সেনা হেফাজতে ইউপিডিএফ নেতার মৃত্যুর তদন্ত দাবি হিউম্যান রাইটস ওয়াচের

নিউইয়র্ক ভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় সেনাবাহিনীর হেফাজতে ইউপিডিএফ নেতা নবায়ন চাকমা মিলনের (সৌরভ) মৃত্যুর ঘটনার সুষ্ঠু ও স্বাধীন তদন্তের দাবি জানিয়েছে।

সংগঠনটির এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক ব্রাড অ্যাডামস গতকাল ৩০ মার্চ বলেন, ‘নবায়ন চাকমা মিলনের মর্মান্তিক মৃত্যু হলো পার্বত্য চট্টগ্রামে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মানবাধিকার লঙ্ঘনের সাম্প্রতিক সংযোজন।’

(https://www.hrw.org/news/2022/03/30/bangladesh-indigenous-activist-dies-military-custody)

তিনি উক্ত ইউপিডিএফ নেতার উপর নির্যাতন ও মৃত্যুর জন্য দায়ি সেনা অফিসারদের জবাবদিহিরও দাবি জানান এবং বলেন যে, তার মৃত্যুর ঘটনার তদন্ত ছাড়াও অন্যান্য মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলোরও তদন্ত করতে হবে, যা বাংলাদেশ সরকার বরাবরই অগ্রাহ্য করে থাকে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম কমিশনের উদ্ধৃতি দিয়ে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ জানায়, সেনারা গত ১৫ মার্চ ৩:৩০ ঘটিকায় দীঘিনালায় মিলন চাকমাকে আটক করে। এ সময় তিনি চিকিৎসা নিচ্ছিলেন।প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা অনুযায়ী, সেনারা আধমরা না হওয়া পর্যন্ত এক ঘন্টারও বেশী সময় ধরে তাকে মারধর করে ও লাথি মারে। এতে তিনি অজ্ঞান হয়ে যান এবং দৃশ্যত তার হাত ও পা ভেঙে যায়। এরপর সেনারা তাকে সামরিক যানে করে নিয়ে যায় এবং প্রায় চার ঘন্টা পর দীঘিনালা হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখানে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়।

মিলন চাকমা ১৯৯৮ সালে গঠিত ইউনাইটেড পিপল্স ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) এর সদস্য। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ তার রিপোর্টে আরও বলেছে, একজন প্রত্যক্ষদর্শী, যার নাম নিরাপত্তার কারণে উল্লেখ করা হয়নি, সংগঠনের কর্মীদের কাছে বলেন, সেনারা মিলনের কম্পিউটারের পাসওয়ার্ড বের করতে পালা করে তার ওপর নির্যাতন চালায়। তার বর্ণনা অনুযায়ী সেনারা মিলনের পাছায় ও অন্ডকোষে আঘাত করে এবং গাছের মুগুর দিয়ে মারধর করে।

ওই প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘যখন তিনি আর উঠে দাঁড়াতে পারছিলেন না, তখন সেনারা তার উপর পানি ঢেলে দেয়।’

পরে মিলন জ্ঞান হারায় এবং এ সময় সেনারা তাকে কাঁধে করে নিয়ে যায়। ‘সে সময় তিনি প্রায় মারা গেছেন বলা যায়।’ তিনি জানান।

অন্য একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, সেনারা মিলনের হাত ও পা বেঁধে লাঠি ও বন্দুক দিয়ে তাকে মারধর করে। তিনি বলেন তারা তাকে বুটজুতা দিয়ে ফুটবলের মতো লাথি মারে এবং লাঠি দিয়ে আঘাত করে। তার হাত ও পা ভেঙে যায় এবং তিনি আধমরা হয়ে যান।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মতে, পার্বত্য চট্টগ্রামে আদিবাসী কর্মীদের উপর মানবাধিকার লঙ্ঘনের তদন্ত খুব কমই হয়ে থাকে এবং দায়ি ব্যক্তিদের বলতে গেলে কখনো শাস্তি হয় না। আদিবাসী অধিকার কর্মী (ইউপিডিএফ সংগঠক) মাইকেল চাকমার নিখোঁজ হওয়ার তিন বছর পর সরকার তার পরিবারের আবেদন এবং তার সম্পর্কে হাইকোর্ট, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন ও নির্যাতন বিরোধী জাতিসংঘ কমিটির অনুসন্ধানমূলক প্রশ্ন অগ্রাহ্য করেছে। পুলিশ শেষমেষ ২০২০ সালের জানুয়ারী মাসে হাইকোর্টের একটি আদেশের জবাবে বলে যে, তারা বাংলাদেশের কোন কারাগারে মাইকেল চাকমা নামে কাউকে সন্ধান পায়নি।

মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ রিপোর্টে বলেছে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এবং নিরাপত্তাবাহিনীর অন্যান্য সংস্থাগুলো পার্বত্য চট্টগ্রামে আদিবাসী জনগণের ওপর ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘন করে থাকে। এর মধ্যে রয়েছে বিচার বহির্ভুত হত্যা, গুম, যৌন সহিংসতা ও ভূমি বেদখল। আর এসবের কোন প্রতিকারও পাওয়া যায় না।

অ্যাডামস বলেন, শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরের প্রায় ২৫ বছর পর বাংলাদেশ সরকার আজ পর্যন্ত সঠিকভাবে ধরে নিয়েছে যে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় পার্বত্য চট্টগ্রামে এসব মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলোকে উপেক্ষা করবে। তিনি বলেন বাংলাদেশ সরকারকে পার্বত্য চট্টগ্রামে অব্যাহতভাবে আদিবাসীদের বিরুদ্ধে ধর্ষণ, নির্যাতন ও খুন করতে দেয়া উচিত হবে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *