খাগড়াছড়িতে পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল ও জাতিসত্তার সাংবিধানিক স্বীকৃতির দাবিতে বিক্ষোভ

নিজস্ব প্রতিবেদক।। খাগড়াছড়িতে সংবিধানের বিতর্কিত পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল ও সকল জাতিসত্তার স্বীকৃতির দাবিতে খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার পেরাছড়া ও ভাইবোন ছড়ায় এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম, বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ ও হিল উইমেন্স ফেডারেশন খাগড়াছড়ি জেলা শাখা।

আজ ৩০ জুন ২০২২, বৃহস্পতিবার সংবিধানের বিতর্কিত পঞ্চদশ সংশোধনী আইন পাসের ১১ বছরপূর্তিতে এই বিক্ষোভের আয়োজন করা হয়।

“আর নয় “উন্নয়ন” ও আইন শৃঙ্খলা রক্ষার আস্ফালন, সংবিধানের বিতর্কিত সংশোধনী আইন মানি না, বাতিল কর, সকল জাতিসত্তার সাংবিধানিক স্বীকৃতি চাই” এসব শ্লোগানে পেরাছড়া এলাকায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক শান্ত চাকমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সহ-সভাপতি লিটন চাকমা, ইউপিডিএফ উপজেলা সংগঠক অম্রান চাকমা ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সভাপতি নীতি চাকমা।

অপরদিকে, ভাইবোন ছড়া এলাকায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সভাপতি ক্যামরন চাকমা, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক মিঠুন চাকমা ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক রিতা চাকমা। 

বক্তারা বলেন, বাংলাদেশে অন্যান্য জাতিসত্তাসমূহকে অস্বীকার করে একক জাতির রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা চলছে। ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকার পার্বত্য চট্টগ্রাম ও দেশের জাতিসত্তাসমূহের আপত্তি অগ্রাহ্য করে ২০১১ সালের ৩০ জুন পঞ্চদশ সংশোধনী আইন পাসের মাধ্যমে সাংবিধানিকভাবে দেশের সকল জাতিসত্তাদের (বাঙালি ভিন্ন) বাঙালী জাতীয়তা চাপিয়ে দিয়েছে। এর মাধ্যমে সরকার দেশ থেকে সকল সংখ্যালঘু জাতিসত্তাসমূহকে নিশ্চিহ্ন করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। কিন্তু পৃথিবীর কোথাও একক জাতির কোন রাষ্ট্র নেই, তাই বাংলাদেশও একক কোন রাষ্ট্র হতে পারে না। 

বক্তারা অভিযোগ করে আরো বলেন, ৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে এই দেশ স্বাধীন হয়েছিল সকল জাতি ও জনগণের মুক্তির লক্ষ্যে। কিন্তু দেশের শাসকগোষ্ঠি সংখ্যালঘু বান্ধব না হওয়ায় পাহাড়িদের আজ নিজ দেশে পরবাসীর মত জীবন-যাপন করতে হচ্ছে। একদিকে শাসকগোষ্ঠীর যড়যন্ত্র অন্যদিকে পাহাড়ে প্রতিনিয়ত উন্নয়নের নামে ভূমি বেদখল, স্থায়ী পাহাড়ি অধিবাসীদের উচ্ছেদ, প্রশাসনের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় সেটলার বাঙালিরা ভূমি বেদখল করে যাচ্ছে। সরকার সকল ক্ষেত্রে পাহাড়ি জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে সবসময় বলপ্রয়োগ অগণতান্ত্রিক, গণবিরোধী ও ফ্যাসিষ্ট কার্যকলাপে লিপ্ত রয়েছে। ফলে পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ি জনগণের উপর নিষ্ঠুরভাবে জাতিগত দমন-পীড়ন চলছে। 

বক্তরা বলেন, ২০১১ সালে আওয়ামী লীগ সরকার সম্পূর্ণ অযৌক্তিক ও অন্যায়ভাবে জাতিসত্তাগুলোর ওপর বাঙালি জাতীয়তা চাপিয়ে দিয়েছে। তাই এর বিরুদ্ধে প্রত্যেক জাতিসত্তা নিজ পরিচয়ে পরিচিতি হতে ও জাতিসত্তার অস্তিত্ব রক্ষার্থে পাহাড়ে গণতান্ত্রিক লড়াকু সংগঠন পিসিপি, ডিওয়াইএফ ও এইচডব্লিউএফ গণতান্ত্রিক পন্থায় আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। 

তারা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামকে ইসলামি করণের চেষ্টা চলছে। এটা পাহাড়ি জনগণকে ধ্বংসের চেষ্টা ছাড়া কিছুই নয়। এর বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে। সংবিধানে সকল জাতিসত্তার স্বীকৃতি না দেওয়া পর্যন্ত আমাদেরকে লড়াই চালিয়ে যেতে হবে।

সমাবেশ থেকে অবিলম্বে বিতর্কিত পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল করে সংবিধানে নতুন বিধান সংযোজনের মাধ্যমে সকল জাতিসত্তার সাংবিধানিক স্বীকৃতির জোর দাবি জানানো হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *