পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি লঙ্ঘন করে চুক্তির শর্ত মোতাবেক সেনাবাহিনীর প্রত্যাহারকৃত ২৪০টি পরিত্যক্ত ক্যাম্পে পর্যায়ক্রমে পুলিশ মোতায়েনের জন্য বাংলাদেশ পুলিশের আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন হেডকোয়ার্টার্স থেকে একটি চিঠি প্রেরণ করা হয়েছে। তবে এতে প্রাথমিকভাবে ৩০টি ক্যাম্পে পুলিশ মোতায়েনের কথা বলা হয়েছে।
গত ১৩ এপ্রিল ২০২২ খ্রি: পুলিশ সুপার(ইন্টেলিজেন্স)-এর পক্ষে মোসা: সাদিয়া খাতুন স্বাক্ষরিত এই চিঠিটি কার্যার্থে অধিনায়ক (পুলিশ সুপার) ১, ২, ৩ ও ৬ এপিবিএন… এর বরাবরে পাঠানো হয়। চিঠিটির স্মারক নং-এপিবিহেঃকোঃ/ইন্টেলিজেন্স-২০২২/২৩০৬, তারিখঃ ১৩ এপ্রিল ২০২২ খ্রি:।
চিঠিতে বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে-‘পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণ কমিটি ৫ম বৈঠকের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন সংক্রান্ত’। এতে সূত্র উল্লেখ করা হয়েছে- ১। স্মারক নং স্বঃমঃ ৪৪.০০.০০০০.০৭৫.০৮.০০৮.২০১৮-২৫০, তারিখঃ-০৫/০৪/২০২২ খ্রিঃ। ২। পুঃহেঃকোঃ স্মারক নং- ৪৪.০১.০০০০.০১৯.৫২.০০১.২২-১২৮৮(২), তারিখঃ- ১১/০৪/২০২২ খ্রিঃ।
চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘উপর্যুক্ত বিষয় ও সূত্রের প্রেক্ষিতে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স, ঢাকা হতে প্রাপ্ত পত্রে বর্ণিত পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণ কমিটি ৫ম বৈঠকের সিদ্ধান্ত মোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণপূর্বক বাস্তবায়ন অগ্রগতি প্রতিবেদন অত্রাফিসে জরুরী ভিত্তিতে প্রেরণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো’।
এতে ক্রম নং ১৩(১) দিয়ে টেবল আকারে সিদ্ধান্ত উল্লেখ করে বলা হয়েছে ‘সেনাবাহিনীর প্রত্যাহারকৃত ২৪০টি ক্যাম্পের পর্যায়ক্রমে পুলিশ মোতায়েন করা হবে। প্রাথমিকভাবে ৩০টি ক্যাম্পে পুলিশ মোতায়েন করা হবে’।
চিঠিটির অনুলিপি হিসেবে এ্যাডিশনাল আইজি, এপিবিএন, বাংলাদেশ পুলিশ, ঢাকা, ডিআইজি এপিবিএন, বাংলাদেশ পুলিশ,ঢাকা, এ্যাডিশনাল ডিআইজি (প্রমোশন ও ইন্টেলিজেন্স/অপারেশন), এপিবিএন হেডকোয়ার্টার্স, ঢাকা এবং পুলিশ সুপার (প্লানিং ও অপারেশন), এপিবিএন হেডকোয়ার্টার্স ঢাকা-কে দেওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগ সরকার ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির মধ্যেকার স্বাক্ষরিত পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ঘ খন্ডের ১৭(খ) ধারায় বলা হয়েছে, “সামরিক ও আধা সামরিক বাহিনীর ক্যাম্প ও সেনানিবাস কর্তৃক পরিত্যক্ত জায়গা-জমি প্রকৃত মালিকের নিকট অথবা পার্বত্য জেলা পরিষদের নিকট হস্তান্তর করা হইবে”।
কাজেই সেনাবাহিনীর পরিত্যক্ত ক্যাম্পে পুলিশ মোতায়েন করা স্পষ্টতই পার্বত্য চুক্তির লঙ্ঘন।
এদিকে, সরকারের এমন সিদ্ধান্তে সচেতন মহল উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা বলেছেন, সরকারের উচিত চুক্তি বাস্তবায়নে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয় এমন সিদ্ধান্ত গ্রহণ থেকে বিরত থাকা। দীর্ঘ দুই যুগেরও অধিক সময় ধরে চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়ার ফলে পার্বত্য চট্টগ্রামে যে সংকট তৈরি হয়েছে পরিত্যক্ত সেনা ক্যাম্পে পুলিশ মোতায়েন করা হলে সে সংকট আরো বাড়বে বলে তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেন এবং চুক্তির শর্ত মেনে চলতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
উল্লেখ্য, গত বছর ২৮ ফেব্রুয়ারি পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (পিসিজেএসএস) সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমার (সন্তু লারমা) সঙ্গে বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাবাহিনীর ছেড়ে আসা পরিত্যক্ত ক্যাম্পের জায়গায় ‘আধুনিক পুলিশ’ মোতায়নের ঘোষণা দিয়েছিলেন।
এরপর ১৫ মার্চ ২০২১ পুলিশের আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের হাতে ‘আর্মড পুলিশ মাউন্টেইন ব্যাটালিয়ন’ নামে প্রকল্প প্রস্তাবের ফাইলটি হস্তান্তর করেন
সে সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ওই ঘোষণার আপত্তি জানিয়ে সংবাদ মাধ্যমে বিবৃতি দিয়েছিল ইউপিডিএফ। এতে বলা হয়েছিল ‘সরকারের এই উদ্যোগ কেবল ১৯৯৭ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির মৌলিক চেতনার পরিপন্থীই নয়, তা পাহাড়ি জনগণের সাথেও চরম বিশ্বাসঘাতকতার সামিল।’