বিষ্ময়কর হিমালয় পর্বত

হিমালয় পর্বতমালা আমাদের কাছে বিশাল এক বিষ্ময়। হিমালয় পর্বতমালা শুধু অচিন্ত্যনীয় রকমের বিশালই নয়, সে কিন্তু অপরূপ সুন্দরও। হিমালয় পর্বতমালা কীভাবে সৃষ্টি হল, এটা বুঝতে হলে টেকটোনিক্স তত্ত্বটাকে বুঝতে হবে। ভূতাত্ত্বিক পরিভাষায় প্লেট বলতে বিশাল সলিড শিলার পাত বা ফলককে বোঝায় আর গ্রিক শব্দ টেকটনিক্স এর অর্থ হচ্ছে ‘তৈরি করা’ অর্থাৎ পৃথিবীর পৃষ্ঠদেশ বিভিন্ন ধরনের প্লেট দিয়ে তৈরি। লিথোস্ফেয়ার বলে যে উপরের স্তরটা মহাদেশগুলোকে এবং সমুদ্রের নীচের ক্রাস্ট বা ভূত্বককে ধারণ করে আছে, তা আসলে ৮টি প্রধান এবং বেশ কয়েকটা আরও ছোট ছোট প্লেটের সমন্বয়ে গঠিত।

এই প্লেটগুলো অনবরত তাদের নীচের আরও ঘন এবং প্লাস্টিকের মত স্তর অ্যাস্থেনোস্ফিয়ারের দিকে সরে যাচ্ছে। এদের এই সঞ্চালনের গতি বছরে গড়পড়তা ৫–১০ সেন্টিমিটারের মত। কিন্তু ভূপৃষ্ঠের মত কঠিন একটা জিনিসের এই নিত্য গতিময়তার কারণটা কি হতে পারে? আসলে পৃথিবীর গভীরে আটকে থাকা তাপ এবং তেজস্ক্রিয় ক্ষয়ের কারণে অনবরত যে তাপের সৃষ্টি হচ্ছে তা থেকেই সব কিছু গলে গিয়ে তৈরি হয় গলিত শিলার ধারা বা ম্যাগমা। এই গলিত শিলাগুলো ধীরে ধীরে মধ্য–সামুদ্রিক ভূশিরার মধ্য দিয়ে উলটো পথে উপরের দিকে চাপ দিতে থাকে।

এর ফলে একদিকে যেমন সমুদ্রের তলদেশ বিস্তৃত হতে শুরু করে অন্যদিকে তার ফলশ্রুতিতে মধ্য–সামুদ্রিক ভূশিরার মধ্যে ফাটল বাড়তে থাকে। এই ম্যাগমাগুলো সমুদ্রের তলদেশ থেকে উপরে উঠে এসে ধীরে ধীরে ঠান্ডা হয়ে আবার নতুন ক্রাস্ট তৈরি করে আর তাদের দুপাশের প্লেটগুলো বিপরীত দিকে ঠেলতে শুরু করে। এভাবে সরতে সরতে যখন কোন দু’টো প্লেটের মধ্যে সংঘর্ষ ঘটে তখন প্লেটগুলাের একটা আরেকটার নীচে চলে গিয়ে তাদের নীচের স্তর অ্যাস্থেনোস্ফিয়ারের সাথে মিশে যেতে বাধ্য হয়।

কি বিশাল এই সংঘর্ষ! ভূপৃষ্ঠের মত কঠিন একটা জিনিসের এক স্তর আরেক স্তরের মধ্যে ঢুকে গলে যাচ্ছে। এই সংঘর্ষের চাপে যে বিভিন্ন ধরনের প্রলয়ঙ্করী ঘটনার সূত্রপাত ঘটবে তাতে আর অবাক হওয়ার কি আছে? আর এ থেকেই সৃষ্টি হয় পর্বতমালার, ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে পৃথিবী, কিংবা কোনো মহাদেশ ভেঙে পড়ে। এরকম এক প্রশান্ত মহাসাগরীয় প্লেটের সংঘর্ষ থেকে জেগে উঠেছে হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জ। প্রায় ৮ কোটি বছর ধরে দক্ষিণ দিক থেকে ক্রমাগতভাবে উত্তরের দিকে সরে আসতে থাকা ইন্ডিয়ান মহাসামুদ্রিক প্লেটের দক্ষিণ এশিয়ার সাথে সংঘর্ষের ফলেই সৃষ্টি হয়েছিলো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *