যে ৯ মিনিট বদলে দেয় আসরানির অভিনয়জীবন

না ফেরার দেশে চলে গেলেন বলিউডের কিংবদন্তি অভিনেতা গোবর্ধন আসরানি। সোমবার ৮৪ বছর বয়সে মুম্বাইয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। ২০০ শতাধিক সিনেমায় অভিনয় করলেও ১৯৭৫ সালে মুক্তি পাওয়া ‘শোলে’ সিনেমা তার জীবনের ভিন্ন এক গতিপথ। কারণ, এই সিনেমায় মাত্র ৯ মিনিটের স্ক্রিনটাইমেই তিনি গড়ে তোলেন এমন এক আইকনিক জেলারের চরিত্র, যা আজও বলিউড ইতিহাসের অন্যতম স্মরণীয় কমেডি দৃশ্য হিসেবে বিবেচিত।

প্রয়াত অভিনেতার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন ‘শোলে’ সিনেমার পরিচালক রমেশ সিপ্পি। সেই সঙ্গে অভিনেতাকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করে ‘শোলে’ সিনেমা ও আসরানির গল্প বলেছেন তিনি।

রমেশ সিপ্পি বলেন, ‘আসরানির মৃত্যুর খবর প্রচণ্ড কষ্ট দিয়েছে। সম্প্রতি আমাদের দেখা হয়েছিল, তখন তিনি পুরোপুরি সুস্থ ছিলেন। বিভিন্ন বিষয়ে আমাদের কথা হয়েছে।  ‘শোলে’ সিনেমার জেলারের চরিত্রটি তার জীবনের শ্রেষ্ঠ কাজ। আমার মনে হয়, এই চরিত্রে অভিনয়ের জন্যই তিনি জন্মেছিলেন। আমি তাকে সবসময় মনে রাখব।’

যেভাবে তৈরি হয় ‘শোলে’র জেলারের চরিত্র
পরিচালক রমেশ সিপ্পি বলেন, ‘জেলারের চরিত্রটি যেন আসরানির জন্যই লেখা হয়েছিল। আমি প্রথম তার সঙ্গে কাজ করি ‘সীতা আউর গীতা’ সিনেমায়। তখনই তার অভিনয়ের দক্ষতায় আমি মুগ্ধ হই। পরে যখন সেলিম-জাভেদ এই চরিত্রটি লেখেন। তখন আমরা একবাক্যে বলি- এটা কেবল আসরানিই করতে পারেন। শুধু তাকে দিয়েই এটা সম্ভব।’

পরিচালকের মতে, আসরানি ছিলেন চরিত্রটির সহ-স্রষ্টা। তিনি বলেন, “আমরা তাকে ডাকি, আলোচনা করি। এই চরিত্রে অভিনয় করতে তিনি ভীষণ উচ্ছ্বসিত ছিলেন। চরিত্রটি গঠনের সময়ও তিনি আমাদের সঙ্গে ছিলেন। তার স্বাভাবিক, প্রাণবন্ত অভিনয়ই সেটিকে অবিস্মরণীয় করে তুলেছে।’

রমেশ সিপ্পি জানান, জেলার চরিত্রটি আসলে চার্লি চ্যাপলিনের ‘দ্য গ্রেট ডিকটেটর’ সিনেমা থেকে অনুপ্রাণিত, যা ছিল আডলফ হিটলারের ব্যঙ্গাত্মক উপস্থাপনা।

নির্মাতার কথায়, ‘হিটলার এমন একজন ব্যক্তি, যাকে নিয়ে অসংখ্য গল্প, বই তৈরি হয়েছে। কিন্তু সেই সময় আমরা তাকে হাস্যরসের মাধ্যমে উপস্থাপন করতে চেয়েছি। আসরানি সেটি এমনভাবে ফুটিয়ে তোলেন, যা আজও মানুষ ভুলতে পারে না।’

৯ মিনিটের অমর অভিনয়
অমিতাভ বচ্চন ও ধর্মেন্দ্রের মতো তারকায় ভরপুর ‘শোলে’ ছবিতেও আসরানির সংক্ষিপ্ত চরিত্রটি আলাদা ছাপ ফেলে। এই সিনেমায় তার স্ক্রিনটাইম ছিল মাত্র ৯ মিনিট। কিন্তু এই অল্প সময়েই যন বাজিমাত করেছেন আসরানি।

পরিচালক বলেন, ‘চরিত্রটি যেমন জাঁকজমক, হাস্যরসটাও তেমনি উচ্চমাত্রার। সেলিম-জাভেদের সংলাপ, আমার নির্দেশনা এবং আসরানির প্রাণবন্ত অভিনয়- সব মিলিয়ে তৈরি হয় এক অমর দৃশ্য। ছয় দশকেরও বেশি সময় অভিনয়জীবনে আসরানি দর্শকদের উপহার দিয়েছেন অসংখ্য হাসি, ব্যঙ্গ ও বিনোদন। তবে ‘শোলে’র সেই ৯ মিনিটের ‘জেলার’ চরিত্রই তাকে দিয়েছে অমরত্ব।’

আসরানির অন্য কাজ
দীর্ঘ ছয় দশকের ক্যারিয়ারে তিনি অভিনয় করেছেন ২০০ শতাধিক সিনেমায়। ‘মেরে আপনে’, ‘বাওয়ার্চি’, ‘চুপকে চুপকে’, ‘অভিমান’, ‘সরগম’, ‘অমর আকবর অ্যান্টনি’সহ-প্রতিটি সিনেমায় তার উপস্থিতি দর্শকদের মনে হাসির সঞ্চার করেছে।

১৯৭৭ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘চলে মুরারি হিরো বননে’ সিনেমায় মুখ্য ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন তিনি। ওই চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্য ও পরিচালনার দায়িত্ব নিজেই সামলেছিলেন।

অভিনয়ের পাশাপাশি বেশ কিছু চিত্রনাট্যও লেখা ও পরিচালনাও করেছেন আসরানি। ১৯৭৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘সালাম মেমসাব’ ছবিটিও নিজে পরিচালনা করেছিলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *