রাতুল পঞ্চম শ্রেণীর একজন ছাত্র। তার ভেতর প্রচণ্ড কৌতূহল। পাখা ঘুরে বাতাস দেয় কেন? আবার বরফ পানির ওপর ভাসে, কিন্তু পাথর ডুবে যায়, এটাই বা কেন? এই রকম হাজারটা প্রশ্ন ঘুরপাক খায় তার ছোট্ট মাথার ভেতর।
একদিন স্কুল থেকে ফিরে সে দাদুকে খুঁজতে থাকে। রাতুলের দাদুকে সবাই মাস্টার সাহেব বলে ডাকেন। কারণ তার দাদু একসময় স্কুলশিক্ষক ছিলেন।
রাতুলের দাদু বারান্দায় বসে চা খেতে খেতে পত্রিকা পড়ছেন। এমন সময় রাতুল এক দৌড়ে এসে জিজ্ঞেস করল, দাদু বরফ তো শক্ত, আবার পাথরও শক্ত। তাহলে পাথর কেন ডুবে যায় আর বরফ ভেসে থাকে?”
দাদু হেসে বললেন, ওহ, আজ তাহলে আমার বিজ্ঞানের ক্লাস!
রাতুলও চেয়ার টেনে বসে বলল, হ্যাঁ দাদু, শুরু করুন। আজ আমি এই রহস্য জানতে চাই।
দাদু ঘর থেকে একটা স্বচ্ছ কাঁচের গ্লাস আনলেন। তাতে অর্ধেক পানি ঢাললেন। তারপর ফ্রিজ থেকে একটা বরফের টুকরো এনে ফেলে দিলেন গ্লাসে। বরফটা টুপ করে পড়ে গিয়েও একেবারে ভেসে থাকল পানির ওপর।
দাদু বললেন, দেখলি? বরফটা ডুবল না।
হুম, কিন্তু কেন?
কারণ, বরফের ভেতরে ফাঁকা জায়গা থাকে, বাতাস থাকে। বরফ আসলে পানির চেয়ে হালকা হয়ে যায়। বিজ্ঞানের ভাষায় একে বলে ‘ঘনত্ব’। বরফের ঘনত্ব পানির চেয়ে কম, তাই বরফ ভেসে থাকে।
রাতুল ভ্রু কুঁচকে বলল, ঘনত্ব মানে আবার কী?
দাদু বললেন, এই গ্লাসে যদি আমরা কিছু পাথরের টুকরো দিই, দেখবি সেটা সঙ্গে সঙ্গেই ডুবে যাবে। কারণ, পাথরের ঘনত্ব পানির চেয়ে অনেক বেশি। এর মানে হলো, পাথর একসাথে অনেক কণায় তৈরি, মাঝখানে ফাঁকা জায়গা নেই। বরফের মতো হালকা না।
রাতুল ভাবল তাহলে বিজ্ঞান মানে হচ্ছে জিনিসপত্রের ভেতরের খবর জানা।
তখন দাদু হঠাৎ গ্লাসের পানি থেকে বরফটা তুলে নিয়ে মুখে দিলেন। তুইও খা, বরফ খেতে ভালো লাগে না?
রাতুল এক চামচে বরফ মুখে নিয়ে বলল, এটা তো অনেক ঠাণ্ডা! দাঁতে লাগছে!
দাদু বললেন, এই ঠাণ্ডাটাও একটা বিজ্ঞান। ঠাণ্ডা বস্তু আমাদের শরীরের তাপ শুষে নেয়। তাই ঠাণ্ডা কিছু ধরলে আমরা কাঁপতে থাকি।
রাতুল এবার উঠে গিয়ে ঘরের ফ্যান চালাল। ফ্যান ঘোরার সঙ্গে সঙ্গে সে দাদুর দিকে ফিরে বলল, এবার তুমি বলো, ফ্যান ঘুরলে কেন ঠাণ্ডা লাগে?
দাদু চোখে চশমা তুলে তাকিয়ে বললেন, ভালো প্রশ্ন। ফ্যান ঘুরে বাতাস ছড়িয়ে দেয়। বাতাস তোমার শরীর থেকে ঘাম শুকিয়ে দেয়। ঘাম শুকাতে গিয়ে শরীর থেকে তাপ হারায়। তাই ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা লাগে। এই ঘটনাকে বলে ‘বাষ্পীকরণে শীতলতা‘।
রাতুল এক লাফে দাঁড়িয়ে বলল, দাদু, দারুণ! আজকে তো আমি অনেক কিছু শিখে ফেললাম।
তারপর সে চোখ বড় বড় করে বলল, তুমি বলো তো, আমি কি বড় হয়ে বিজ্ঞানী হতে পারি?
দাদু মাথায় হাত রেখে বললেন, তুই এখনই বিজ্ঞানী। কারণ, তুই প্রশ্ন করিস। তোর মধ্যে জানার ইচ্ছে আছে। এটাই একজন বিজ্ঞানীর প্রথম গুণ।
রাতুল দাদুর গলা জড়িয়ে ধরে বলল, তাহলে চল দাদু, আমাদের বিজ্ঞান ঘর বানাই।
দাদু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, বিজ্ঞান ঘর? সেটা আবার কী?
রাতুল বলল, আমার ঘরটাই হবে বিজ্ঞান ঘর। যেখানে থাকবে বোতল, রঙ, পানি, আয়না, বাতাস, ঘড়ি, বরফ, পাথর আর থাকবে তুমি। তুমি হবে আমার প্রধান সহকারী।
রাতুলের দাদু হেসে গড়াগড়ি খাওয়ার অবস্থা। দূর থেকে দাদা–নাতির এমন খোশগল্প দেখে রাতুলের বাবা–মাও হাসছে।
সেই দিন থেকেই রাতুলের ঘরে তৈরি হয় একটা ছোট্ট বিজ্ঞান জগৎ। রাতুল সেখানে পানি দিয়ে ঘূর্ণি তৈরি করে, আয়নায় আলো ফেলে সাত রঙের রংধনু বানায়, আবার কৌতূহলী হয়ে ভাবে বাতাসে কাগজ কেন উড়ে যায়।
রাতুলের কাছে বিজ্ঞান আর কোনো কঠিন বিষয় নয়। সেটা এখন এক মজার খেলা। আর তার প্রতিটি খেলাই শুরু হয় একটা ছোট্ট কেন? দিয়ে।