নিজস্ব প্রতিনিধি।। বান্দরবান জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ক্যশৈহ্লা নিজের পৃষ্ঠপোষিত কথিত মগপার্টির সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন।
আজ মঙ্গলবার (২০ সেপ্টেম্বর ২০২২) দুপুরে বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘মগ বাহিনীর কারণে সাধারণ মানুষ আতঙ্কিত, তাদের চাদাঁবাজী ও হুমকি-ধমকির কারনে এলাকায় অশান্তি বিরাজ করছে। একটি সরকারী স্কুলে ও জেলা শহরে সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপ অবস্থান করা, জেলা শহরের নিরাপত্তার জন্য হুমকি’।
প্রসঙ্গত, গত রবিবার ১৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে বান্দরবান পৌর এলাকার উজানী পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভারী অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে মগপার্টির অন্তত ২৫জন সন্ত্রাসী অবস্থান গ্রহন করে এবং রাতে চলে যায়। এর আগে তারা শহরের কালাঘাটায় গুলি বর্ষণ করে। এই ঘটনায় আতঙ্কিত হয়ে পড়ে জেলা শহরের বাসিন্দারা। যার ফলে জেলা শহরের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেন স্থানীয়রাও। অনেকে মগপার্টির এমন বেপরোয়া কর্মকাণ্ডের জন্য সরাসরি ক্যশৈহ্লা মারমাকে দায়ি করেন। সেদিন মগপার্টির সদস্যদের খাবার সরবরাহ করার অভিযোগও রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।
উক্ত ঘটনা বিষয়ে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ক্যশৈহ্লা আজকে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি জেলা শহরে সন্ত্রাসীদের অবস্থানের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ‘এখন এই যদি বান্দরবান শহরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঠিক রাখা না হয়, তাহলে আগামী দিনের নিরাপত্তা কি হবে? সাধারণ মানুষ কোথায় যাবে? তাদের নিরাপত্তার কি হবে’।
তিনি আরো বলেন, ‘জেলা শহরে এত নিরাপত্তা বাহিনী থাকতে এত অস্ত্র নিয়ে একটি সরকারি প্রাথমিক স্কুলে কিভাবে সন্ত্রাসীরা প্রবেশ করছে, এটা কঠিন ব্যাপার। তিনি সাংবাদিকদের উদ্দ্যেশ্যে বলেন, এখন আপনারাই বলেন, বান্দরবানের নিরাপত্তার আর কি আছে’?
সংবাদ সম্মেলনে যে বিদ্যালয়ে সন্ত্রাসীরা অবস্থান নিয়েছিল সেই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তিংম্যাইয়ী মারমা বলেন, ওরা ২০ থেকে ২৫ জন ছিলো, তাদের অধিকাংশের কাছে ভারী অস্ত্র ও ব্যাগ ছিলো, একটি স্কুলে সন্ত্রাসীদের অবস্থান দেখে সত্যি আমরা আতঙ্কিত, যা বান্দরবান শহরে আগে দেখা যায়নি।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকেও দোষারোপ করার চেষ্টা করেন। তিনি বলেন, ‘সেদিন মগপার্টির সদস্যরা যখন বিদ্যালয়ে অবস্থান করছিল তখন আমি বান্দরবান থেকে ঢাকায় যাচ্ছিলাম। ওই সংবাদ পাওয়া মাত্রই মোবাইলে বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং সাংবাদিকদের অবহিত করি। কিন্তু সবাই শুধু দেখছি দেখছি বললেও কোন সদুত্তর এখনো পাওয়া যায়নি’।
সংবাদ সন্মেলনে বিভিন্ন গণমাধ্যমের ৩০জন সাংবাদিক উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে, মগপার্টির পক্ষ থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে ক্যশৈহ্লা মারমাকে মগ পার্টির উপদেষ্টা কমিটির প্রধান সদস্য এবং গডফাদার হিসেবেও দাবি করা হয়েছে। এতে তারা বলেছেন, ‘গত শুক্রবার বান্দরবান জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্যশৈহ্লা’র অনুরোধে এমএনপি দলের সদস্যরা বান্দরবান জেলা শহরে প্রবেশ করে। পরের দিন তার আশ্রয়ে বান্দরবান সদর উপজেলা রাম জাদি তংপ্রু পাড়া নামক স্থানে অবস্থান করে এবং রবিবার ১৮ সেপ্টেম্বর) আবার তার অনুরোধে রাতের ভাতের দাওয়াত খাওয়ার জন্য এমএনপি সকল সদস্যদেরকে বান্দরবান জেলা শহরের উজানী পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবস্থান করার জন্য অনুমতি দেয়’।
‘এমএনপি কমান্ডো মংথেন’ নামে একটি ফেইসবুক আইডি থেকে বলা হয়েছে, ‘বান্দরবান জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্যশৈহ্লার মারমার আমন্ত্রণে এমএনপি সদস্যরা বান্দরবানে গিয়ে জেএসএসের সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের ধ্বংস করে চলে এসেছে। কিন্তু এখন চেয়ারম্যানের স্বার্থে আঘাত লাগার কারণে আমাদেরকে আর চিনে না বলছে। আমাদের সন্ত্রাসী ডাকছে। তাহলে আপনি কে? আপনিতো আমাদের এমএনপি পার্টির উপদেষ্টা কমিটির প্রধান সদস্য। আপনিও এমএনপি’র একজন গডফাদার ছিলেন’।
তারা (মগপার্টি) ক্যশৈহ্লাকে রাজাকার হিসেবেও আখ্যায়িত করেন এবং তাকে এমএনপি দল থেকে আজীবন বহিষ্কার করার কথাও জানান।
উল্লেখ্য, দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন মহল থেকে কথিত মগপার্টিকে ক্যশৈহ্লা ও আওয়ামী লীগ দ্বারা পৃষ্ঠপোষকতা দেয়ার অভিযোগ উঠছে। কিন্তু এতদিন তাঁকে এ বিষয়ে কোন কথা বলতে শোনা যায়নি। আজকে সংবাদ সম্মেলনে তিনি মগপার্টি নিয়ে যেসব বিস্ফোরক কথা বলেছেন তা নিয়েও নানা আলোচনা-সমালোচনা চলছে।।
এদিকে, ক্যশৈহ্লার সংবাদ সম্মেলনের প্রেক্ষিতে মগপার্টির পক্ষ থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যে প্রতিক্রিয়া দেখানো হয়েছে তাতে স্পষ্ট হয়েছে যে, আসলেই এতদিন তিনিই (ক্যশৈহ্লা) মগপার্টিকে পৃষ্টপোষকতা দিয়ে এসেছেন। এখন জনমনে নানা প্রশ্ন ও অভিযোগ উঠায় সংবাদ সম্মেলন করে তিনি তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ ধামাচাপা দেয়ার অপচেষ্টা চালাচ্ছেন বলে অনেকে ধারণা করছেন।