নিজস্ব প্রতিনিধি।। খাগড়াছড়ির মানিকছড়িতে ইউপিডিএফের স্থানীয় ইউনিটের উদ্যোগে পার্বত্য চট্টগ্রামে বেদখলকৃত ভূমি ফেরত দান, সেটলারদের সমতলে পুনর্বাসন, ভারত প্রত্যাগত শরণার্থী ও অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তুদের নিজ জমিতে পুনর্বাসন ও ক্ষতিপূরণ প্রদান এবং ভূমি বেদখল বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আজ বুধবার (২৮ সেপ্টেম্বর ২০২২) সকাল ১০টায় মানিকছড়ি উপজেলা সদরের জামতলা নামক স্থানে এই বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
মিছিল পরবর্তী অনুষ্ঠিত সমাবেশে ইউপিডিএফ’র মানিকছড়ি ইউনিটের সংগঠক বরুণ চাকমার সভাপতিত্বে ও অংচিং মারমার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) এর মানিকছড়ি থানা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক ঈশান মারমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের মানিকছড়ি উপজেলা শাখার সভাপতি অংচাই রোয়াজা, পিসিপি’র খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সদস্য অংসালা মারমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের মানিকছড়ি থানা শাখার আহ্বায়ক আনু মারমা এবং এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন রে¤্রা পাড়ার কার্বারী রাসাই মারমা, আগা ওয়াকছড়ি পাড়ার কার্বারী সুইজাই মারমা ও মংনু মারমা।
সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে ইউপিডিএফ সংগঠক বরুণ চাকমা বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীনতার পর থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামে শাসকগোষ্ঠি পাহাড়িদের ওপর দমননীতি জারি রেখেছে। দীর্ঘ ৫০ বছর ধরে এদেশের শাসকগোষ্ঠি ভূমি বেদখল, উচ্ছেদ, গণহত্যা, সাম্প্রদায়িক হামলাসহ পাহাড়িদের ওপর নানা নিপীড়ন চালিয়ে যাচ্ছে। লক্ষ লক্ষ সেটলার বাঙালিকে অনুপ্রবেশ করিয়ে তাদের হাতে অবৈধভাবে জমির দলিলপত্র দিয়ে একের পর এক পাহাড়িদের জায়গা-জমি বেদখল করা হচ্ছে। যার ফলে পাহাড়িরা এখন স্বাধীন দেশে পরবাসীর মতো জীবন যাপন করতে বাধ্য হচ্ছেন।
তিনি আরো বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে আমাদের টিকে থাকতে হলে জাতিকে রক্ষা করতে হবে। জাতি রক্ষা না হলে ধর্মও রক্ষা হবে না। তাই আমাদের জাত রক্ষার জন্য রাজনৈতিকভাবে সচেতন হতে হবে এবং শাসকগোষ্ঠির অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।
পিসিপি নেতা ঈশান মারমা পার্বত্য চট্টগ্রামে সেটলার বাঙালি অনুপ্রবেশ অব্যাহত রয়েছে উল্লেখ করে বলেন, সরকার সেটলার বাঙালিদের রেশন, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ নানা সুযোগ-সুবিধা দিয়ে প্রতিনিয়ত তাদেরকে পার্বত্য চট্টগ্রামে অনুপ্রবেশ করাচ্ছে। যার ফলে পার্বত্য চট্টগ্রামে সেটলারদের সংখ্যা দ্রুতগতিতে বেড়ে যাচ্ছে। আর তার সাথে সাথে ভূমি বেদখলও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
তিনি পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি ও অস্তিত্ব রক্ষায় ছাত্র সমাজকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
যুব নেতা অংচাই রোয়াজা বলেন, মানিকছড়িসহ সমগ্র পার্বত্য চট্টগ্রামে আজ ভূমি বেদখলের মহোৎসব চলছে। বান্দরবানের লামায় রাবার কোম্পানি কর্তৃক ম্রো ও ত্রিপুরা জাতিসত্তাদের ৪০০ একর জুমভূমি বেদখল চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। সরকার ও ভূমিদস্যুরা যোগসাজশে নিজ ভূমি ও বসতভিটা থেকে পাহাড়িদের উচ্ছেদ করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে।
তিনি বলেন, ১৯৯৭ সালে সরকার ও জনসংহতি সমিতির মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তির পর থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামে ভূমি আগ্রাসন বেড়ে চলছে। ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য সরকার ভূমি কমিশন গঠন করলেও দীর্ঘ দুই যুগেও এই কমিশন ভূমি সমস্যা সমাধানে কার্যকর কোন উদ্যোগ নিতে পারেনি। ফলে ভারত প্রত্যাগত পাহাড়ি শরণার্থী ও পার্বত্য চট্টগ্রামে অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তুরা তাদের নিজ জমি ফিরে পায়নি।
পিসিপি জেলা শাখার সদস্য অংসালা মারমা বলেন, পাহাড়িদের অস্তিত্ব ধ্বংস করে দেয়ার লক্ষ্যেই সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামে ভূমি বেদখলের ষড়যন্ত্র করছে। আমরা এমন একটি রাষ্ট্রে বাস করছি যেই রাষ্ট্রে পাহাড়িদের কোন অধিকার নেই।
তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এ দেশের সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষ চায় না, শুধু ভূমি চায়। সেজন্য তারা নানা আইন-কানুনের বলে পাহাড়িদের কাছ থেকে ভূমি কেড়ে নেয়, তাদেরকে বিতাড়িত করে। সরকারের এই ভূমি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান তিনি।
হিল উইমেন্স ফেডারেশনের নেত্রী আনু মারমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে ভূমি যেমন জবরদখল চলছে, একইভাবে নারীর ওপরও সহিংসতা চলছে। এখানে নিয়োজিত রাষ্ট্রীয় বাহিনীগুলোর ভূমিকা পাহাড়ি বিদ্বেষী হওয়ার কারণে পাহাড়িরা সবক্ষেত্রে আজ নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন। তিনি ভূমি বেদখল, নারী নির্যাতনসহ সকল অন্যায়-অবিচার বন্ধের দাবি জানান।
সমাবেশ থেকে অবিলম্বে ভূমি বেদখল বন্ধে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা, বেদখলকৃত সকল ভূমি ফিরিয়ে দেওয়া, ভারত প্রত্যাগত শরণার্থী ও অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তুদের নিজ জমিতে যথাযথ পুনর্বাসন করা, সেটলার বাঙালিদের পার্বত্য চট্টগ্রামের সমতলে পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেয়া ও তাদেরকে দেওয়া অবৈধ কবলিয়ত বাতিল করা এবং পাহাড়িদের প্রাগত ভূমি আইনের স্বীকৃতি দেয়ার দাবি জানান।