সারাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার প্রতিবাদে খাগড়াছড়িতে ইউপিডিএফের বিক্ষোভ

‘কুমিল্লা-রংপুরের পীরগঞ্জে হামলার পুনরাবৃত্তি বরদাস্ত করব না’ এই শ্লোগানে সারাদেশে সংখ্যালঘু জাতি ও জনগণের ওপর হামলার প্রতিবাদে খাগড়াছড়িতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে ইউনাইটেড পিপলস্ ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) খাগড়াছড়ি সদর ইউনিট।

আজ শনিবার (২৩ অক্টোবর ২০২১) সকাল ৯ টার সময় খাগড়াছড়ি সদর এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল পরবর্তী অনুষ্ঠিত সমাবেশে জুনেট চাকমার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন ইউনাইটেড পিপলস্ ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)-এর খাগড়াছড়ি সদর ইউনিটের সংগঠক প্রকাশ চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশন খাগড়াছড়ি জেলার আহ্বায়ক এন্টি চাকমা ও জনপ্রতিনিধি মঞ্জু নারায়ণ ত্রিপুরা প্রমুখ।

‘হামলা-লুটপাট ও বাস্তুভিটা দখলের মাধ্যমে দেশছাড়া করার ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান, প্রতিরোধ গড়ে তুলুন’ এই আহ্বানে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তারা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘু জাতিগুলো আজ কোনভাবে নিরাপদ নয়। রাষ্ট্রীয় ও সরকারি পৃষ্টপোষকতায় এদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা-নিপীড়ন নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। শাসকগোষ্ঠীর উগ্রসাম্প্রদায়িক নীতির কারণে সামান্য ইস্যুতেই ধর্মান্ধ মৌলবাদী গোষ্ঠী এদেশের সংখ্যালঘুদের ওপর বার বার সাম্প্রদায়িক হামলা চালানোর সাহস পাচ্ছে।

বক্তারা আরো বলেন, বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার মুখে অসাম্প্রদায়িকতার কথা বললেও বাস্তবে তা দেখা যায় না। সম্প্রতি কুমিল্লা, নোয়াখালীর চৌমুহনী, রংপুরের পীরগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সপ্তাহখানিক ধরে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের দুর্গাপূর্জামন্ডপ, মন্দির, ঘরবাড়িতে হামলা, অগ্নিসংযোগ, লুটপাটের যে বর্বর ঘটনা ঘটছে তাতেই প্রমাণ হয় সরকার কতটা নির্লিপ্ত ছিল। সরকার পদক্ষেপ নিলে এমন হামলার ঘটনা নিশ্চয় ঘটতো না। শুধু তাই নয়, রামুতে বৌদ্ধ বিহার-পল্লীতে হামলা, নাসিরগরে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা, গাইবান্ধায় সাঁওতাল পল্লীতে হামলাসহ পার্বত্য চট্টগ্রামে ডজনের অধিক গণহত্যা ও অসংখ্য সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা ঘটলেও সরকার তথা শাসকগোষ্ঠী কোন ঘটনারই বিচার করেনি, ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়নি। উপরন্তু হামলাকারীদেরই সরকার পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে যাচ্ছে।

বক্তারা বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে দেশে সংখ্যালঘু জাতি ও জনগণের ওপর নিপীড়নের মাত্রা অধিক হওয়ার কারণে অনেকে দেশত্যাগ করতে বাধ্য হচ্ছেন। ফ্যাসিস্ট সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামেও জুম্ম জনগণের অস্তিত্বকে বিলীন করে দিতে প্রতিনিয়ত খুন, গুম, নারী ধর্ষণ, অন্যায় ধরপাকড়, ভুমি বেদখল-উচ্ছেদের মতো ঘটনা ঘটাচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণের ন্যায্য আন্দোলন দমনে অবর্ণনীয় নিপীড়ন-নির্যাতন জারি রেখেছে।

বক্তারা প্রশ্ন রেখে বলেন, বাংলাদেশ যদি সত্যিকার অর্থে একটি অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট হয়ে থাকে তাহলে সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম আর উগ্রবাঙালি জাতীয়তাবাদ থাকেবে কেন? এটা কি এদেশে বসবাসকারী হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টানসহ অন্যান্য ধর্মাবলম্বী ও জাতিসত্তাগুলোর সাথে বৈষম্য নয়?

বক্তারা অবিলম্বে সারাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর সাম্প্রদায়িক হামলায় জড়িত ও তাদের মদদদাতাদের গ্রেফতারপূর্বক যথোপযুক্ত বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি, ক্ষতিগ্রস্তদের ন্যায্য ক্ষতিপূরণ প্রদান এবং ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যাঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জোর দাবি জানান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *