বর্তমান সংবিধান মেনে শপথ নেওয়া অন্তর্বর্তী সরকারের গণভোট দেওয়ার এখতিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন কবি ও চিন্তক ফরহাদ মজহার। জুলাই অভ্যুত্থানের পর এই সংবিধান বাতিল করার মত জানিয়েছিলেন তিনি। সংবিধান সংস্কারে গণভোটের দিকে সরকারের এগিয়ে যাওয়ার মধ্যে গতকাল সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে সেন্টার ফর ডেমোক্রেসি অ্যান্ড পিস স্টাডিজের উদ্যোগে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ প্রশ্ন তোলেন।
ফরহাদ মজহার বলেন, ‘গণভোট কে দেবে? এই সরকারের কি এখতিয়ার আছে গণভোট দেওয়ার? পুরোনো সংবিধান রেখে নতুন বাংলাদেশ গড়া সম্ভব নয়– মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘আপনি সংবিধান রাখবেন, আবার সংবিধানবিরোধী ভূমিকাও নেবেন; দুটো তো হতে পারে না।’
ফরহাদ মজহার বলেন, ‘নির্বাচন মানেই গণতন্ত্র– এটা মারাত্মক ভুল। নির্বাচনের সঙ্গে গণতন্ত্রের কোনো সম্পর্ক নেই। নির্বাচন মানে গণতন্ত্র– এই ভুয়া তত্ত্ব থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। গণতন্ত্র মানে হচ্ছে জনগণের সামষ্টিক অভিপ্রায় বাস্তবায়িত করা। এটার আরেকটা নাম আছে, সেটা হচ্ছে গণসার্বভৌমত্ব।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের নতুন বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জ খুব সহজ। নতুন গণপরিষদ গঠন করা এবং গণপরিষদে নির্বাচন করা। গণপরিষদে আমাদের সমস্ত সাংবিধানিক প্রশ্ন, সকল আইনি প্রশ্ন, রাষ্ট্রীয় প্রশ্ন ফয়সালা করা।’ ড. ইউনূসকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, জনগণকে বলতে দেন– তারা কেমন বাংলাদেশ চায়। এটা না করে আপনি দু-তিনটা লোক নিয়ে এসে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করলেন। এটার তো কোনো ভ্যালিডিটি নেই।
আলোচনা সভায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরের নায়েবে আমির হেলাল উদ্দিন বলেন, ছাত্ররা যে ন্যায়বিচারের দাবি করেছিল; দেশের নেতৃত্বে সৎ লোক না এলে কখনও সেই আকাঙ্ক্ষা পূরণ হবে না। এখনও টেন্ডারবাজি ও চাঁদাবাজি বন্ধ হচ্ছে না।
ঐকমত্য কমিশনের সংস্কার আলোচনায় দেশের সংখ্যালঘুদের কথা পৌঁছায়নি বলে অভিযোগ তোলেন জাতীয় হিন্দু মহাজোটের মহাসচিব গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক। তিনি বলেন, ‘সেই ১৯৪৭ সালের ৩৩ শতাংশ মাইনরিটি এখন তো বিলুপ্তির পথে। সেখানে তাদের তো দুচারটা কথা শোনার দরকার ছিল। তারা কিন্তু সেটাও শুনল না।’
সেন্টার ফর ডেমোক্রেসি অ্যান্ড পিস স্টাডিজের নির্বাহী পরিচালক সাদেক রহমানের সঞ্চালনায় সভায় আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ নতুনধারা জনতার পার্টির চেয়ারম্যান আবদুল আহাদ নূর, গণমুক্তি জোটের চেয়ারম্যান শাহরিয়ার ইফতেখার, যুবনেতা এবিএম ইউসুফ, সাবেক সামরিক কর্মকর্তা হাসিনুর রহমান, জামাল হায়দার, ফেরদৌস আজিজ, অধ্যাপক দেওয়ান সাজ্জাদ, এআর খান প্রমুখ।