মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী: আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণের ঘোষণা, পিআর পদ্ধতি নিয়ে কঠোর অবস্থান

দেশবরেণ্য আলেম ও রাজনীতিক, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী সম্প্রতি দৈনিক যুগান্তরকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন, পিআর পদ্ধতি এবং ইসলামি দলগুলোর জোট নিয়ে তার দলীয় অবস্থান ও ভবিষ্যত পরিকল্পনা তুলে ধরেন।

আফেন্দী জানিয়েছেন, তিনি ইনশাআল্লাহ আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন। ২৫ বছর ধরে জনসেবামূলক কাজের মাধ্যমে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করে তিনি তাঁর নির্বাচনি আসনে সাফল্যের আশাবাদী। তিনি বলেন, “আমার নির্বাচনি মাঠের পরিবেশ অত্যন্ত ভালো এবং আমি শতভাগ আশাবাদী যে, সফল হব।”

জমিয়ত নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য ইতোমধ্যে প্রায় ১৫০ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে এবং নির্বাচনী প্রস্তুতি সন্তোষজনক বলে জানান আফেন্দী। তিনি আরও বলেন, “আমরা যোগ্যতা, সততা এবং জনগণের সঙ্গে সম্পর্কের ভিত্তিতে প্রার্থীদের নির্বাচন করেছি।”

জমিয়তের নির্বাচনে অংশগ্রহণের পরিকল্পনা নিয়ে আফেন্দী বলেন, “আমরা এককভাবে বা জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন করার দুটি সম্ভাবনাই খোলা রেখেছি। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত পরে নেওয়া হবে।” তবে, কিছু কিছু আসনে এককভাবে লড়াইয়ের সম্ভাবনা রয়েছে, বিশেষ করে সিলেট, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, ময়মনসিংহসহ বেশ কয়েকটি এলাকায়।

পিআর (প্রোপরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন) পদ্ধতির বিপক্ষে জোরালো অবস্থান নিয়েছেন আফেন্দী। তিনি বলেন, “পিআর পদ্ধতি বাংলাদেশের জন্য উপযুক্ত নয়, এটি রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা তৈরি করবে এবং ফ্যাসিবাদ পুনর্বাসন করবে। আমরা চাই নির্বাচনে প্রচলিত পদ্ধতিই অনুসরণ হোক।”

জুলাই সনদ নিয়ে তার দলের অবস্থান স্পষ্ট—আফেন্দী জানান, সনদের সংবিধান সংশ্লিষ্ট অংশগুলো পরবর্তী সংসদের কাছে ন্যস্ত হওয়া উচিত, এবং যেগুলি সংবিধানবিরোধী নয়, সেগুলি নির্বাহী আদেশে বাস্তবায়িত করা যেতে পারে।

এ প্রসঙ্গে আফেন্দী আশাবাদী, “ইসলামি রাজনীতি আরও সক্রিয় ও প্রভাবশালী হয়ে উঠবে। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে মানুষের সামনে ইসলামি শাসনব্যবস্থার সৌন্দর্য তুলে ধরা।”

আফেন্দী জামায়াতে ইসলামীকে নিয়ে তার দলের অবস্থান স্পষ্ট করে বলেছেন, “আমরা জামায়াতবিরোধী নই, তবে তাদের অনেক ভ্রান্ত মতাদর্শ রয়েছে যা আমাদের সঙ্গে মেলেনা। জামায়াতের সঙ্গে জোট করা আমাদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।”

বিএনপির সঙ্গে সম্ভাব্য জোটের বিষয়ে তিনি বলেন, “বিএনপির সঙ্গে জোট করলে ইসলামের ক্ষতির আশঙ্কা আমরা দেখি না, তবে জামায়াতে ইসলামী নিয়ে সমস্যা রয়েছে।”

আফেন্দী বলেন, “রাজনীতিতে আলেমদের ভূমিকা নিয়ে অনেকের ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে, আমাদের জন্য এ ধারণা ভাঙা বড় চ্যালেঞ্জ। আমরা প্রমাণ করেছি, আলেমরা রাষ্ট্র পরিচালনায় দক্ষ এবং তাদের রাজনীতিতে থাকা প্রয়োজন।”

আফেন্দী নির্বাচনে নিরপেক্ষতা ও সুষ্ঠু পরিবেশের গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, “নির্বাচন যথাসময়ে হবে এবং একটি সুষ্ঠু নির্বাচন দেশ ও জাতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”

জুলাই বিপ্লবের পর রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আফেন্দী বলেন, “এটি দেশের মানুষ ও ইসলামি অঙ্গনের জয়, যদিও আমাদের শহীদদের যথাযথ মূল্যায়ন করা হয়নি। তবে আমাদের দলের পক্ষ থেকে আহতদের সহায়তা দেওয়া হয়েছে।”

আফেন্দীর এই বক্তব্যগুলো দেশের নির্বাচনী প্রেক্ষাপট ও ইসলামি রাজনীতির ভবিষ্যৎ সম্পর্কে নানা দিক উন্মোচন করেছে, বিশেষ করে পিআর পদ্ধতির বিরোধিতা ও ইসলামী শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার প্রশ্নে তার দলের দৃঢ় অবস্থান স্পষ্ট হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *