CHTNews ডেস্ক।। খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলার ৫নং বাবুছড়া ইউনিয়ন ও ৪নং দীঘিনালা ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডে ঘরবাড়ি, বৌদ্ধ বিহার নির্মাণ ও সকল উন্নয়ন কর্মকান্ডে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কর্তৃক বাধা প্রদান ও হয়রানি বন্ধের দাবিতে প্রধানমন্ত্রীর বরাবরে স্মারকলিপি দিয়েছেন এলাকাবাসী।
আজ মঙ্গলবার (২৪ মে ২০২২) বেলা ২টায় খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে এ স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।
এ সময় এলাকাবাসীর পক্ষে উপস্থিত ছিলেন ৫নং বাবুছড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সন্তোষ জীবন চাকমা, ৪নং দীঘিনালা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রজ্ঞান জ্যোতি চাকমা, দীঘিনালা উপজেলা সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ও ৪৭ নং ধনপাতা মৌজার হেডম্যান গোপাদেবী চাকমা, ৪৮ নং ডাইনে ধনপাতা মৌজার হেডম্যান যুব লক্ষণ চাকমা, বাবুছড়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান সুগত প্রিয় চাকমা, দীঘিনালা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান চন্দ্র রঞ্জন চাকমা, বাবুছড়া ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের মেম্বার নিপন চাকমা প্রমুখ।
জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস স্মারকলিপিটি গ্রহণ করেন। উক্ত স্মারকলিপিতে ৩৬ জন জনপ্রতিনিধি, হেডম্যান, কার্বারী, শিক্ষক, ব্যবসায়ী ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ স্বাক্ষর করেন।
স্মারকলিপিতে বলা হয়, আমরা যুগ যুগ ধরে বংশ পরম্পরায় অত্র এলাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করে আসছি। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের সাথে অত্র স্মারকলিপির মাধ্যমে আপনাকে জানাতে বাধ্য হচ্ছি যে, বিগত ২০১৯ খ্রি: হতে আমাদের এই এলাকার পাহাড়ি বাসিন্দাদেরকে ঘরবাড়ি, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান নির্মাণ, সংস্কার ও উন্নয়ন কাজে আইন শৃংঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে বাধা প্রদান করা হচ্ছে। বাজার থেকে গৃহনির্মাণ সামগ্রী নিতে চাইলে বাবুছড়া সেনা ক্যাম্পের চেক পোষ্টে আটকানো হয়। গৃহনির্মাণ, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান নির্মাণ ও সংস্কারের জন্য বাবুছড়া সাবজোন ও দীঘিনালা জোন থেকে পূর্বানুমতি নেয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। যেমন-বাবুছড়া ইউনিয়নের ০নং ওয়ার্ডের বেলতলী সংঘরত্ন বৌদ্ধ বিহারের সংস্কার কাজের জন্য অনুমতির আবেদন করা হলে কর্তৃপক্ষ অনুমতি দেননি। গত ৩০/০১/২০২২ খ্রি: তারিখে সাধনা টিলা বনবিহার, চিন্তমনি বৌদ্ধ বিহার ও থলিপাড়া বৌদ্ধ বিহারে গিয়ে সেনা কর্তৃপক্ষ উক্ত বিহারগুলোকে কোন
ধরনের উন্নয়ন কাজ করা যাবে না বলে মৌখিক নির্দেশনা জারী করে।
এতে আরো বলা হয়, আমাদের মত নিরীহ জনগনের কাছে বোধগম্য হচ্ছে না যে, দেশের কোন আইনের বলে আমাদের নিজস্ব ঘরবাড়ী,ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান নির্মাণ, সংস্কার ও উন্নয়ন কাজে বাধা প্রদান এবং এ সব কাজের জন্য সেনা কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমতি গ্রহণ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। বিষযে উল্লিখিত এলাকা ব্যতিত উপজেলার অন্যান্য ইউনিয়নে কিংবা দেশের অন্যত্র এ রকম বিধি নিষেধ চালু করা হয়েছে বলে আমাদের জানা নেই। তাহলে আমাদের প্রতি কেন এরুপ বৈষম্যমূলক আচরণ করা হচ্ছে।
স্মারকলিপিতে বলা হয়, ৫ নং বাবুছড়া ইউনিয়নের ৩৭টি গ্রামের প্রায় ২৬,৫০০ জন এবং ৪নং দীঘিনালা ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ডে ১০টি গ্রামের প্রায় ৮,০০০ জন অধিবাসীকে অদ্ভুত বৈষম্যমূলক নিয়মের বেড়াজালে আবদ্ধ করে রাখা হয়েছে। এর ফলে আমরা ৩/৪ বছর ধরে বিনা কারণে চরম হয়রানি ও ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছি। এ দুর্বিসহ অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে সত্যিকার অর্থে আমরা অসহায় বোধ করছি।
এতে বলা হয়, অতি সাম্প্রতিক সময়ে বৈশাখী ঘূর্ণিঝড়ে উক্ত দুই ইউনিয়নে ১৯৮টি ঘরবাড়ি ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হয়। যা গত ১১/০৪/২০২২খ্রিঃ তারিখে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) সরেজমিনে পরিদর্শন করেন। বর্তমানে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো নিজস্বভাবে তাদের ঘরগুলি মেরামত করতে চাইলেও এই বিধিনিষেধের কারণে ক্ষতি হওয়া ঘরগুলি মেরামত করতে পারতেছে না।
স্মারকলিপিতে তিন দফা দাবি জানানো হয়েছে। দাবিগুলো হলো:
১. যত দ্রুত সম্ভব ৪ নং দীঘিনালা ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ড ও ৫ নং বাবুছড়া ইউনিয়নে ঘরবাড়ি, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান নির্মাণ, সংস্কার ও উন্নয়নে বাধা প্রদান বন্ধ করা হোক।
২. ব্যক্তিগত ঘরবাড়ি, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান নির্মাণ, সংস্কার ও উন্নয়ন কাজের জন্য বাধ্যতামূলক সেনা কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমতি গ্রহণের অবৈধ, বৈষম্যমূলক এবং স্বেচ্ছাচারী নিয়ম বাতিল করা হোক
৩। বাবুছড়া বাজারের উত্তরে গৃহ নির্মাণ সামগ্রী পরিবহনে বাধা তুলে নেয়া হোক।
প্রধানমন্ত্রীর বরাবরে দেওয়া উক্ত স্মারকলিপিতে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে রয়েছেন, সন্তোষ জীবন চাকমা, চেয়ারম্যান ৫নং বাবুছড়া ইউপি; প্রজ্ঞান জ্যোতি চাকমা চেয়ারম্যান ৪নং দীঘিনালা ইউপি; গোপাদেবী চাকমা দীঘিনালা উপজেলা সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ও হেডম্যান ৪৭ নং ধনপাতা মৌজা; সুগত প্রিয় চাকমা, সাবেক চেয়ারম্যান, বাবুছড়া ইউপি; চন্দ্র রঞ্জন চাকমা, সাবেক চেয়ারম্যান দীঘিনালা ইউপি; যুব লক্ষণ চাকমা হেডম্যান, ৪৮ নং ডাইনে ধনপাতা মৌজা; উপগুপ্ত চাকমা, সদস্য, দীঘিনলা ইউপি; প্রিয়নন্দ চাকমা, সদস্য দীঘিনালা ইউপি; দীপুাক্ষ চাকমা প্রা: প্রধান শিক্ষক, বাবুছড়া; অরুণ বিকাশ চাকমা, সভাপতি, বাঁশ ব্যবসায়ী সমিতি; গীতা চাকমা, মহিলা সদস্য, দীঘিনালা ইউপি; ধর্মজ্যোতি চাকমা, সদস্য, দীঘিনালা ইউপি; জীবন শান্তি চাকমা, সদস্য, দীঘিনালা ইউপি; সুবল চন্দ্র চাকমা, সদস্য, দীঘিনালা ইউপি; প্রমোদ কান্তি চাকমা, সদস্য দীঘিনালা ইউপি; প্রমোদ কান্তি চাকমা, সদস্য দীঘিনালা ইউপি; কিনাধন চাকমা, সদস্য দীঘিনালা ইউপি; ত্রিপংকর চাকমা, সদস্য দীঘিনালা ইউপি; কৃষ্ণ রঞ্জন চাকমা, সদস্য দীঘিনালা ইউপি; জ্যোৎস্না চাকমা, মহিলা সদস্য বাবুছড়া ইউপি; অরুণ বিকাশ চাকমা, সদস্য বাবুছড়া ইউপি; নিপন চাকমা, সদস্য বাবুছড়া ইউপি; লিটন চাকমা, কার্বারী, নুনছড়ি চৌধুরী পাড়া; চম্পক লাল চাকমা কার্বারী, নুনছড়ি ডিপি পাড়া; উদয় শংকর চাকমা, হেডম্যান, ৩৩ নং নুনছড়ি মৌজা; প্রীতি রঞ্জন চাকমা, সদস্য, বাবুড়া ইউপি; শান্তি প্রিয় চাকমা, সদস্য, বাবুছড়া ইউপি; গগণ বিকাশ চাকমা, সদস্য বাবুছড়া ইউপি, রুপম চাকমা, সদস্য বাবুছড়া ইউপি প্রমুখ।
স্মারকলিপিটির অনুলিপি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রী, ২৯৮ নং খাগড়াছড়ি আসনের সংসদ সদস্য, আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান, খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক, খাগড়াছড়ি রিজিয়ন কমান্ডার, খাগড়াছড়ি পুলিশ সুপার, দীঘিনালা জোন কমান্ডার, দীঘিনালা উপজেলা চেয়ারম্যান ও দীঘিনালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বরাবরে দেওয়া হয়েছে।