
খাগড়াছড়ির মানিকছড়িতে গত ২৫ সেপ্টেম্বর মানিকছড়ি কলেজিয়েট উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীতে পড়ুয়া পাহাড়ি ছাত্রীকে ধর্ষণ চেষ্টা ও ছুরিকাঘাত করে জখম করার ঘটনার আসামি আটক মো. হোসেন আলীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন করেছেন শিক্ষার্থীরা।
আজ বৃস্পতিবার (৩০ সেপ্টেম্বর ২০২১) সকালে ‘পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারা দেশে নারী-শিশু নির্যাতন, ধর্ষণ ও যৌন হয়রানি বন্ধ কর‘ শ্লোগানে মানিকছড়ির সর্বস্তরের শিক্ষার্থীবৃন্দের ব্যানারে মানিকছড়ি কলেজিয়েট উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে এ মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা।
মানববন্ধনে মানিকছড়ি গিরিমৈত্রী কলেজের ছাত্র নয়ন চাকমার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন মানিকছড়ি গিরি মৈত্রী কলেজের শিক্ষার্থী অংহ্লাচিং মারমা, এনুচিং মারমা, রাম্রাচাই মারমা, মৃদুল ত্রিপুরা, ফটিকছড়ি কলেজের অনার্স ৩য় বর্ষের ছাত্র মংহ্লাপ্রু মারমা, মানিকছড়ি কলেজিয়েট উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র অংচাহ্লা মারমা প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, গত কয়েকদিনে পার্বত্য চট্টগ্রামে বেশ কয়েকটি ধর্ষণ, ধর্ষণ চেষ্টা ও যৌন হয়রানির ঘটনা ঘটেছে। অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়ায় এমন ঘটনা বার বার ঘটছে বলে বক্তারা অভিযোগ করেন।

বক্তারা বলেন, রাষ্ট্র, প্রশাসনের ছত্রছায়া ও আইনের দুর্বলতার কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারাদেশে ধর্ষণ, নির্যাতন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বক্তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ছাত্রীকে ধর্ষণ চেষ্টাকারী মো. হোসেন আলীকে এলাকাবাসী আটক করে থানায় নিয়ে আসলেও পুলিশ মামলা নিতে গড়িমসি করেছে। সর্বশেষ শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদের মুখে মামলা নিলেও তার বিরুদ্ধে নারী নির্যাতন আইনে মামলা রুজু করা হয়নি।
বক্তারা মো. হোসেন আলীর সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেন এবং যদি সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়া না হয় তাহলে আবারো রাজপথে নামার হুঁশিয়ারি দেন। তারা নারী নির্যাতন বন্ধে কঠোর আইন প্রয়োগেরও দাবি জানান।
এদিকে, মানববন্ধন চলার মাঝখানে পুলিশ শিক্ষার্থীদের বাধা দেয়ার চেষ্টা করে। এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘বাধা দিয়ে আন্দোলন বন্ধ করা যাবে না’, ‘ছাত্রী ধর্ষণ চেষ্টাকারীর ফাঁসি চাই ফাঁসি চাই’ ইত্যাদি শ্লোগান দেন।
পরে পুলিশ মানববন্ধন শেষ করতে নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দিলে শিক্ষার্থীরা উক্ত সময়ের মধ্যে মানববন্ধন কর্মসূচি শেষ করেন। আর এর পরপরই পুলিশ শিক্ষার্থীদেরকে ব্যানার গুটিয়ে সেখান চলে যেতে বলে।
উল্লেখ্য, গত ২৫ সেপ্টেম্বর দুপুর ১টার সময় মানিকছড়ি কলেজিয়েট উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীতে পড়ুয়া ওই ছাত্রী স্কুল থেকে নিজ বাড়ি মরাডলু গ্রামে ফেরার পথে কর্ণেল বাগান নামক স্থানে একা পেয়ে মো. হোসেন আলী (৩০) তাকে জোরপূর্বক ধর্ষণের চেষ্টা করে। এ সময় ধস্তাধস্তি ও হাতে কামড় দিয়ে ওই স্কুলছাত্রী পালিয়ে যাওয়ার সময় হোসেন আলী তাকে ছুরি দিয়ে আঘাত করে। এতে সামান্য জখম হওয়া সত্ত্বেও ভুক্তভোগী ছাত্রী কোন রকম সেখান থেকে পালিয়ে নিজেকে রক্ষা করেন এবং বাড়িতে গিয়ে বাবা-মাকে ঘটনাটি জানায়। এরপর স্থানীয়দের সহযোগিতায় ওই ছাত্রীকে হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা করানো হয়।

ঘটনার দিনই ছাত্রীর বাবা মানিকছড়ি থানায় একটি অভিযোগ দাখিল করেন। কিন্তু পুলিশ অপরাধীকে গ্রেফতারে কোন পদক্ষেপ না নিলে পরে ২৭ সেপ্টেম্বর সকালে স্থানীয় এলাকাবাসী ভুক্তভোগী ছাত্রীর বর্ণনা মতে মো.হোসেন আলীকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে। কিন্তু থানা কর্তৃপক্ষ মামলা নিতে নানা গড়িমসি করলে পরে গিরিমৈত্রী কলেজ ও কলেজিয়েট উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা থানার সামনে এসে জড়ো হন এবং মামলা নিতে চাপ সৃষ্টি করে।
এরপর পুলিশ মো. হোসেন আলীর বিরুদ্ধে ৩৪১, ৩৭৯, ৩০৭, ৫১০, ৩২৪ ধারায় একটি মামলা রুজু করে তাকে জেল হাজতে পাঠিয়ে দেয়। কিন্তু নারী নির্যাতন আইনে মামলা রুজু না করে কেন অন্য ধারায় মামলা দায়ের করা হলো তা নিয়ে এলাকাবাসী নানা সন্দেহ প্রকাশ করছেন। তারা মনে করছেন হোসেন আলীকে রক্ষা করতেই পুলিশ তার বিরুদ্ধে নারী নির্যাতন মামলা রুজু না করে অন্য মামলায় আটক দেখিয়েছে।