চট্টগ্রামে তিন সংগঠনের সংবাদ সম্মেলন : লামায় ক্ষতিগ্রস্ত ম্রো ও ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীদের রক্ষায় ৭ দফা দাবি

নিজস্ব প্রতিনিধি।। বান্দরবানের লামায় ‘রাবার কোম্পানি’ কর্তৃক ম্রো ও ত্রিপুরাদের জুমভূমি ও ফলদ বাগান পুড়িয়ে দেয়ার ঘটনায় চট্টগ্রামে সংবাদ সম্মেলন করেছে চট্টগ্রামস্থ সচেতন নাগরিক সমাজ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় জুম্ম শিক্ষার্থী পরিবার ও হিল কালচারাল ফোরাম। এতে ক্ষতিগ্রস্ত ম্রো ও ত্রিপুরাদের জুম চাষের ৪০০ একর ভূমি অবিলম্বে ফিরিয়ে দেয়াসহ ৭ দফা দাবি জানানো হয়েছে।

আজ মঙ্গলবার (২৪ মে ২০২২) বিকাল ৪ টায় চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের এস. রহমান হলরুমে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়েন ও সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দেন চট্টগ্রামস্থ নাগরিক সমাজের আহ্বায়ক এড. ভূলন লাল ভৌমিক। এতে আরও উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রামস্থ নাগরিক সমাজের সদস্য উচিংশৈ চাক শুভ, নিপীড়ন বিরোধী আইনজীবি মঞ্চের যুগ্ম সাধারণ সস্পাদক বিষুময় দে, হিল কালচারাল ফোরামের সভাপতি প্যাশন চাকমা ও নৃত্য বিষয়ক সম্পাদক খুশী চাকমা এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় জুম্ম শিক্ষার্থী পরিবারের সদস্য বিপুলী চাকমা প্রমুখ।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ১৯৯৩-৯৪ সালে লামা সরই ইউনিয়নে ডলুছড়ি ও সরই মৌজায় মোট ৬৪ জন ব্যক্তিকে ২৫ একর করে মোট ১ হাজার ৬শত একর রাবার চাষ করার জন্য ৪০ বছরের জন্য বান্দরবান জেলা প্রশাসন ইজারা প্রদান করেন। ইজারা চুক্তি অনুযায়ী ইজারাদারদের ২৮টি শর্ত দেয়া হয়। এর মধ্যে অন্যতম শর্ত হচ্ছে, ইজারা চুক্তির ১০ বছরের মধ্যে রাবার বাগান সৃজন না করলে আপনা-আপনি ইজারা বাতিল হয়ে যাবে। ব্যক্তির নামে ইজারা দেওয়া জমি হস্তান্তরযোগ্য নয়। কিন্তু ২৯ বছর পরে এসে লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড কর্তৃক ম্রো ও ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর ৪শত একর জুম ভূমি ও তাদের সৃজন করা ফলদ বাগান আগুনে পুড়িয়ে দিয়ে বেদখল করা হচ্ছে যা চরম আইন বহির্ভূত কাজ ও মানবাধিকার লঙ্ঘন।

আরও বলা হয়, ভূক্তভোগী গ্রামবাসীর অভিযোগ, কোম্পানীর আগুনে প্রায় লক্ষ লক্ষ বিভিন্ন ফলদ ও বনজ চারা, ৭ একর ধানি জমি ও প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো বাঁশের বাগান যেখান থেকে পাড়াবাসী অভাবের দিনে বাঁশ সংগ্রহ ও বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন আগুনে তা সম্পূর্ণরূপে ভষ্মিভূত হয়েছে। বিগত ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে আনুমানিক ১৭০-২০০ জন রোহিঙ্গা শ্রমিক দিয়ে ৪০০ একর বন কাটা হয়। তাদের সর্দারের নাম নুরু। অবৈধভাবে বন কাটা বাধা দিতে চাইলে কোম্পানী রোহিঙ্গা শ্রমিকদের দিয়ে ভয় দেখায়।এমনকি কোম্পানীর পক্ষ থেকে রোহিঙ্গাদের নির্দেশ দেয়া হয় যে, কোম্পানীর কাজে যে বাধা দেবে তাদের একটি মাথা শিরোচ্ছেদ করে নিয়ে আসতে পারলে নগদ ১ লক্ষ টাকা পুরস্কার দেয়া হবে।

তারপর গত ২৬ এপ্রিল জুম ভূমিতে আগুন দেয়া হয়। সে আগুনে জুম চাষের জমি, প্রাকৃতিক বন, ফলদ বাগান ও বাঁশ বাগান পুড়ে যাওয়ায় বন নির্ভর পাড়াবাসীর আয়ের উৎস সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। ফলে ৩টি পাড়ার মোট ৩৯টি পরিবার তীব্র খাদ্য সংকটে পড়ে। বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় এ বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে ৭ মে থেকে বিভিন্ন সংগঠন ও দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গ খাদ্য সামগ্রী নিয়ে তাদের পাশে দাঁড়ানোয় সাময়িক খাদ্যাভাব কেটে যায়। শুরুতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নামেমাত্র ত্রাণ বিতরণের উদ্যোগ নেয়া হয় বটে, কিন্তু দখলদার কোম্পানীর লোকজনের যোগসাজশে প্রশাসন ত্রাণ দিতে চাইলে পাড়াবাসী ঘৃণাভরে ত্রাণ প্রত্যাখ্যান করে।

ক্ষতিগ্রস্ত ম্রো ও ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীদের রক্ষা করতে সংবাদ সম্মেলন থেকে ৭ দফা দাবি জানানো হয়।

দাবিগুলো হল:
১. ম্রো ও ত্রিপুরাদের জুম চাষের ৪০০ একর ভূমি অবিলম্বে ফিরিয়ে দিতে হবে।
২. কোম্পানীর আগুনে ক্ষতিগ্রস্থ পাড়াবাসীর ফলদ-বনজ বাগান, ধানের খেত ও শ্মশানভূমির ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করে লামা ইন্ডাস্ট্রিজ কোম্পানী থেকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
৩. ক্ষতিগ্রস্থদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলা দ্রুত প্রত্যাহার করতে হবে।
৪. নিরীহ পাড়াবাসীর ভূমি দখলদারদের অবিলম্বে গ্রেফতার পূর্বক বিচার করতে হবে।
৫. ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলোকে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করতে বিভিন্ন ফলদ চারা বিতরণসহ প্রয়োজনীয় কৃষি সহযোগিতা প্রদান করতে হবে।
৬. কোম্পানী লোকজনের ভয়ে আতঙ্কিত পাড়াবাসীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
৭. ম্রো ও ত্রিপুরা শিক্ষার্থীদের নিরাপদে স্কুলে যাওয়া নিশ্চিত করতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *