গত বছর (২০১৯) ৯ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুর এলাকা থেকে সাংগঠনিক কাজ শেষে ঢাকায় ফেরার পথে নিখোঁজ হন ইউপিডিএফ’র মুখপাত্র ও শ্রমজীবী ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক মাইকেল চাকমা। আজ তাঁর নিখোঁজের এক বছর পূর্ণ হলো। কিন্তু এই এক বছরেও তার কোন খোঁজ পাওয়া গেল না। রাষ্ট্র তাঁর কোন সন্ধান দিতে পারল না!
ধারণা করা হয় মাইকেল চাকমাকে রাষ্ট্রীয় কোন সংস্থা কর্তৃক তুলে নেওয়া হয়েছিল। তার সুস্পষ্ট প্রমাণ মেলে রাষ্ট্রীয় আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসমূহের অসহযোগিতামূলক আচরণের মাধ্যমে।
মাইকেল চাকমা নিখোঁজ হওয়ার পর ১৬ এপ্রিল ’১৯ তার এক আত্মীয় ধনক্ক চাকমা নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ থানায় অভিযোগ দায়ের করেন এবং ১৯ এপ্রিল একই থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। পুলিশ প্রথম দিকে মাইকেল চাকমাকে উদ্ধারে প্রয়োজনীয় সহযোগিতার কথা বললেও পরে অবস্থান পাল্টিয়ে অসহযোগিতামূলক আচরণ শুরু করে। এমনকি থানায় জিডির বিষয়টি পর্যন্ত অস্বীকার করে।
এরপর গত ১৩ মে ২০১৯ মাইকেল চাকমার বড় বোন সুভদ্রা চাকমা মাইকেল চাকমার সন্ধানের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট পিটিশন দাখিল করলে ২১ মে হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চ মাইকেল চাকমা নিখোঁজের বিষয়ে ৫ সপ্তাহের মধ্যে তদন্ত করে রিপোর্ট পেশ এবং তার অবস্থান সংক্রান্ত তথ্য জানাতে স্বরাষ্ট্র সচিবকে নির্দেশ প্রদান করেন। কিন্তু আজ অবধি এ নির্দেশের কার্যকারিতা লক্ষ্য করা যায়নি।
এদিকে পুলিশ জিডির বিষয়টি অস্বীকার করার প্রেক্ষিতে গত ২৫ জানুয়ারি ২০২০ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক অধ্যাপক আকমল হোসেনের নেতৃদ্বে নাগরিক সমাজের একটি প্রতিনিধি দল সোনারগাঁ থানায় পূনরায় জিডি করতে যান। এ সময় থানায় দায়িত্বরত এসআই পঙ্কজ কান্তি সরকার পূর্বেকার জিডির বিষয়টি স্বীকার করলেও অদ্যাবধি পুলিশ মাইকেল চাকমার সন্ধানে কোন তৎপরতা দেখায়নি।
গত এক বছরে ইউপিডিএফভুক্ত বিভিন্ন সংগঠনসহ দেশের প্রগতিশীল বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, ব্যক্তি মাইকেল চাকমাকে সন্ধানের দাবি জানিয়ে আসছেন। এই দাবিতে বিক্ষোভ, মানববন্ধন, সংবাদ সম্মেলনসহ নানা কর্মসূচি পালিত হয়েছে। কিন্তু সরকারের দিক থেকে মাইকেল চাকমার সন্ধানে কার্যকর কোন পদক্ষেপ দেখা যায়নি।
মাইকলে চাকমা পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে ও মানবাধিকারের পক্ষে সর্বদা সোচ্চার ছিলেন। তিনি দেশের প্রগতিশীল রাজনৈতিক মহলেও একজন সুপরিচিত রাজনৈতিক কর্মী ছিলেন এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সাথে তার সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল।
মূলত অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে তার বলিষ্ট কণ্ঠ রুদ্ধ করে দেয়া ও পার্বত্য চট্টগ্রামে পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের দাবিতে আন্দোলনরত ইউপিডিএফ’র ওপর রাজনৈতিক দমন-পীড়নের অংশ হিসেবে তাকে রাষ্ট্রীয় কোন সংস্থা কর্তৃক তুলে নেয়া হয়েছে–এটা এখন পরিষ্কার।
তিনি নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামে ইউপিডিএফ’র ওপর রাজনৈতিক দমন-পীড়ন ভয়াবহভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। শত শত নেতা-কর্মীকে অন্যায়ভাবে মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার করে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। কথিত ‘বন্দুযুদ্ধের’ নামে বিনা বিচারে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মীকে।
মাইকেল চাকমাকে খোঁজার প্রশ্নে রাষ্ট্রের বিভিন্ন আইন-প্রয়োগকারী সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানগুলোর নানা অসহযোগিতামূলক আচরণই প্রমাণ করে মাইকেল চাকমা রাষ্ট্রের হেফাজতেই বন্দি রয়েছেন।
তাঁর পরিবার-পরিজন, দলের নেতা-কর্মী, দেশের বিভিন্ন প্রগতিশীল ও মানবাধিকার সংগঠনসহ নাগরিক সমাজ এখনো মাইকেল চাকমার প্রত্যাবর্তনের অপেক্ষায় পথ চেয়ে রয়েছেন। সরকারের উচিত অবিলম্বে মাইকেল চাকমাকে তাঁর পরিবার ও সংগঠনের কাছে ফিরিয়ে দিয়ে দায়মুক্ত হওয়া।