
নিজস্ব প্রতিনিধি।। আন্তর্জাতিক গুম বিরোধী দিবসে জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের উদ্যোগে আজ মঙ্গলবার (৩০ আগস্ট ২০২২) সকাল সাড়ে ১১ টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল সম্পাদক ফয়জুল হাকিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন সভাপতি মিতু সরকার, বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক অমল ত্রিপুরা ও বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় নেতা দেলোয়ার হোসেন। সমাবেশ পরিচালনা করেন বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের দফতর সম্পাদক শুভাশিষ চাকমা।
গুমের শিকার ব্যক্তিদের তাদের পরিবারের নিকট সুস্থ দেহে ফিরিয়ে দেয়ার দাবি জানিয়ে সমাবেশের সভাপতি ফয়জুল হাকিম বলেন, গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যা মানবতাবিরোধী অপরাধ। এই অপরাধের বিচার এদেশে একদিন হবেই।
তিনি বলেন, জনগণের সভা সমাবেশ সংগঠন করার স্বাধীনতা খর্ব করতে হাসিনা সরকার দেশে বিনাবিচারে আটক,আটক অবস্থায় নির্যাতন, রাষ্ট্রীয় হেফাজতে হত্যা,গুম করে সারা দেশে এক ভয়ের সংস্কৃতি জারী করেছে। এই ভয়ের সংস্কৃতির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।সন্তান হারা মায়ের ডাককে আজ ফ্যাসিবাদী শাসন উচ্ছেদের ডাকে পরিণত করতে হবে।

মিতু সরকার গুমের শিকার ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যদের সংগঠন মায়ের ডাকের সংগ্রামের প্রতি সমর্থন জানিয়ে বলেন,গুম করে বিচারবহির্ভূত হত্যা করে জনগণের গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে দমন করা যাবে না। ইউপিডিএফ নেতা,জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল সংগঠক মাইকেল চাকমাকে সুস্থ দেহে ফিরিয়ে দেয়ার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, গুম বিচারবহির্ভূত হত্যা বন্ধ করতে হবে।
অমল ত্রিপুরা বলেন, গুমের শিকার ব্যক্তিদের আয়না ঘরে আটক রাখার যে সংবাদ নিউজ পোর্টালে প্রকাশিত হয়েছে তার জবাব সরকারকে দিতে হবে।পার্বত্য চট্টগ্রামে জাতিগত নিপীড়ন চালাতে অতীতে মাটির ঘর নামে গোপন জেলখানা করে নির্যাতন চালানো হয়েছে উল্লেখ করে অমল ত্রিপুরা বলেন, মাইকেল চাকমাসহ গুমের শিকার ব্যক্তিদের অবিলম্বে ফেরত দিতে হবে।

তিনি আরো বলেন, রাষ্ট্র ও সরকার গুমের শিকার ব্যক্তিদের উদ্ধার করার তো দূরে থাক সুষ্ঠু তদন্ত এখনো পর্যন্ত করা হয়নি। গুম হওয়া ব্যক্তিদের পরিবার ও স্বজনদের নানাভাবে হয়রানি করা হচ্ছে। চলতি বছরে দুইবার মাইকেল চাকমার বড় বোন সুভদ্রা চাকমাকে লংগুদু থানায় ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল। থানার এসআই মাইকেল চাকমার স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার হুমকি দিয়েছিল। আমরা রাষ্ট্রীয় প্রশাসনের এহেন কর্মকান্ডকে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।
কল্পনা চাকমা অপহরণের পর এখনো উদ্ধার হয়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ১২ জুন ১৯৯৬ সালে রাতের আঁধারে বাঘাইছড়ি নিউ লাইল্যাঘোনা গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে সেনাবাহিনীর তৎকালীন কজইছড়ি ক্যাম্প কমান্ডার লেফটেনেন্ট ফেরদৌস গং কর্তৃক অপহরণের শিকার হলেও চিহ্নিত অপহরণকারীদের এখনো গ্রেফতার ও শাস্তি প্রদান করা হয়নি। কল্পনাকে উদ্ধারে দাবিতে অবরোধ সফল করতে গিয়ে একই বছর গুম হয়েছিলনে সমর-সুকেশ-মনতোষ ও ভিডিপি গুলিতে শহীদ হয়েছিলনে রূপন চাকমা। ২৬ বছরেও কল্পনা চাকমা কোথায় আছেন, কিভাবে আছেন তার হদিস আমরা পাইনি।
তিনি, সরকার ও রাষ্ট্রীয় বাহিনীর নিপীড়ন, নির্যাতন গুম-খুন-হত্যা-অপহরণের বিরুদ্ধে পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারাদেশে রাজনৈতিক দল, সংগঠন ও বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষকে আন্দোলন সংগ্রামে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
দেলোয়ার হোসেন গুম,বিচারবহির্ভূত হত্যায় দায় মুক্তি দেয়ায় হাসিনা সরকারের কঠোর সমালোচনা করে বলেন,এই সরকারকে গণআন্দোলনের মাধ্যমে হঠিয়ে জনগণের সরকার কায়েম করতে হবে।
সমাবেশ শেষে একটি মিছিল বের হয়ে তোপখানা রোডে এসে শেষ হয়।