নতুন কুমার চাকমা, সচিব চাকমা, উজ্জ্বল স্মৃতি চাকমা, শান্তিদেব চাকমা, প্রদীপন খীসা, রতন বসু, অংগ্য মারমা, জিকো ত্রিপুরা, কণিকা দেওয়ান, সুনয়ন চাকমা, সুনীল ত্রিপুরা, নীতি শোভা চাকমা
নিজস্ব প্রতিনিধি।। ভারতের ব্রিগেডিয়ার সুশীল কুমার শর্মা ১৯৮৬ সালের মিজোরাম চুক্তি সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে বলেছেন: ‘… it is not an accord that brings peace but the process it is part of.’ (Lessons from Mizoram Insurgency and Peace Accord 1986, by Brigadier Sushil Kumar Sharma: Vivekananda International Foundation, occasional paper – June 2016) অর্থাৎ কেবল চুক্তি শান্তি আনতে পারে না, বরং চুক্তিটি যে প্রক্রিয়ার অংশ সেটাই শান্তি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। উত্তর-পূর্ব ভারতে মিজোরাম চুক্তির মতো আরও অনেক চুক্তি হয়েছে, কিন্তু একমাত্র এই চুক্তিই শান্তি প্রতিষ্ঠায় সফল হয়েছে। সুশীল কুমার শর্মার মতে, এর অন্যতম কারণ গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার সাথে চুক্তি স্বাক্ষরকারী মিজোদের সংগঠন এমএনএফের খাপ খাইয়ে নিতে সক্ষম হওয়া। এমএনএফ জনগণের মতামতের প্রতি সম্মান দেখিয়েছে এবং নির্বাচনে প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পরও জঙ্গলে ফিরে যায়নি। অস্ত্র জমা দেওয়ার পর তারা আর কোন ধরনের সহিংসতায় জড়ায়নি। অপরদিকে ভারত সরকারও চুক্তিতে তার দায়দায়িত্ব পালন করেছে, মিজোরামকে তার নিজস্ব হাইকোর্টসহ রাজ্যের মর্যাদা দিয়েছে এবং কাউন্টার ইন্সার্জেন্সির অপারেশন বন্ধ করেছে। ব্রিগেডিয়ার শর্মা বলেন, ‘sincerity and commitment of all parties is a must for the success of an accord.’ অর্থাৎ একটি চুক্তির সফলতার জন্য সকল পক্ষের আন্তরিকতা ও অঙ্গীকার অবশ্যই প্রয়োজন।
আমাদের পার্বত্য চট্টগ্রামে চুক্তির প্রক্রিয়ায় যা ঘটেছে তা হলো মিজোরামের ঠিক বিপরীত। সে কারণে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার পর প্রায় ২৫ বছর পার হয়ে গেলেও, পাহাড়ে শান্তি এখনও সুদূরপরাহত। অশান্তির কালোমেঘে আচ্ছন্ন হয়ে আছে পার্বত্য চট্টগ্রামের আকাশ। বার বার রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে বলী হচ্ছে তাজা প্রাণ। চুক্তি স্বাক্ষরকারী পক্ষ সরকার ও জেএসএসের মধ্যে গণতান্ত্রিক চেতনাবোধের অভাবই এই সংঘাত, রক্তক্ষয় ও অশান্তির মূল কারণ।
মিজোরামের দূরদর্শী নেতাদের মতো জেএসএস নেতা সন্তু লারমাও যদি রাজনৈতিক প্রজ্ঞা দেখাতে পারতেন এবং গণতান্ত্রিক চেতনা ও মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতেন তাহলে পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিস্থিতি আজ অন্য রকম হতো। কিন্তু অন্যের মতামত প্রকাশের অধিকারকে মেনে না নিয়ে তিনি ‘চুক্তিবিরোধীদের’ দমনের জন্য ‘কঠোর’ পদক্ষেপ গ্রহণ করলেন। বললেন ‘এক বনে দুই বাঘ থাকতে পারবে না’। তারপর ২০০২ সালের নভেম্বর খাগড়াছড়িতে জেএসএসের জাতীয় কংগ্রেসে ইউপিডিএফকে “কঠোরভাবে মোকাবিলা ও নির্মূল করার” সিদ্ধান্ত নিলেন। (কংগ্রেসে গৃহীত ৩৩ দফা প্রস্তাবের ১৭ নং দফা)। তার আগে ২০০০ সালের ১৩ নভেম্বর যুগান্তরের সাথে সাক্ষাতকারের মাধ্যমে তিনি ‘চুক্তিবিরোধীদের’ প্রকারান্তরে হত্যা ও জখমের নির্দেশ দেন। সাক্ষাতকার-গ্রহণকারী সাংবাদিক সাগর সারওয়ার (প্রয়াত) যখন তাকে প্রশ্ন করেন রাজনৈতিকভাবে ইউপিডিএফ-কে মোকাবিলা করবেন কিনা, তখন তিনি বলেন:
“পলিটিক্যালি নয়। এদের গলা টিপে হত্যা করতে হবে। যাতে কিছু না করতে পারে। হাত ভেঙে দিতে হবে, যাতে লিখতে না পারে। ঠ্যাং ভেঙে দিতে হবে, যাতে হাঁটতে না পারে। চোখ অন্ধ করে দিতে হবে, যাতে দেখতে না পারে। যারা চুক্তির পক্ষে জনগণের অধিকারের পক্ষে তারাই এ কাজ করবে।”
তার এই কথাবার্তা ও প্রস্তাবনা পাশ কেবল কথার কথা ও কাগজের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না। তিনি তার নির্দেশ সত্যি সত্যি বাস্তবায়ন করলেন। চুক্তি-উত্তর সময়ে তার হত্যার রাজনীতির প্রথম বলী হন পাহাড়ি গণ পরিষদের সাবেক নেতা প্রদীপ লাল চাকমা ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের প্রাক্তন নেতা ও পানছড়ি ইউপি চেয়ারম্যান কুসুম প্রিয় চাকমা। তাদেরকে ১৯৯৮ সালের ৪ঠা এপ্রিল পানছড়ির নালকাটায় প্রকাশ্য দিবালোকে রাস্তায় কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এরপর ২১ জানুয়ারী ১৯৯৯ বেতছড়িতে ইউপিডিএফ সমর্থক নিভারঞ্জন চাকমাকে, ৩ ফেব্রুয়ারী ১৯৯৯ আলুটিলায় হরেন্দ্র দেওয়ান ও হুরুক্যা চাকমাকে এবং ৮ ফেব্রুয়ারী ১৯৯৯ দীঘিনালায় আনন্দময় চাকমা ও মৃণাল কান্তি চাকমাকে খুন করা হয়। কিন্তু সেখানেই শেষ নয়, এই হত্যার তালিকা ক্রমে দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হতে থাকে। ইউপিডিএফের মানবাধিকার পরিবীক্ষণ সেলের হিসাব মতে গত ২৪ বছরে তাদের ২৬২ নেতাকর্মী ও সমর্থক জেএসএসের (সন্তু) হাতে প্রাণ হারিয়েছেন।
জেএসএসের এই হত্যা উৎসবে সরকারের ভূমিকা কি ছিল? সরকার কেবল নীরব দর্শক কিংবা পার্টনার ইন ক্রাইম ছিল না, পুলিশ ও সেনাবাহিনী নিজেরাও ‘চুক্তিবিরোধী’ ইউপিডিএফের বিরুদ্ধে সমানতালে হত্যা, গ্রেফতার ও রাজনৈতিক দমনপীড়ন চালাতে থাকে। ২২ এপ্রিল ১৯৯৯ পাহাড়ি গণ পরিষদ ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সমাবেশে যোগ দিতে এলে পুলিশ গুলি করে প্রতুল চাকমা ও সুরমণি চাকমাকে হত্যা করে। ২৯ জুলাই ১৯৯৯ করল্যাছড়িতে সেনাবাহিনীর গুলিতে নিহত হন ইউপিডিএফ সদস্য নয়নমনি চাকমা। ১৯৯৯ সালে চট্টগ্রাম শহরে ইউপিডিএফের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠান জেএসএস ও পুলিশ ভণ্ডুল করে দেয়। সরকার আমাদের একের পর এক নেতাকর্মী ও সমর্থককে বিনা অপরাধে গ্রেফতার করে বিনা বিচারে জেলে আটকিয়ে রাখে। জেএসএসকে পার্বত্য চুক্তির মাধ্যমে বাগিয়ে আনার পর ভবিষ্যতে যাতে আর কোন ধরনের আন্দোলন গড়ে উঠতে না পারে তা নিশ্চিত করতে সরকার জেএসএসের সাথে ঐক্যবদ্ধভাবে ইউপিডিএফকে অঙ্কুরেই বিনষ্ট করতে সচেষ্ট হয়। এভাবে জেএসএস ও সরকারী বাহিনী খুন ও সন্ত্রাসের মাধ্যমে পাহাড়ে চরম অশান্তি সৃষ্টি করে। পার্বত্য চট্টগ্রাম কমিশন ২০০০ সালে প্রকাশিত তার রিপোর্ট লাইফ ইজ নট আওয়ার্স এর ৪র্থ আপডেটে চুক্তি পরবর্তী কয়েক বছরে ইউপিডিএফ সদস্যদের উপর পরিচালিত এই নিপীড়ন নির্যাতনের তথ্য লিপিবদ্ধ করেছে।
এই নিদারুন দুঃসময়ে ইউপিডিএফ প্রধানত জনগণের উপর নির্ভর করে সংগ্রাম চালায়। ইউপিডিএফ তখন সদ্যজাত শিশুর মতো, আর তাকে যারা শেষ করতে চেয়েছে তারা হলো দানবের মতো শক্তিশালী। এ অবস্থায় একজন মমতাময়ী মা যেভাবে তার সন্তানকে রক্ষা করে পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণও ইউপিডিএফকে সেভাবে আগলিয়ে রেখে রক্ষা করেছে। তা না হলে পার্টির পক্ষে টিকে থাকা ও নতুন নতুন শক্তি অর্জন করা কখনই সম্ভব হতো না।
জেএসএস নেতা সন্তু লারমা কেবল ইউপিডিএফের উপর চড়াও হননি। বাইরে যে অশান্তির আগুন তিনি জ্বেলেছেন তা অবশেষে তার নিজের ঘরেও প্রবেশ করে এবং তার পার্টিকেও জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছাড়খার করে দেয়। জেএসএসে সন্তু বাবু হলেন একনায়ক। তিনিই সর্বেসর্বা, তার কথায় সবকিছু চলে। তিনি কেবল ‘চুক্তিবিরোধীদের’ ভিন্নমত দমন করেন তাই নয়, তিনি নিজ পার্টির অভ্যন্তরেও ভিন্নমত সহ্য করেন না। ফলে পার্টির অভ্যন্তরে ভিন্নমত দমন করতে গিয়ে ২০০৫-৬ সালের দিকে জেএসএস দ্বিখণ্ডিত হয়ে যায়। উল্লেখ্য, তার একনায়কত্বসুলভ ফ্যাসিস্ট আচরণের জন্য এর আগে ১৯৮৩ সালে জেএসএস লাম্বা-বাদি গ্রুপে বিভক্ত হয়েছিল। সে সময় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে উভয় গ্রুপের অসংখ্য সংগ্রামী দেশপ্রেমিক যোদ্ধা অকালে প্রাণ হারান। আর এতে আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার আন্দোলনে ঘটে চরম সর্বনাশ।
সম্প্রতি তিনি আবার নতুন করে ভ্রাতৃঘাতী সংঘাতের আগুন জ্বালিয়েছেন। অন্যকে অনিষ্ট ও ধ্বংস করতে তিনি এই আগুন জ্বালালেও তা আসলে তাকেই পুড়িয়ে শেষ করবে। কারণ তিনি অতীত থেকে কোন শিক্ষা নেননি এবং নিজেকে সংশোধন করেননি। যে ইউপিডিএফকে তিনি ধ্বংস করতে চাইছেন সে তো কোন অন্যায় করেনি, তারও কোন ক্ষতি করেনি। দুই পার্টির মধ্যে যে সমঝোতা হয়েছে, তাও তিনিই লঙ্ঘন করেছেন। ইউপিডিএফের উপর হামলা করবেন না বলে বার বার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তাও ভঙ্গ করেছেন। ইউপিডিএফের বিরুদ্ধে তার এই যে চরম অন্যায়, তা জনগণ কখনও মেনে নেবে না এবং সহ্য করবে না।
জেএসএস নেতা সন্তু লারমার কাছে আর আমাদের কোন প্রত্যাশা নেই। তিনি সংশোধনের অতীত হয়েছেন। তার কাছে মিজো নেতাদের মতো রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও দূরদর্শীতা আশা করা বৃথা। তবে জেএসএসের অন্য নেতা ও কর্মীদের কাছে আমাদের আশাও আছে, বক্তব্যও আছে। প্রথমত, আপনারা যেমন জাতি ও জনগণের মঙ্গল চান, আমরাও চাই। তাহলে আপনারা জাতি ও জনগণের মঙ্গল চাইলে যদি দোষ না হয়, ইউপিডিএফ চাইলে ও তার জন্য কাজ করলে দোষ বা অপরাধ হবে কেন? দ্বিতীয়ত, আমরা একই জাতির সন্তান, এমনকি পরস্পরের আত্মীয়ও। চুক্তির আগে কি আমরা এক সাথে লড়াই করিনি? গগণ-বিদারী শ্লোগানে রাজপথ কাঁপিয়ে দিইনি? আমাদের মধ্যে যতই ভুল বোঝাবুঝি থাকুক, এ সত্য কখনই মিথ্যা হয়ে যেতে পারে না। আমরা একই সংগ্রামের অংশীদার, এ কথা ভুলে গেলে চলবে না। তৃতীয়ত, আমাদের ও আপনাদের মতের অমিল থাকতে পারে, কিন্তু সেটা অবৈরী এবং স্বাভাবিকও। আপনাদের পার্টির মধ্যেও কি কোন কোন বিষয়ে সামান্যতম হলেও মত পার্থক্য নেই? এই মত পার্থক্যের কারণে আপনি কীভাবে আমাদের জীবন কেড়ে নিতে চাইতে পারেন? আর আমরা কেন শুধু নিজেদের মতপার্থক্যগুলো দেখবো? আমাদের মধ্যে যে মিল, আমাদের যে অতীতের ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামের গৌরবময় অধ্যায় রয়েছে, তা কেন দেখব না? চতুর্থত, আপনার যেমন সংগঠন করার অধিকার আছে, মতামত ধারণের অধিকার আছে, আমাদেরও তা আছে। সে অধিকার কেউ কেড়ে নিতে চাইলে আপনি প্রতিবাদ করেন। এখন আপনি যদি একই অধিকার আমাদের কাছ থেকে কেড়ে নিতে চান, তখন আমরা তার প্রতিবাদ করলে দোষ হবে কেন? পঞ্চমত, ইউপিডিএফ আপনাদেরকে কখনই শত্রু মনে করেনি, এখনও করে না। এটা খুবই দুঃখজনক যে, যেখানে আপনারা এবং আমরা একসাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করার কথা, আজ সেখানে নিজেদের মধ্যে বিভেদ ও শত্রুতা। এটা আমাদের কাছে একেবারেই অসহ্য। বাংলা সিনেমায় প্রায়ই এমন কাহিনী থাকে: কোন স্বার্থান্বেষী মহলের ষড়যন্ত্রে আপন দুই ভাইয়ের মধ্যে প্রথমে ভুল বোঝাবুঝি, পরে মনোমালিন্য ও সংঘাত হয়। তখন একে অপরের ক্ষতি করতে গিয়ে তারা উভয়ে সর্বস্বান্ত হওয়ার উপক্রম হয়, অপরদিকে তাদের বন্ধু-বেশী শত্রুরা হয় লাভবান। পরে নানা ঘটন-অঘটনের মধ্য দিয়ে তারা নিজেদের ভুল বুঝতে পারে এবং আসল ষড়যন্ত্রকারীদের চিনতে পারে। ফলে তারা আবার এক হয়ে যায় এবং সংসারে শান্তি ফিরে আসে। আমাদের মধ্যেও কি কখনও এই ভুল বুঝাবুঝির অবসান হবে না, ভাই ও ভাইয়ের মধ্যে মিলন ঘটবে না?
আরও একটি দুঃখের কথা না বললে নয়। চুক্তির পর সন্তু বাবু যখন অন্যায়ভাবে ইউপিডিএফের উপর একের পর এক আক্রমণ চালাচ্ছিলেন, তখন জেএসএসের অন্য নেতারা, যাদেরকে আমরা অনেক সম্মান ও শ্রদ্ধা করতাম, তার কোন প্রতিবাদ করেননি। এমনকি কোন ধরনের যুক্তিপূর্ণ আলোচনা পর্যালোচনা ছাড়া সন্তু বাবুকে কংগ্রেসে ইউপিডিএফকে নির্মূলের প্রস্তাব অনুমোদন করতে দিলেন। পরে দেখা গেল ইউপিডিএফের প্রতি যে অন্যায় তারা মেনে নিয়েছিলেন, পরে সে অন্যায়ের শিকার তারা নিজেরাও হলেন। এমনকি চন্দ্র শেখর চাকমার মতো ঝানু বিপ্লবী ও সুদীর্ঘ চাকমার মতো দক্ষ সংগঠককে নির্মমভাবে প্রাণ হারাতে হলো। সম্প্রতি ইউপিডিএফের বিরুদ্ধে সন্তু লারমা অন্যায়ভাবে যে হামলা পুনরায় শুরু করে দিয়েছেন, তা যদি আপনারা মেনে নেন, এ অন্যায়ের প্রতিবাদ না করেন, তাহলে কোন একদিন আপনাদেরকেও যে তার ফল ভোগ করতে হবে না তার নিশ্চয়তা কোথায়? তাছাড়া আপনারাও আমাদের মতো জাতি ও জনগণের কাছে দায়বদ্ধ। সংঘাত বন্ধ করার দায়িত্ব আপনাদেরও রয়েছে। এই দায়িত্ব আপনারা কোনভাবে এড়িয়ে যেতে পারেন না। আপনাদেরকে প্রশ্ন করতে চাই, জেএসএস কি সন্তু বাবুর একার সম্পত্তি? কেন শুধু তার কথায় পার্টি চলবে? আপনাদের মতামতের কি কোন গুরুত্ব নেই? আপনারা যদি প্রতিবাদ না করেন তাহলে জনগণ ধরে নেবে ইউপিডিএফের বিরুদ্ধে এই অন্যায়, অযৌক্তিক ও দায়িত্বজ্ঞানহীন হামলায়, এই ভ্রাতৃঘাতী সংঘাতে আপনাদেরও সায় রয়েছে।
সবশেষে বলতে চাই, চুক্তির পর সন্তু বাবু মিজো নেতাদের মতো উদারতা ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ দেখাতে ব্যর্থ হয়েছেন, সে নিয়ে আপসোস করে আর লাভ নেই। অতীত আর ফিরে আসবে না। কিন্তু ভবিষ্যত যাতে অতীতের মতো না হয় অর্থাৎ জাতি যাতে আর রক্তক্ষয়ী সংঘাতে ক্ষত-বিক্ষত না হয়, তার জন্য আমরা এবং আপনারা এখনই কিছু করতে পারি। আমরা আমাদের দিক থেকে হাত বাড়িয়ে দিলাম, আমাদের প্রত্যাশা আপনারা আপনাদের দায়িত্ব পালন করবেন। আমাদের দুর্ভাগা জাতি আর ভাইয়ে ভাইয়ে হানাহানি দেখতে চায় না। ভাইয়ে ভাইয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এক হয়ে লড়াই দেখতে চায়। (সমাপ্ত)
১। নতুন কুমার চাকমা, সহসভাপতি, ইউপিডিএফ; ২। সচিব চাকমা, সদস্য, কেন্দ্রীয় কমিটি, ইউপিডিএফ; ৩। উজ্জ্বল স্মৃতি চাকমা, সদস্য, কেন্দ্রীয় কমিটি, ইউপিডিএফ; ৪। শান্তিদেব চাকমা, সদস্য, কেন্দ্রীয় কমিটি, ইউপিডিএফ; ৫। প্রদীপন খীসা, সদস্য, কেন্দ্রীয় কমিটি, ইউপিডিএফ; ৬। রতন বসু, প্রধান সংগঠক, মাটিরাঙ্গা-গুইমারা-মানিকছড়ি-রামগড়-লক্ষ্মীছড়ি অঞ্চল, ইউপিডিএফ; ৭। অংগ্য মারমা, সভাপতি, গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম; ৮। জিকো ত্রিপুরা, সাধারণ সম্পাদক, গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম; ৯। কণিকা দেওয়ান, সভাপতি, পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘ; ১০। সুনয়ন চাকমা, সভাপতি, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ; ১১। সুনীল ত্রিপুরা, সাধারণ সম্পাদক, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ; ১২। নীতি শোভা চাকমা, সভাপতি, হিল উইমেন্স ফেডারেশন।