নিজস্ব প্রতিবেদক।। ১৯৮৬ সালের ১ মে পার্বত্য চট্টগ্রামের পানছড়ি, খাগড়াছড়ি সদর ও দীঘিনালায় পাহাড়িদের উপর সংঘটিত হামলা-হত্যাকাণ্ডের ৩৬ বছর উপলক্ষে দীঘিনালা এলাকাবাসীর উদ্যোগে স্মৃতিচারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আজ রবিবার (১ মে ২০২২) দুপুর ২ টায় দীঘিনালায় অনুষ্ঠিত স্মৃতিচারণ সভায় দীঘিনালা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান চন্দ্র রঞ্জন চাকমার সভাপতিত্বে ও বিশিষ্ট সমাজসেবক কৃপা রঞ্জন চাকমা সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন ইউপিডিএফ’র দীঘিনালা ইউনিট সমন্বয়ক মিল্টন চাকমা, উদাল বাগান উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক শাক্য মনি চাকমা, দীঘিনালা ইউপি’র সাবেক সদস্য সমর বিজয় চাকমা, সমাজসেবক দীন মোহন চাকমা ও সমাজসেবক ধর্মজ্যোতি চাকমা প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, ১ মে পার্বত্য চট্টগ্রামের ইতিহাসে একটি কালো দিন। ১৯৮৬ সালের এই দিনে শাসকগোষ্ঠীর প্রত্যক্ষ মদদে রাষ্ট্রীয় বাহিনী ও সেটলার বাঙালিরা পার্বত্য চট্টগ্রামের পানছড়ি, খাগড়াছড়ি সদর ও দীঘিনালাসহ বিভিন্ন জায়গায় পাহাড়ি জনগণের উপর বর্বরোচিত হামলা ও নৃশংস হত্যাকাণ্ড চালায়। তৎকালীন স্বৈরাচারী এরশাদের শাসনামলে সংঘটিত এই ঘটনায় বহু পাহাড়ি হত্যার শিকার হন এবং হাজার হাজার পাহাড়ি ঘরবাড়ি, জায়গা-জমি ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হন। এ ঘটনার পর পাহাড়িদের ফেলে যাওয়া জায়গা-জমি সেটলার বাঙালিরা বেদখল করে নেয়। সেসব বেদখলকৃত জায়গা-জমি এখনো পাহাড়িরা ফিরে পায়নি।
বক্তারা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ি জনগণের উপর ডজনের অধিক গণহত্যা চালানো হয়েছে। এসব ঘটনার এখনো কোন বিচার হয়নি।
তারা আরো বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়িদের উচ্ছেদে শাসকগোষ্ঠি একদিকে ভূমি বেদখল অব্যাহত রেখেছে, অন্যদিকে জারি রাখা হয়েছে দমন-পীড়ন। সম্প্রতি বান্দরবানের লামায় রাবার ইন্ডাষ্ট্রিজ’র নামে ভূমিদস্যুরা ম্রো ও ত্রিপুরা জাতিসত্তার বংশপরম্পরায় ভোগদখলীয় জুমের জমি বেদখল করে তাদেরকে উচ্ছেদের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। শুধু লামায় নয়, গোটা পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন জায়গায় এখন উন্নয়ন, পর্যটনসহ বিভিন্ন কৌশলে পাহাড়িদের উচ্ছেদের চক্রান্ত করা হচ্ছে। বক্তারা শাসকগোষ্ঠির এসব চক্রান্তের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান।
সভায় বক্তারা বলেন, শাসকগোষ্ঠি পার্বত্য চট্টগ্রামে ভাগ করে শাসন করার নীতি বজায় রেখে পার্বত্য চট্টগ্রামে ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত জিইয়ে রাখার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। নতুন করে আবারো ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত বাঁধিয়ে দিতে নানা পাঁয়তারা চালানো হচ্ছে বলে বক্তারা অভিযোগ করেন। বক্তারা শাসকগোষ্ঠির পাতানো ফাঁদে পা না দিয়ে সংঘাত পরিহারের মাধ্যমে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তুলতে জেএসএস, ইউপিডিএফসহ বিবাদমান সকল পক্ষের প্রতি আহ্বান জানান।
সভা থেকে বক্তারা পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ি জনগণের উপর এ যাবত সংঘটিত সকল হামলা-হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে জড়িতদের আইনের আওতায় এনে বিচার এবং সকল প্রকার দমন-পীড়ন ও ভূমি বেদখল-উচ্ছেদ বন্ধের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।