সকল জাতিসত্তার মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষার দাবিতে চট্টগ্রামে পিসিপি’র বিক্ষোভ

‘বহুজাতির ও বহু ভাষা-ভাষীর দেশ বাংলাদেশে সকল জাতির ও ভাষার স্বীকৃতি চাই’ এই স্লোগানে ‘কেবল ৫টি জাতিসত্তার মাতৃভাষায় শিক্ষা নয়, সকল জাতিসত্তার মাতৃভাষায় শিক্ষা চালুসহ পিসিপি’র শিক্ষা সংক্রান্ত ৫ দফা বাস্তবায়নের’ দাবিতে চট্টগ্রামে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও মহানগর শাখা।

আজ বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) বিকেল সাড়ে ৩টায় ডিসি হিল মোড় সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি প্রেসক্লাব এলাকা প্রদক্ষিণ করে চেরাগী মোড় সামনে সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়।
সমাবেশে পিসিপি’র চট্টগ্রাম মহানগর শাখা সাধারণ সম্পাদক অমিত চাকমার সভাপতিত্বে ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক মিটন চাকমার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন,পিসিপি’র কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি অনিল চাকমা, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা তথ্য ও প্রচার সম্পাদক রোনাল চাকমা। এছাড়া সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন, হিল উইমেন্স ফেডারেশন কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মন্টি চাকমা, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন মহানগর নেতা কাজী আরমান প্রমুখ।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, পিসিপি ২০০০ সালে অপরাপর ৫টি জাতিসত্তার ছাত্র সংগঠনকে সাথে নিয়ে সকল জাতিসত্তার মাতৃভাষায় শিক্ষার দাবিতে আন্দোলন সূচনা করে এবং এ বিষয়ে একটা প্রচারপত্র বের করে। এরপর শিক্ষা সংক্রান্ত ৫ দফা দাবিতে তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী ও ২০০৩ সালের ১৯ শে ফেব্রুয়ারি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বরাবরে স্মারকলিপি পেশ করে। সে বছর প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে ‘‘দাবিগুলো যৌক্তিক’’ অভিহিত করে বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে চিঠি প্রেরণ করা হলেও বিএনপি সরকার তার মেয়াদে আর বাস্তবায়ন করেনি।
এরপর থেকে মাতৃভাষায় শিক্ষার দাবিতে পিসিপি বহু মিছিল-সমাবেশ, স্মারকলিপি পেশ, ছাত্র ধর্মঘট, ক্লাশ বয়কট, সংখ্যালঘু জাতির মাতৃভাষায় প্রতিকী ক্লাশ অনুষ্ঠান, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে অংশগ্রহণ থেকে বিরতিসহ নানান কর্মসূচী পালন করে। ২০১১ সালে পার্বত্য চট্টগ্রামে ছাত্র ধর্মঘট পালনের দিন বিবিসির সাক্ষাতকারে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ পিসিপি’র দাবির যৌক্তিকতা মেনে নেন এবং তা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হবে বলে প্রতিশ্রুতি দেন। এরপর ২০১৩ সালে সরকারের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয় প্রাথমিকভাবে পাহাড় ও সমতলের ৬টি জাতির মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষা চালু করা হবে এবং তারই ধারাবাহিকতায় ২০১৭ সাল থেকে প্রাক-প্রাথমিক স্তরে চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, মনিপুরী ও গারো এই ৫টি ভাষায় বই রচনা করা হয়। সান্তালদের বর্ণমালা নির্ধারণ নিয়ে মত পার্থক্য থাকার কারণে বই ছাপানোর কাজ পিছিয়ে যায়।

বক্তারা আরো বলেন, ৫টি জাতিসত্তার মাতৃভাষায় বই রচনা করলেও চরম সমন্বয়হীনতা ও অব্যবস্থাপনার কারণে এই মহতী উদ্যোগটি ততটা সাফল্যের মুখ দেখেনি। মাতৃভাষায় শিক্ষাদানকারী পর্যাপ্ত প্রশিক্ষিত শিক্ষক ও যথোপযুক্ত ব্যবস্থাপনার অভাবে মাতৃভাষায় শিক্ষার কাজ বই-পুস্তক রচনা ও সরবরাহের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। উপরন্তু ৪৫ টির অধিক বিভিন্ন জাতিসত্তাদের মধ্য থেকে মাত্র ৫টি ভাষায় বই রচনা করা হলেও বাকি ভাষাগুলো বই ছাপানোর কোনো উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না।
বক্তারা দ্রুত সকল জাতিসত্তার মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষা চালুর পাশাপাশি সাংবিধানিকভাবে ভাষাগুলোর স্বীকৃতি এবং এসব বৈচিত্র্যময় ভাষাগুলো সংরক্ষণের জন্য ‘‘জাতিসত্তাসমূহের ভাষা একাডেমী’’ গঠনের দাবি জানান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *