাসকগোষ্ঠি ক্রীড়নক হয়ে জাতি ধ্বংসের খেলায় লিপ্ত দুর্বৃত্তদের বরদাস্ত করবো না, পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের পতাকা উর্ধ্বে তুলে ধরুন” এই শ্লোগানে খাগড়াছড়িতে সমাবেশ করেছে গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম (ডিওয়াইএফ) খাগড়াছড়ি জেলা শাখা।
আজ ৫ এপ্রিল ২০২২, মঙ্গলবার খাগড়াছড়ি সদর এলাকায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সহ সভাপতি লিটন চাকমার সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক শুভ চাকমার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)-এর খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা সংগঠক বিপুল চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার আহ্বায়ক এন্টি চাকমা ও বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক শান্ত চাকমা।
সমাবেশ শুরুতে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে শহিদ, পঙ্গুত্ব বরণকারী ও কারা অন্তরীণ সহযোদ্ধাদের সম্মান জানিয়ে স্মরণ করা হয়।
সমাবেশে ইউপিডিএফ সংগঠক বিপুল চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে জুম্ম জনগণের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় ষড়যন্ত্র অব্যাহত রয়েছে। বৃটিশ প্রণীত ‘ভাগ করে শাসন কর’ নীতি প্রয়োগ করে সরকার জুম্মদের মধ্যে বিভাজন তৈরি করে ফায়দা লুটার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। একদিকে সেনাশাসন জারি রেখে দমন-পীড়ন চালানো হচ্ছে, অপরদিকে ইউপিডিএফের পূর্ণস্বায়ত্তশাসন আন্দোলনকে বাধাগ্রস্ত করতে এইসব নানা ঠ্যাঙারে বাহিনী সৃষ্টি করা হয়েছে। তাই সকলকে আরো সচেতন হতে হবে এবং ঐক্যবদ্ধভাবে পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের পতাকাতলে এসে জাতীয় অস্তিত্ব রক্ষার্থে আন্দোলন জোরদার করতে হবে। এক্ষেত্রে যুব সমাজকেই অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।
হিল উইমেন্স ফেডারেশনের নেত্রী এন্টি চাকমা বলেন,পার্বত্য চট্টগ্রামসহ বাংলাদেশের কোথাও সংখ্যালঘু জাতিসত্তার নারীদের নিরাপত্তা নেই। এমনকি সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালি নারীরা পর্যন্ত নিরাপদ নয়। এদেশে কল্পনা চাকমা অপহরণ, সোহাগী জাহান তনুর হত্যার মতো ঘটনায় কোন বিচার হয় না। দেশে এখন এমন অবস্থা চলছে নারীরা টিপ দিয়ে বেরোলেও প্রশাসনের লোকজন কর্তৃক হেনস্থার শিকার হতে হচ্ছে। তিনি বলেন, নারীদেরকে নিজেদের নিরাপত্তার জন্য সচেতন হয়ে সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান।
পিসিপি নেতা শান্ত চাকমা বলেন, বাংলাদেশের উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি শিক্ষার্থীদের জন্য যে ৫% কোটা ব্যবস্থা চালু ছিলো তাও রাষ্ট্র তুলে নিয়েছে। এ থেকেই বোঝা যায় রাষ্ট্র আমাদের শিক্ষার অধিকার কেড়ে নিচ্ছে। তিনি বলেন সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামে পর্যাপ্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষক নিয়োগ না দেয়াায় এখানে শিক্ষা ব্যবস্থার তেমন উন্নতি হচ্ছে না। তাছাড়া দুর্নীতির মাধ্যমে জেলা পরিষদ কর্তৃক অযোগ্য শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে।
তিনি পাহাড়ি শিক্ষার্থীদের জন্য সংরক্ষিত কোটা ব্যবস্থা পুনরায় চালুসহ পিসিপি’র শিক্ষা সংক্রান্ত সকল দাবি মেনে নিয়ে যথাযথ বাস্তবায়নের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
সভাপতির বক্তব্যে যুব নেতা লিটন চাকমা বলেন, গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম পার্বত্য চট্টগ্রামে যুব সমাজের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন। এ সংগঠন প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার রয়েছে। ভূমি বেদখলের বিরুদ্ধে ব্যাপক আন্দোলন গড়ে তুলেছে। তাই এ সংগঠনের নেতা-কর্মীরা শাসকগোষ্ঠির চক্ষুশূল। কিন্তু তাই বলে এ সংগঠনের লড়াই থেমে নেই।
তিনি আরও বলেন, শাসকগোষ্ঠি যুব শক্তিকে সবসময় ভয় পায়। তাই যুবকদেরকে মদ, গাঁজা, হেরোইন, ইয়াবাসহ ইন্টারনেট গেমস্ দিয়ে নেশায় ডুবিয়ে রাখতে মরিয়া হয়ে প্রচেষ্টা চালিয়ে থাকে। শাসকগোষ্ঠির এই চক্রান্ত থেকে যুবসমাজকে সজাগ থাকতে হবে। শাসকের অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে যুবসমাজকে রুখে দাঁড়াতে হবে।
তিনি শাসকগোষ্ঠীর ক্রীড়নক না হয়ে জুম্মজাতির অধিকার ছিনিয়ে আনতে ও জাতীয় অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের পতাকাতলে এসে সংগঠনকে শক্তিশালী করার আহ্বান জানান।