দীর্ঘ ৯ মাস নানা টালবাহানা ও মিথ্যাচারের পর গুমের শিকার ইউপিডিএফ এর মুখপাত্র ও শ্রমজীবী ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক মাইকেল চাকমার নিখোঁজের বিষয়ে অনেক আগে জিডি হয়েছে বলে স্বীকার করেছে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ থানা পুলিশ।

শনিবার (২৫ জানুয়ারি) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক অধ্যাপক আকমল হোসেন, লেখক রেহনুমা আহমেদ, লেখক ওমর তারেক চৌধুরি, বাংলাদেশ লেখক শিবিরের সাধারণ সম্পাদক কাজী ইকবাল ও বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের নেতা দীপা মল্লিকের নেতৃত্বে বিশিষ্ট নাগরিক ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম, হিল উইমেন্স ফেডারেশন ও ইউনাইটেড ওয়ার্কার্স ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট-এর পক্ষ থেকে একটা প্রতিনিধি টীম সোনারগাঁ থানায় জিডি করতে ও নিখোঁজ মাইকেল চাকমার সন্ধানের অগ্রগতি বিষয়ে জানতে গেলে উক্ত বিষয়টি স্বীকার করেন সোনারগাঁ থানায় দায়িত্বরত এস আই পঙ্কজ কান্তি সরকার। এসময় ওসি মনিরুজ্জামান থানায় উপস্থিত ছিলেন না। ওসি ছুটিতে রয়েছেন বলে থানা থেকে জানানো হয়।
চার সংগঠনের নেতৃবৃন্দের মধ্যে হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সভাপতি নিরূপা চাকমা ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সুনয়ন চাকমা এ সময় উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া উক্ত টীমে মাইকেল চাকমার বড় বোন সুভদ্রা চাকমাও ছিলেন।
পূর্বে করা জিডির অনুলিপি এস আই পঙ্কজের নিকট থেকে গ্রহন করেন অধ্যাপক আকমল হোসেন।
গত ১৯ এপ্রিল ২০১৯ তারিখে জিডি করার পর দীর্ঘ ৯ মাস নানা টালবাহানা শেষে পুলিশ এই প্রথম থানায় জিডি হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করলো।
প্রতিনিধিরা ‘এতোদিন জিডি হয়নি বলে কেন মিথ্যাচার করা হয়েছে?’-এমন প্রশ্ন করলে এস আই পঙ্কজ কোন সদুত্তর দিতে পারেননি। উপরন্তু ওসি মনিরুজ্জামান আজ সকালে ছুটিতে গেছেন, তিনি (ওসি) থাকলে এর উত্তর দিতে পারতেন বলে তিনি (এস আই পঙ্কজ) বিষয়টি এড়িয়ে যান।
জিডির কপি হস্তান্তর করা হলেও জিডির মূল কপির জিডির নম্বরটি ছিল ওভাররাইট! এসময় প্রতিনিধিরা বলেন, মূল ডকুমেন্টে তো ওভাররাইট করা যায়না। জিডির নম্বরটি কেন ওভাররাইট?-এমন প্রশ্নেও এসআই পঙ্কজ কোন সুদুত্তর দিতে পারেননি।
যেহেতু দীর্ঘ ৯মাস অস্বীকার করার পর থানা থেকে জিডির অনুলিপি প্রদান করা হচ্ছে, সেহেতু প্রমান হিসেবে অনুলিপির উপরে ‘‘আজ ২৫ জানুয়ারি ২০২০ তারিখে জিডির অনুলিপি দেয়া হচ্ছে’’ এই মর্মে লিখে নাম ও স্বাক্ষরসহ অনুলিপি প্রদান করতে প্রতিনিধিরা অনুরোধ জানালে এস আই পঙ্কজ ওসিকে ফোন করে এটা সম্ভব নয় বলে অভিমত দেন।
অধ্যাপক আকমল হোসেন জিডির অগ্রগতি ও তদন্তের সর্বশেষ ফলাফল জানতে চাইলে, তদন্তের স্বার্থে বলা যাবে না বলে অভিমত দেন এস আই পঙ্কজ। বিশিষ্টজনদের বিভিন্ন প্রশ্নে কোন সদুত্তর দিতে পারেননি দায়িত্বরত এস আই পঙ্কজ। তিনি বরাবরই আজ সকালে ছুটিতে থাকা ওসির ওপর দায় চাপিয়ে প্রশ্নগুলো এড়িয়ে গেছেন। এসময় বিশিষ্টজনরা পুলিশের নীতি-নৈতিকতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেন।
অধ্যাপক আকমল হোসেন বলেন, ক্ষমতাবানরা পুলিশের সহযোগিতা পান কিন্তু যাদের ক্ষমতা নেই তারা সহযোগিতা পাবেননা-এই বৈষম্য খুবই দঃখজনক। তিনি বলেন, ’৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের উত্তাল সময়ে আমরা ছাত্র সংগঠনে যুক্ত থেকে নানানভাবে সহযোগিতা দিয়ে দেশ স্বাধীন করতে ভূমিকা রেখেছিলাম। এমন দেশ আমরা চাইনি বলে তিনি মন্তব্য করেন। এসময় এস আই পঙ্কজ নিশ্চুপ থেকে মাথা নিচু করে থাকেন।
এদিকে মাইকেল চাকমা নিখোঁজের জিডি নিয়ে সোনারগাঁ থানা পুলিশের মিথ্যাচার ও হয়রানির তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সভাপতি বিপুল চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সভাপতি নিরূপা চাকমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের, সভপতি অংগ্য মারমা ও ইউনাইটেড ওয়ার্কার্স ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের সভাপতি সচিব চাকমা। টালবাহানা বন্ধ করে অবিলম্বে মাইকেল চাকমাকে সন্ধানের দাবি জানান নেতৃবৃন্দ।
উল্লেখ্য, মাইকেল চাকমা ৯ এপ্রিল ২০১৯ কাঁচপুর থেকে ঢাকায় যাওয়ার পথে নিখোঁজ হন । নিখোঁজের পর ১৬ এপ্রিল মাইকেল চাকমার আত্মীয় ধনক্ষ চাকমা সোনারগাঁ থানায় জিডি করেন। এর পর তিনি ১৯ এপ্রিল উক্ত থানায় জিডি করেন। জিডির নম্বর ৭৭২ হিসেবেও ধনক্ষ চাকমাকে জানানো হয়। কিন্তু জিডির রিসিভড কপি চাইলে পরবর্তীতে দেয়া হবে বলে সেদিন ধনক্ষ চাকমাসহ দু’জনকে পুলিশ ফিরিয়ে দেয়। পরে রিসিভড কপি আনতে থানায় গেলে পুলিশ জিডির বিষয়টি অস্বীকার করে এবং আবার জিডি করতে চাইলেও আর জিডি নেয়নি। ১৩ মে মাইকেল চাকমার বড় বোন সুভদ্রা চাকমা হাইকোর্টে মাইকেল চাকমাকে সন্ধানের নির্দেশনা চেয়ে রিট করেন। তার রিটের প্রেক্ষিতে গত ৪ নভেম্বর ’১৯ হাইকোর্ট পূর্বেকার ধনক্ষ চাকমা কর্তৃক দায়েরকৃত অভিযোগকে জিডি নথিভুক্ত করে সেই ভিত্তিতে তদন্তপূর্বক উক্ত রিপোর্ট বিজ্ঞ ম্যাজিষ্ট্রেটের নিকট পেশের নির্দেশনা দিয়ে রিট পিটিশনটি নিষ্পত্তি করেন। হাইকোর্টের নির্দেশনার পর চার সংগঠনের পক্ষ থেকে জিডি করার জন্য ২ বার থানায় গেলেও নির্দেশনা অফিসিয়ালি আসেনি এমন অজুহাতে জিডি নেয়া হয়নি। সর্বশেষ নির্দেশনা অফিসিয়ালিভাবে থানায় পৌঁছালে জিডি করার লক্ষে ও মাইকেল চাকমার সন্ধানের অগ্রগতি জানতে উপরোক্ত প্রতিনিধি টীম আজ সোনারগাঁ থানায় গেলে পুলিশ পূর্বে জিডি হয়েছে বলে স্বীকার করে।
পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের দপ্তর সম্পাদক রজেন্টু চাকমা স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।