লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজের লিজ বাতিল ও ম্রো-ত্রিপুরাদের ৪০০ একর ভূমি রক্ষার দাবি

চট্টগ্রামে সচেতন নাগরিক সমাজের বিক্ষোভ সমাবেশ

নিজস্ব প্রতিনিধি।। অবিলম্বে লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজের অবৈধ লিজ বাতিল করে ম্রো ও ত্রিপুরাদের ৪০০ একর ভূমি রক্ষার দাবি জানিয়েছে চট্টগ্রামস্থ সচেতন নাগরিক সমাজ।

আজ শুক্রবার (৩০ সেপ্টেম্বর ২০২২) বিকাল ৪টায় চট্টগ্রাম নগরীর চেরাগী পাহাড় মোড়ে সচেতন নাগরিক সমাজের আয়োজিত এক বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তারা এ দাবি জানান। সমাবেশের আগে ডিসি হিল থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি প্রেসক্লাব এলাকা প্রদক্ষিণ করে চেরাগী পাহাড় মোড়ে এসে সমাবেশে মিলিত হয়।

বান্দবান লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড-এর শেয়ার হোল্ডার সাবেক সচিব কামাল উদ্দিন, পিএসসি’র সাবেক চেয়ারম্যান এসএম আল হোসাইনী, সাবেক মুখ্য সচিব কেএম রাব্বানী, ক্যাপ্টেন (অবঃ) হাবিব-ই রাব্বানী, পূবালী ব্যাংকের সাবেক এমডি রফিকুল করিম গং কর্তৃক ম্রো ও ত্রিপুরাদের ৪০০ একর জুম ভূমি জবরদখল, কলাগাছ কর্তন ও স্কুল নির্মানের বাধা নিষেধ-এর প্রতিবাদে এবং মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও ঝিরিতে বিষ প্রযোগকারীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে উক্ত বিক্ষোভের আয়োজন করা হয়।

সমাবেশে চট্টগ্রামস্থ সচেতন নাগরিক সমাজের আহ্বায়ক এডভোকেট ভূলন ভৌমিকের সভাপতিত্বে ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) চট্টগ্রাম নগর সাধারণ সম্পাদক অমিত চাকমার সঞ্চালনায় অন্যান্যদের মধ্যে  বক্তব্য রাখেন,  বাংলাদেশের সাম্যবাদী আন্দোলন চট্টগ্রাম মহানগরের সমন্বয়ক সত্যজিৎ বিশ্বাস, নিপিড়ন  বিরোধী  আইনজীবী  মঞ্চের  যুগ্ম আহব্বায়ক  বিষুময় দেব, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল চট্টগ্রাম  মহানগরের সদস্য সচিব এডভোকেট  আমির আব্বাস(তাপু), লামা সরই  ভূমি রক্ষা সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক রংধজন ত্রিপুরা, বাংলাদেশ ত্রিপুরা শ্রমিক সংসদ চট্টগ্রামের প্রতিনিধি পরেশ ত্রিপুরা প্রমুখ।

এডভোকেট ভূলন ভৌমিক বলেন, আপনার জেলায় বা এলাকায় রোহিঙ্গা সংখ্যা বৃদ্ধি হলে সংখ্যালঘুতে পরিণত হওয়ার ভয়ে ভীত হয়ে আপনাদের গা জ্বললে, পাহাড়িদের জায়গায় রোহিঙ্গাদের ভূমিকা নিয়ে থাকলে পাহাড়িদেরও গা জ্বলবে। তিনি আরো বলেন, দেশে  আর জনগণের কোন কর্তৃত্ব নেই। আমলা, সামরিক, বেসামরিক, ব্যবসায়ীসহ মাফিয়াদের চক্র দেশ চালাচ্ছে। লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড-এর  কামাল উদ্দিন, পিএসসি সাবেক চেয়ারম্যান, এসএম আল হোসাইনী, সাবেক মূখ্য সচিব, কেএম রাব্বানী, পূবালী ব্যাংকের সাবেক এমডি রফিকুল করিম গং ও মাফিয়াদের চক্রের ভূমিকা পালন করেছে। সুতরাং এর থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে ভূমি দস্যুদের বিরুদ্ধে লড়াই সংগ্রাম অব্যাহত রাখতে হবে। 

সমাবেশে লামা সরই ভূমি রক্ষা সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক রংধজন ত্রিপুরা বলেন, কি সেলুকাস  একটা দেশে আমরা বসাবাস করছি, যে পুলিশ বাহিনী সাধারণ মানুষের জানমাল নিরাপত্তার দায়িত্ব নিয়েছেন, সেই পুলিশ  বাহিনী আজ ভূমিদস্যুদের বাঁচাতে মাঠে নেমেছে। নিজের বাস্তুভিটা বাঁচাতে  আমরা দীর্ঘ ৬ মাস ধরে রাজপথে  আছি। নিজের বাস্তুভিটা রক্ষা করতে গিয়ে আমাদের বিরুদ্ধে আজ পর্যন্ত ৪টি ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।

তিনি লামা প্রশাসনের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে আরো বলেন, আপনারা লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের রক্ষায় তথা ভূমি দস্যুদের পক্ষাবলম্বন করে আমাদেরকে নিজ বাস্তুভিটা থেকে উচ্ছেদের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। আপনাদেরও পরিবার সমাজ আছে, আমাদের মত পরিস্থিতির শিকার হলে আপনারাও অসহায়ত্ব বোধ করতেন। সুতরাং যতক্ষণ পর্যন্ত ৪০০ একর জুমভূমি রক্ষার দাবি আদায় হবে না ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা রাজপথে থাকব।

বক্তারা অবিলম্বে লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজের অবৈধ লিজ বাতিলপূর্বক ম্রো ও ত্রিপুরাদের ৪০০ একর জুমভূমি রক্ষা করা, গ্রামবাসীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত সকল মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং কলাইয়া ঝিরিতে বিষ প্রয়োগ করে ম্রোদের হত্যার চেষ্টা ও কলাগাছ কেটে দেয়ার ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় এনে যথাযথ বিচারের দাবি জানান।

উল্লেখ্য, যে, গত ৯ এপ্রিল ভূসিদস্যুরা ২০০ জনের অধিক রোহিঙ্গা ভাড়া নিয়ে ম্রো এবং ত্রিপুরাদের জুম ভূমিতে কলাগাছ, আমগাছ, আনারসসহ বিভিন্ন গাছ কেটে ফেলে এবং ২৬ এপ্রিল পুড়িয়ে ফেলে। ১০ আগস্ট ভূমি বেদখলকারীরা রেংইয়েন কার্বারী পাড়াস্থ অশোক বৌদ্ধ বিহারে হামলা ও ভাঙচুর ও ১ সেপ্টেম্বর স্থানীয় ম্রোদের ক্ষেত থেকে ২৫ মণ মিস্টি কুমড়া চুরি করে। ৬ সেপ্টেম্বর কোম্পানির শ্রমিকরা একটি রেংয়েন ম্রো পাড়ার কলাইয়া ঝিরির পানিতে কীটনাশক (বিষ) ছিটিয়ে পানি বিষাক্ত করে দেয় এবং ২৪ সেপ্টেম্বর ম্রোদের ৩০০ কলা গাছ কেটে দেয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *