দেশে গণভোট কতবার এবং কেমন হয়েছিল

যে কোনো সাধারণ নির্বাচনে ভোটদানের জন্য ভোটারের সামনে থাকে প্রার্থী, প্রতীক কিংবা দলীয় পরিচিতি। কিন্তু গণভোটের ক্ষেত্রে এসব থাকে না। সেখানে ব্যালটে থাকা প্রশ্নের পক্ষে-বিপক্ষে ভোটারকে ‘হ্যাঁ’ কিংবা ‘না’ মত দিতে হয়। প্রশ্নটি তৈরি করা হয় কতগুলো প্রস্তাবের ভিত্তিতে। যেগুলোর বিস্তারিত ভোটারকেই জেনে নিতে হয়। 

বাংলাদেশে এ পর্যন্ত গণভোট হয়েছে তিনবার। এর মধ্যে প্রথম দুটি ছিল তৎকালীন ক্ষমতাসীন ব্যক্তি ও তাদের কর্মসূচির প্রতি আস্থা জ্ঞাপন সংক্রান্ত। তৃতীয়টি হয় রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ব্যবস্থা থেকে সংসদীয় ব্যবস্থায় রূপান্তর নিয়ে। 

এবার চতুর্থ গণভোট আয়োজনের আলোচনা শুরু হয়েছে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী, এর বিষয় জুলাই জাতীয় সনদ অনুযায়ী সংবিধান ও আইনি সংস্কার অনুমোদন।

গত মঙ্গলবার ঐকমত্য কমিশন জুলাই সনদ বাস্তবায়ন পদ্ধতির সুপারিশ-সংক্রান্ত দুটি খসড়া প্রধান উপদেষ্টার কাছে জমা দিয়েছে। সেখানে গণভোট নিয়ে ব্যালটে কী প্রশ্ন থাকবে, তার উল্লেখ আছে। প্রশ্নটি হলো– ‘আপনি কি জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ, ২০২৫ এবং ইহার তপশিল-১-এ সন্নিবেশিত সংবিধান সংস্কার সম্পর্কিত খসড়া বিলের প্রস্তাবসমূহের প্রতি আপনার সম্মতি জ্ঞাপন করিতেছেন?’ 

প্রশ্ন উঠছে, তপশিল-১-এ কোন কোন প্রস্তাব আছে? অন্তর্বর্তী সরকার কোন ক্ষমতাবলে গণভোট আয়োজনের আদেশ দেবে? আগের গণভোটগুলো কী নিয়ে এবং সেগুলোতে জনমত কতটা প্রতিফলিত হয়েছিল?

গণভোট কী
বাংলাদেশে সবশেষ গণভোট হয় ১৯৯১ সালে। এরপর ৩৪ বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেছে। ফলে নতুন প্রজন্মের ভোটারদের কাছে গণভোট একেবারেই অপরিচিত। জাতিসংঘের সংবিধান প্রণয়ন-সংক্রান্ত নথি এবং দেশের আগের ভোটগুলোর ধরন পর্যালোচনার ভিত্তিতে বলা যায়, এ ধরনের ভোটে সংবিধান প্রণয়ন কিংবা সংশোধন, কোনো আইন তৈরি বা বাতিল, শাসন ব্যবস্থা পরিবর্তনের মতো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে জনগণের মতামত চাওয়া হয়। গণমানুষের মতামতের প্রতিফলন ঘটানোর উদ্দেশ্য থাকে বিধায় এই প্রক্রিয়া গণভোট নামে পরিচিত।
জাতিসংঘের ওয়েবসাইটে থাকা ‘রেফারেন্ডাম ইন কনস্টিটিউশন মেকিং প্রসেস’ নামের নিবন্ধে বলা হয়েছে, সংবিধান গ্রহণ বা সংশোধনের জন্য আয়োজিত গণভোট, অর্থাৎ সংবিধানগত গণভোট হলো গণভোটের প্রধান ধরনগুলোর একটি। ১৯৮০-এর দশকের শেষ দিকে বিশ্বের ৫০ শতাংশেরও বেশি লিখিত সংবিধানে কোনো না কোনোভাবে গণভোটের ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত ছিল।

আরেকটু সহজ করে বলা যাক। ধরুন, কল্পিত একটি দেশের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের জনগোষ্ঠী ভিন্ন ভিন্ন ভাষায় কথা বলে। কিন্তু দাপ্তরিক কাজ ও যোগাযোগের জন্য একটি সাধারণ ভাষা দরকার। তখন সরকার এ নিয়ে একটি গণভোটের আয়োজন করতে পারে। যে ভাষার পক্ষে বেশি ভোট পড়বে সেটি তখন সংবিধানে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হবে। 

বাংলাদেশে এর আগে হওয়া গণভোটগুলোতে ভোটাররা ভোটদানের পদ্ধতি হিসেবে ‘হ্যাঁ’ ও ‘না’– এই দুটি শব্দকে বাছাই করেছেন। ‘রাজনীতির তিন কাল’ নামে মিজানুর রহমান চৌধুরীর লেখা বইয়ে উল্লেখ আছে, ‘হ্যাঁ-না’ ভোটের গোড়াপত্তনকারী ছিলেন পাকিস্তানের সামরিক শাসক আইয়ুব খান।
জাতিসংঘ বলছে, ১৯৮৯ সালের পর রাজনৈতিক রূপান্তর ও সাংবিধানিক পরিবর্তনের ধারাবাহিকতায় বিশ্বব্যাপী গণভোট ব্যবহারের প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। এর ফলে সংবিধান সংশোধন বা গ্রহণ করার ক্ষেত্রে গণভোট গ্রহণ বেড়ে যায়। বিশ্বের বহু সংবিধানে এ সংক্রান্ত বিধানও যুক্ত হয়।
বাংলাদেশের সংবিধানে গণভোটের বিধান যুক্ত হয় দ্বাদশ সংশোধনীর মাধ্যমে। পরে তা পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে বাতিল করে আওয়ামী লীগ। চলতি বছরের জুলাইয়ে হাইকোর্ট এক রায়ে সংবিধানের দ্বাদশ সংশোধনীর ১৪২ অনুচ্ছেদে থাকা গণভোটের বিধান পুনর্বহাল করেছেন। 

জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশের তপশিল-১ এ যা আছে
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বিভিন্ন সময় হওয়া বৈঠকে রাজনৈতিক দলগুলো যেসব প্রস্তাবে একমত হয়েছে এবং কোনো নোট অব ডিসেন্ট বা ভিন্নমত নেই সেগুলো সন্নিবেশিত আছে খসড়া-১ এর তপশিল-১ এ। এমন প্রস্তাবের সংখ্যা ৪৮টি। 

এই ৪৮ প্রস্তাবের মধ্যে আছে ভাষা, নাগরিকদের পরিচয়, সংবিধান সংশোধন, জরুরি অবস্থা ঘোষণা, সংবিধানের মূলনীতি, মৌলিক অধিকারের তালিকা সম্প্রসারণ, রাষ্ট্রপতি নির্বাচন পদ্ধতি ও তাঁর ক্ষমতা এবং অভিশংসন প্রক্রিয়া, প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ ও তাঁর একাধিক পদে থাকার বিধান, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা, সংসদে উচ্চকক্ষের গঠন ও ভূমিকা, সংসদে নারী প্রতিনিধিত্ব ও বৃদ্ধির পদ্ধতি, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ইত্যাদি।

একটা উদাহরণ দেওয়া যাক। বর্তমান সংবিধানের চতুর্থ ভাগে ‘প্রধানমন্ত্রী পদের মেয়াদ’ অংশে নির্দিষ্ট কোনো সময়সীমার কথা উল্লেখ নেই। ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশে প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ নিয়ে বলা হয়েছে, ‘একজন ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী পদে যত মেয়াদ বা যত বারই হোক সর্বোচ্চ ১০ বছর থাকতে পারবেন। এ জন্য সংবিধানের সংশ্লিষ্ট অনুচ্ছেদসমূহের প্রয়োজনীয় সংশোধন করা হবে।’ অর্থাৎ একজন ব্যক্তি দুই বারের বেশি প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না। এখন গণভোট হলে খসড়া বিলের প্রস্তাবসমূহের প্রতি যদি ‘হ্যাঁ’ ভোট বেশি পড়ে তাহলে পরবর্তী সংসদে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত সংবিধান সংস্কার পরিষদ সংবিধানে প্রধানমন্ত্রীর ১০ বছরের মেয়াদ-সংক্রান্ত বিধান যুক্ত করবে।

কোন ক্ষমতাবলে আদেশ জারি
২০১১ সালের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধান থেকে গণভোটের বিধান বাতিল হয়েছিল। চলতি বছর হাইকোর্ট সেটি পুনর্বহালের রায় দিয়েছেন। তবে এটি আবার সংবিধানে যুক্ত করতে হলে সংবিধান সংশোধন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। যেহেতু বর্তমানে সংসদ নেই তাই অন্তর্বর্তী সরকার যাতে গণভোট আয়োজন করতে পারে তার জন্য একটি আদেশ জারির সুপারিশ করেছে ঐকমত্য কমিশন।

জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ-২০২৫ এর খসড়া-১ এ বলা হয়েছে, ‘যেহেতু উক্ত গণভোট অনুষ্ঠানের পূর্বে জনগণের জ্ঞাতার্থে এবং উক্ত সাংবিধানিক পরিষদের দায়িত্ব সম্পাদনের সুবিধার্থে জুলাই জাতীয় সনদে অন্তর্ভুক্ত প্রস্তাবসমূহের ভিত্তিতে সরকার কর্তৃক প্রণীত একটি খসড়া বিল গণভোটে উপস্থাপন করা প্রয়োজন; এবং যেহেতু উপরে বর্ণিত মতে জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫ বাস্তবায়ন সম্পন্ন করিবার জন্য একটি আনুষ্ঠানিক আদেশ জারি করা একান্ত প্রয়োজন, সেহেতু সরকার গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে প্রকাশিত জনগণের সার্বভৌম ক্ষমতা ও অভিপ্রায়ের ভিত্তিতে এই আদেশ জারি করিল।’

অর্থাৎ অন্তর্বর্তী সরকার বিশেষ আদেশ জারি করে গণভোট আয়োজন করবে। কমিশনের সুপারিশে বলা হয়েছে, গণভোটে যদি প্রস্তাব পাস হয় তাহলে পরবর্তী সংসদ হবে ‘সংবিধান সংস্কার পরিষদ’। যারা ২৭০ দিন বা ৯ মাসের মধ্যে সংবিধান সংস্কার করবে।

এখন প্রশ্ন হলো গণভোট কবে হবে? এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব সরকারের ওপর ছেড়ে দিয়েছে কমিশন। তবে সুপারিশে উল্লেখ করেছে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন বা এর আগে গণভোট করা যাবে। 

সুপারিশ নিয়ে কার কী প্রতিক্রিয়া
জুলাই জাতীয় সনদে মোট সংস্কার প্রস্তাব আছে ৮৪টি। এর মধ্যে অনেকটিতে নোট অব ডিসেন্ট বা ভিন্নমত আছে রাজনৈতিক দলগুলোর। কমিশন সুপারিশে ভিন্নমত থাকা প্রস্তাবগুলো না রাখায় প্রতিবাদ জানাচ্ছে বিএনপি।

দলটির একাধিক নেতা এ নিয়ে বুধবার প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন। জাতীয় প্রেস ক্লাবের এক অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ভিন্নমত থাকা প্রস্তাবগুলো না রাখাকে ‘প্রতারণা’ বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি যুক্তি দিয়েছেন, ভিন্নমত থাকা বিষয়গুলোও লিপিবদ্ধ করার প্রতিশ্রুতি ছিল। কিন্তু কমিশন সেগুলো পুরোপুরি উপেক্ষা করেছে। একই কারণে কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ।

তবে কমিশনের সুপারিশকে সাধুবাদ জানিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। দলটির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেছেন, ‘আইনি ভিত্তিসম্পন্ন আদেশের খসড়া সরকার গ্রহণ করলে সনদ স্বাক্ষরের বিষয়ে অগ্রগতি তৈরি হবে।’ উল্লেখ্য, জুলাই সনদে আইনি ভিত্তি না থাকার কথা বলে এখনও স্বাক্ষর করেনি এনসিপি। 

আগে কেন গণভোট হয়েছিল
মিজানুর রহমান চৌধুরীর ‘রাজনীতির তিন কাল’ বইয়ের তথ্য অনুযায়ী, প্রথম গণভোট হয় ১৯৭৭ সালে। তিনি লিখেছেন, ওই বছরের ২২ এপ্রিল প্রেসিডেন্ট হিসেবে জিয়াউর রহমান ক্ষমতা গ্রহণ করে ৩০ মে গণভোট, আগস্টে পৌরসভা নির্বাচন এবং ১৯৭৮ সালের ডিসেম্বরে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের লক্ষ্যে সামরিক ফরমানবলে সংবিধানের সংশ্লিষ্ট অনুচ্ছেদের সংশোধন করেন। গণভোট অনুষ্ঠানের জন্য ২ মে সামরিক আইন আদেশ জারি করেন। ৩০ মে গণভোট হয়।

ওই গণভোটে একটি কালো রঙের বাক্সে ‘হ্যাঁ’ এবং আরেকটি বাক্সে ‘না’ লেখা ছিল। ওই নির্বাচনে হ্যাঁ-এর পক্ষে ভোট পড়ে ৯৮ দশমিক ৯৭ শতাংশ। না-এর পক্ষে পড়ে ১ দশমিক ৩ শতাংশ। ৩১ মে গণভোটের ফলাফল ঘোষণার পর ৩ জুন বিচারপতি আবদুস সাত্তারকে ভাইস প্রেসিডেন্ট নিয়োগ দেওয়া হয়। 

এই গণভোটে কী বিষয়ে জনরায় চাওয়া হয়েছিল, তার সরাসরি বর্ণনা নেই বইটিতে। তবে ১৯৭৭ সালের ৩১ মে প্রকাশিত দৈনিক বাংলার এক প্রতিবেদনে গণভোট নিয়ে বিস্তারিত বিবরণ পাওয়া যায়। ‘জিয়ার প্রতি জাতির আস্থা জ্ঞাপন’ শিরোনামের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়– ‘রাষ্ট্রপতি মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান এবং তাঁর ১৯ দফা কর্মসূচি ও নীতির প্রতি দেশবাসী বিপুল আস্থা জ্ঞাপন করেছেন।’ অর্থাৎ ওই গণভোটের বিষয় ছিল রাষ্ট্রপতি হিসেবে জিয়াউর রহমানের প্রতি এবং তাঁর গৃহীত নীতি ও কর্মসূচি।  

দ্বিতীয় গণভোট হয় ১৯৮৫ সালের ২১ মার্চ। ক্ষমতায় তখন লেফটেন্যান্ট জেনারেল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। মিজানুর রহমান লিখেছেন, এই ভোটের বিষয় ছিল  এরশাদের অনুসৃত নীতি এবং তাঁর প্রেসিডেন্ট পদে অধিষ্ঠিত থাকা নিয়ে। এতে ‘হ্যাঁ’-এর পক্ষে ভোট পড়ে ৯৪ দশমিক ১৪ শতাংশ। ‘না’-এর পক্ষে ছিল ৫.৫ ভাগ।

‘রাজনীতির তিন কাল’ বইয়ে লেখা হয়েছে, এই গণভোটের আগে পয়লা মার্চ জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। তিনি সব নির্বাচন বাতিল ও রাজনৈতিক তৎপরতা নিষিদ্ধ করে সামরিক আইন প্রশাসকের পদ ও সামরিক আদালত পুনর্বহাল করে নিজে প্রেসিডেন্ট পদে থাকবেন কি থাকবেন না– এ প্রশ্নে ২১ মার্চ গণভোট অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন। এরপরই তখনকার ১৫ দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা এবং ৭ দলীয় নেত্রী খালেদা জিয়াকে অন্তরীণ করা হয় এবং ২ মার্চ সংসদ নির্বাচনের তপশিল বাতিল ঘোষণা করা হয়।

পরদিন (২২ মার্চ) প্রকাশিত দৈনিক বাংলার ‘এরশাদের পক্ষে বিপুল আস্থা ভোট’ শিরোনামের প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত সারাদেশে ২২ হাজার ৯৮২ কেন্দ্রে শান্তিপূর্ণভাবে ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে।’

তৃতীয় গণভোট হয় ১৯৯১ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর। এই ভোটে একজন নির্বাচন কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন জেসমিন টুলি। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য ছিলেন তিনি। সম্প্রতি একটি গণমাধ্যমের টকশোতে অংশ নিয়ে জেসমিন টুলি জানান, ১৯৯১-এর গণভোট হয়েছিল সংসদে ওঠা বিল ও তাতে রাষ্ট্রপতির সম্মতি দেওয়া-না দেওয়া নিয়ে। অর্থাৎ রাষ্ট্রপতি শাসিত ব্যবস্থা থেকে সংসদীয় ব্যবস্থায় যাওয়া নিয়ে। এতে হ্যাঁ-এর পক্ষে ভোট পড়ে ৮৪.৩৮ শতাংশ। ‘না’-এর পক্ষে ছিল ১৫.৬২।

১৯৯১ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ অবজারভারের প্রতিবেদনে বলা হয়, সংসদীয় ব্যবস্থার পক্ষে সারাদেশে মানুষ ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে ভোট দিয়েছেন। কেবল রংপুরে সবচেয়ে বেশি ‘না’ ভোট পড়েছে। ১ লাখ ৪৬ হাজার ৪৮টি ‘হ্যাঁ’ ভোটের বিপরীতে ‘না’ ছিল ২ লাখ ৫৩ হাজার ৫৫৭টি।

বেশি জানা বিষয়ে ভোট কম
এই তিন গণভোটের গুণগত পার্থক্য নিয়েও টকশোতে মতামত দেন জেসমিন টুলি। তিনি বলেন, ১৯৯১ সালের গণভোট বিষয়ে প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষেরই পরিষ্কার ধারণা ছিল। অর্থাৎ তারা কীসের পক্ষে-বিপক্ষে ভোট দিচ্ছেন– তারা জানতেন। কিন্তু ১৯৮৫ সালের ভোট নিয়ে মানুষের তেমন আগ্রহ ছিল না। 

প্রদত্ত ভোটের হিসাবে দেখা যাচ্ছে, ’৮৫ সালের গণভোটের বিষয় সম্পর্কে মানুষ কম জানলেও ভোট পড়েছিল ৩ কোটি ৪৫ লাখ ৭২ হাজার ৫১৪টি)। এটি মোট ভোটের ৭২ দশমিক ১৫ শতাংশ। আর ’৯১ সালের গণভোটের বিষয় সম্পর্কে মানুষের পরিষ্কার ধারণা থাকলেও ভোট পড়েছিল কম– ৩৫ দশমিক ১৯ শতাংশ। প্রদত্ত ভোট ছিল ২ কোটি ১৮ লাখ ৮৮ হাজার ৪৩৭। 

ভোটের এই হিসাব পাওয়া গেছে ‘আইন বিধিমালা তথ্য ও ফলাফল, বাংলাদেশ নির্বাচন (১৯৪৭-২০২৩)’ নামের বইয়ে। এটি গ্রন্থনা করেছেন অ্যাডভোকেট এবিএম রিয়াজুল কবীর কাওছার। বইটিতে ১৯৭৭ সালের গণভোটে প্রদত্ত ভোটের সংখ্যা উল্লেখ করা হয়েছে ৩ কোটি ৩৭ লাখ ৭৯ হাজার ৭৬৮। অর্থাৎ ৮৮ দশমিক ০৫ শতাংশ ভোট পড়েছিল সেবার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *