গত ১০ জানুয়ারি রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বাহিনী ও তাদের মদদপুষ্ট সন্ত্রাসীদের দ্বারা হত্যার শিকার হওয়া ইউপিডিএফ সদস্য পরেশ ত্রিপুরা স্মরণে পানছড়িতে স্মরণসভা ও শ্রাদ্ধানুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আজ রবিবার (২৬ জানুয়ারি ২০২০) সকাল ১০টায় ইউপিডিএফ’র পানছড়ি ইউনিট ও পরিবারবর্গের উদ্যোগে উল্টাছড়ি ইউনিয়নের পদ্মিনী পাড়ায় পরেশ ত্রিপুরার নিজ বাড়িতে এ স্মরণসভা ও শ্রাদ্ধানুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
পরেশ ত্রিপুরাসহ অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে যারা শহীদ হয়েছেন তাদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নিরবতা পালনের পর স্মরণসভা শুরু হয়।
‘চেতনার মৃত্যু নেই, শহীদের রক্ত বৃথা যেতে পারে না’ এই শ্লোগানে অনুষ্ঠিত স্মরণসভায় ইউপিডিএফ সংগঠক হরি কমল ত্রিপুরার সঞ্চালনায় ও রূপায়ন চাকমার সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন ৪নং লতিবান ইউপি চেয়ারম্যান কিরণ ত্রিপুরা, ৫নং উল্টাছড়ি ইউপি চেয়ারম্যান বিজয় কেতন চাকমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের পানছড়ি উপজেলা সভাপতি কৃপায়ন চাকমা, মরাটিলার গ্রামের কার্ব্বারী বাদশা কুমার ত্রিপুরা।
এছাড়া আরো উপস্থিত ছিলেন পানছড়ি উপজেলার ত্রিপুরা সংসদের সভাপতি মনিন্দ্র লাল ত্রিপুরা, উল্টাছড়ি ইউপির ৭নং ওর্য়াডের সদস্য শিবুজয় ত্রিপুরা, ৪নং লতিবান ইউপি ৯নং ওর্য়াডের সদস্য রবীন্দ্র ত্রিপুরা, নবরতন পাড়া কার্ব্বারী নবরতন ত্রিপুরা, উল্টাছড়ি ইউপির ৬নং ওর্য়াডের সদস্য শান্তি ত্রিপুরা প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে মাটিরাঙ্গা উপজেলাধীন তাইন্দং ফেনী এলাকার বিভিন্নি গ্রামের মুরুব্বীবৃন্দও উপস্থিত ছিলেন। এতে এলাকার সহস্রাধিক লোক অংশগ্রহণ করেন।
সভায় বক্তরা বলেন, সরকার এক দেশে দুই শাসন ব্যবস্থা কায়েম করে পার্বত্য চট্টগ্রামে জুম্ম জনগণকে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। তারই অংশ হিসেবে জুম্মদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলনকারী দল ইউপিডিএফের ওপর অব্যাহত দমন-পীড়ন জারি রেখেছে, নেতা-কর্মীদের বিনা বিচারে গুলি করে হত্যা করছে।
বক্তারা পরেশ ত্রিপুরাকে স্মরণ করে বলেন, পরেশ ত্রিপুরা পার্বত্য চট্টগ্রামে জুম্ম জনগণের অধিকার আদায়ের জন্য জীবন উৎসর্গ করেছেন। নিপীড়িত জনগণের অধিকারের কথা বলা ও অন্যায়-অবিচারের প্রতিবাদ করাই ছিল তার অপরাধ। কিন্তু সরকারের এটা মনে রাখা দরকার জুম্ম জনগণ এখন রাজনৈতিকভাবে অনেক সচেতন। পরেশ ত্রিপুরাকে হত্যা করা সম্ভব হলেও তার অধিকারের চেতনাকে কখনো হত্যা করা যাবে না।
বক্তারা পরেশ ত্রিপুরাকে বিনা বিচারে হত্যার ঘটনা পার্বত্য চট্টগ্রামে রাষ্ট্রীয় বাহিনী কর্তৃক মানবাধিকার লঙ্ঘনের জাজ্বল্য প্রমাণ উল্লেখ করে এই ঘটনায় জড়িত খুনিদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান।
সভায় বক্তারা পার্বত্য চট্টগ্রামে ইউপিডিএফের নেতৃত্বে যে গণআন্দোলন চলছে তা দমন-পীড়ন চালিয়ে, খুন-গুম করে স্তব্দ করা যাবে না বলে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন এবং পরেশ ত্রিপুরাসহ যারা শহীদ হয়েছেন তাদের আত্মবলিদান থেকে শক্তি সঞ্চয় করে পূর্ণস্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার লড়াইকে এগিয়ে নেয়ার আহ্বান জানান।
উল্লেখ্য, গত ১০ জানুয়ারি রাত সোয়া আটটার সময় নিরাপত্তা বাহিনী ও তাদের মদদপুষ্ট সন্ত্রাসীরা মরাটিলা এলাকায় গিয়ে মিলিতভাবে ইউপিডিএফ সদস্য পরেশ ত্রিপুরাকে গুলি করে হত্যা করে।