আজ ক্যজাই মারমার ২৬তম শহীদ বার্ষিকী

 “স্বায়ত্তশাসনের জন্য রক্তের প্রয়োজন। আমি দিয়ে গেলাম। জয় আমাদের অনিবার্য”– ক্যজাই মারমার শেষ উচ্চারণ

শহীদ ক্যজাই মারমা


নিজস্ব প্রতিবেদক।।
আজ ৩১ মার্চ ২০২২ ক্যজাই মারমার ২৬তম শহীদ বার্ষিকী। ১৯৯৬ সালের এই দিনে খাগড়াছড়ির পানখিয়া পাড়া এলাকায় এপি ব্যাটালিয়নের সদস্যদের গুলিতে শহীদ হন ক্যজাই মারমা।

সেদিন সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার সময় ক্যজাই মারমাসহ পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের নেতা-কর্মী, সমর্থকরা অন্যায়ভাবে আটক চাথোয়াই প্রু মারমার মুক্তির দাবিতে সড়ক অবরোধ কর্মসূচি সফল করার জন্য প্রচারণায় নামেন। প্রচারণার মাঝপথে পানখিয়া পাড়া স্কুলের নিকটস্থ এপি ব্যাটালিয়নের সদস্যরা অত্যন্ত রূঢ়ভাবে বাধা দেয়। এ সময় গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে প্রচার-প্রচারণা চালানো মৌলিক অধিকার ও সাংবিধানিক অধিকারের কথা যুক্তির সাথে তুলে ধরতে গেলে এপি ব্যাটালিয়নের সদস্যরা আরো বেশি ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে। যুক্তি তর্কে কুলিয়ে উঠতে না পেরে এক পর্যায়ে তারা গুলি বর্ষণ করে। এতে ক্যজাই মারমা বুকে গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন। এছাড়া গুলিতে আরো অনেকেও আহত হন।

গুলিবিদ্ধ হওয়ার পরও ক্যজাই মারমা অন্যান্য সহকর্মীদের সাথে কিছুদূর দৌঁড়ে যেতে সক্ষম হন। পরে তার বুক থেকে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে দেখে সহযোদ্ধারা তাকে জড়িয়ে ধরে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যায়। এ সময় তিনি সহযোদ্ধাদের উদ্দেশ্যে শেষ বারের মতো বলেন, “স্বায়ত্তশাসনের জন্য রক্তের প্রয়োজন। আমি দিয়ে গেলাম। জয় আমাদের অনিবার্য”।

এরপর তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ইতিহাসে শহীদের তালিকায় যুক্ত হয় আরো একটি নাম ক্যজাই মারমা।

এ ঘটনার পর সেদিন গভীর রাতে ঘাতকরা পানখিয়া পাড়ার ঘরে ঘরে তল্লাশি চালায়। শহীদ ক্যজাই মারমার মরদেহ ছিনিয়ে নেয়ার জন্য তন্ন তন্ন করে খোঁজ করে।

পরদিন (১লা এপ্রিল ’৯৬) শহীদ ক্যজাই মারমার মরদেহ নিয়ে হাজার হাজার শোকার্ত প্রতিবাদী জনতা রাজপথে নেমে পড়ে। পানখিয়া পাড়ার ঐতিহ্যবাহী শত বছরের প্যাগোডা সংলগ্ন বটতলা থেকে মিছিল শুরু হয়। মিছিলটি খাগড়াছড়ি বাজার, চেঙ্গী স্কোয়ার ঘুরে আবার শাপলা চত্বরে পৌঁছলে পরিকল্পিতভাবে ওঁৎ পেতে থাকা পুলিশ ঝাঁপিয়ে পড়ে। বেপরোয়া লাঠিচার্জ করে। মিছিলকারীসহ পথচারীদের জখম করে। রাবার বুলেটসহ সীসা গুলি বর্ষণ করে। এতে শ’ খানেক লোক আহত হয়। পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের নেতা-কর্মীসহ অনেককে ধরে নিয়ে যায়। পুলিশ মিছিলের মধ্য থেকে জোরপূর্বক শহীদের মরদেহও ছিনিয়ে নিয়ে যায়।

উক্ত হত্যাকাণ্ড ও পুলিশী বর্বরতার প্রতিবাদে ঢাকাসহ পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে তিন সংগঠন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, পাহাড়ি গণ পরিষদ ও হিল উইমেন্স ফেডারেশন বিক্ষোভ মিছিল-সমাবেশ করে। তারা ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত ও হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানায়। কিন্তু দীর্ঘ ২৬ বছরেও ক্যজাই মারমা হত্যার বিচার ও ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হয়নি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *