লামায় ম্রো-ত্রিপুরাদের জমি বেদখলের ষড়যন্ত্র বন্ধসহ বিভিন্ন দাবিতে পানছড়ির তিন স্থানে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন

নিজস্ব প্রতিনিধি।। লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ কর্তৃক ম্রো-ত্রিপুরাদের ৪০০ একর জমি বেদখলের ষড়যন্ত্র বন্ধ করা, রেংয়েন ম্রো পাড়াবাসীদের কলাবাগান ধ্বংস ও স্কুল নির্মাণে বাধা প্রদান, পার্বত্য চট্টগ্রামে বেদখলকৃত ভূমি ফেরতদান, সেটলারদের সমতলে পুর্নবাসন, ভারত প্রত্যাগত শরণার্থী ও অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তুদের নিজ জমিতে পুর্নবাসন ও ক্ষতিপূরণ প্রদান এবং ভূমি বেদখল বন্ধের দাবিতে খাগড়াছড়ির পানছড়ি উপজেলার তিন স্থানে বিক্ষোভ মিছিল ও মানবন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) পানছড়ি ইউনিট।

আজ বুধবার (২৮ সেপ্টেম্বর ২০২২) দুপুর ১২টার সময় মরাটিলা, মনিপুর ও পানছড়ি সদর ইউনিয়নের বড়কোণা এলাকায় পৃথকভাবে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়।

মরাটিলা এলাকায় অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে ইউপিডিএফ’র মরাটিলা এলাকার সংগঠক স্বাধীন চাকমা’র সভাপতিত্বে ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের পানছড়ি উপজেলা সাংগঠনিক সম্পাদক রিপন ত্রিপুরার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন, বাদশা কুমার কার্বারী, রাচাই মার্মা (কার্বারী), ইউপি সদস্য শান্তি কুমার ত্রিপুরা, মহিলা কার্বারী বিরো বালা ত্রিপুরা সাবেক মেম্বার শান্তি ত্রিপুরা। 

চেঙ্গী ইউনিয়নের মনিপুর এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল চলাকালে পানছড়ি হতে মুখোশ দুর্বৃত্তদের সাথে নিয়ে একদল সেনা সদস্য এসে বাধা প্রদান ও জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করলে মিছিলটি ছত্রভঙ্গ হয়। মিছিল শুরুর আগে ঐ স্থানে বিজিবি সদস্যরা অবস্থান করছিলেন।

পানছড়ি সদর ইউনিয়নের বড়কোণা এলাকায় অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ সমাবেশে ইউপিডিএফ প্রতিনিধি সুমন ত্রিপুরার সভাপতিত্বে ও পিসিপি’র পানছড়ি থানা শাখার সাধারণ সম্পাদক সুনীল চাকমা’র সঞ্চালনায়ও বক্তব্য রাখেন, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের খাগড়াছড়ি জেলা কমিটি সভাপতি ক্যামরন চাকমা, ইউপি সদস্য সুভাষ প্রীতি চাকমা ও কলঞ্জয় ত্রিপুরা প্রমুখ।

বক্তারা বলেন,১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হলেও পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ি জনগণের উপর নিপীড়ন-নির্যাতন বন্ধ হয়নি। বাংলাদেশের সংবিধানে পাহাড়িদের প্রথাগত ভূমি অধিকারের স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। ফলে নামে-বেনামে কখনো উন্নয়ন, রাস্তা-ঘাট নির্মাণ, কখনো পর্যটন কেন্দ্র স্থাপন, কখনো রাষ্ট্রীয় বাহিনীর ক্যাম্প সম্প্রসারণ, কখনো সেটলার লেলিয়ে দিয়ে, কখনো রারার কোম্পানিসহ বিভিন্ন কোম্পানির নামে পাহাড়িদের ভূমি বেদখল করা হচ্ছে। এখন পরিত্যক্ত সেনাক্যাম্পে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন মোতায়েনে নামে সরকার ভূমি বেদখলের আরেক নতুন কৌশল হাতে নিয়েছে। শুধু তাই নয়, একই সাথে ইসলামী সম্প্রসারণের লক্ষ্যে সাজেকের মতো পাহাড়ি অধ্যুষিত এলাকায় মসজিদ নির্মাণ করা হচ্ছে, বান্দরবানে ছোট ছোট পাহাড়ি শিশুদের নানা প্রলোভনে ফেলে ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত করা হচ্ছে বলেও বক্তারা অভিযোগ করেন।

বক্তারা বলেন, ‘৮৬ সালে পার্বত্য চট্টগ্রামে গণহত্যাসহ সরকারের নিষ্ঠুর দমন-পীড়নের কারণে হাজার হাজার পাহাড়ি ভারতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছিল। পরবর্তীতে তাদের জায়গা-জমি সেটলার কর্তৃক বেদখল করা হয়। সেসব জমি এখনো সেটলারদের দখলে রয়েছে। সরকারের সাথে চুক্তি মোতাবেক ভারতে আশ্রিত জুম্ম শরণার্থীরা দেশে ফিরে আসলেও তারা এখনো তাদের জায়গা-জমি ফিরে পাননি, যেতে পারেননি তাদের বসতভিটায়।

বক্তারা আরো বলেন, ৮০’র দশকে ৪ লক্ষাধিক সেটেলার বাঙালিকে পার্বত্য চট্টগ্রামে অনুপ্রবেশ করিয়ে তাদেরকে পাহাড়িদের জায়গায় পুনর্বাসনের ফলে ভুমি সমস্যা জটিল আকার ধারণ করেছে। সরকার এইসব লক্ষ লক্ষ সেটলারদের রেশন সুবিধা দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে বহাল রেখে ভূমি বেদখল, গণহত্যা, সাম্প্রদায়িক হামলা, নারী ধর্ষণসহ নানা অরাজকতা সৃষ্টি করে চলেছে। তাই যতদিন সেটলাররা পার্বত্য চট্টগ্রামে থাকবে ততদিন এই অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে না বলে বক্তারা মন্তব্য করেন।

বক্তারা সাম্প্রতিক সময়ে বান্দরবানের লামায় লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড কর্তৃক সেখানকার তিন পাড়ার ম্রো ও ত্রিপুরা বাসিন্দাদের ৪০০ একর জুমভূমি বেদখলের ষড়যন্ত্র বন্ধ করার দাবি জানান। তারা বলেন, ম্রো ও ত্রিপুরা বাসিন্দাদের সেখান থেকে উচ্ছেদের লক্ষ্যে রাবার কোম্পানির দুর্বৃত্তরা জুমভূমি, বাগান-বাগিচা পুড়িয়ে দেওয়া, পানিতে বিষ প্রয়োগ, হামলা, মামলা, স্কুল নির্মাণে বাধাদান, কলাবাগান কেটে ধ্বংস করে দেয়াসহ এমন কোন হীন কাজ নেই তারা করে যাচ্ছে। কিন্তু প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের পরিবর্তে উল্টো তাাদের পক্ষেই কাজ করে যাচ্ছে।

বক্তারা পার্বত্য চট্টগ্রামে ভূমি বেদখলসহ রাষ্ট্রীয় দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিবাদ-প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান।

সমাবেশ ও মানববন্ধন থেকে বক্তারা অবিলম্বে পাহাড়িদের প্রথাগত ভূমি অধিকারের স্বীকৃতিপূর্বক পার্বত্য চট্টগ্রামে বেদখলকৃত ভূমি ফিরিয়ে দেয়া, ভূমি বেদখল ও বেদখলের ষড়যন্ত্র বন্ধ করা, সেটলার বাঙালিদের পার্বত্য চট্টগ্রামের বাইরে সমতলে পুনর্বাসন করা, ভারত প্রত্যাগত শরণার্থী ও অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তুদের নিজ জমিতে যথাযথ পুনর্বাসন করা এবং লামায় ম্রো ও ত্রিপুরা জাতিসত্তাদের জমি বেদখলের ষড়যন্ত্র বন্ধ করার জন্য রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ’র লিজ বাতিল করার দাবি জানান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *