‘সুখী দেশ গড়তে তরুণদের বিজ্ঞানমনস্ক হতে হবে’

বিতার্কিকদের মুখে যুক্তির ঝলকানি, পাল্টা যুক্তির ধারালো তীর– যেন ছোট্ট একটি যুদ্ধক্ষেত্র! একপক্ষের যুক্তি ‘প্রযুক্তিনির্ভরতা শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতাকে কমিয়ে দিয়েছে’। অপরপক্ষের পাল্টা যুক্তি, প্রযুক্তি আসলে শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতাকে সীমিত করেনি; বরং নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে। তাদের মতে, প্রযুক্তি যদি সঠিকভাবে ব্যবহৃত হয়, তবে সেটিই হতে পারে সৃজনশীলতার সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা। চূড়ান্ত পর্বে এই বিষয়ের পক্ষে-বিপক্ষে জমে উঠে তুমুল লড়াই। 

গতকাল বৃহস্পতিবার এই দৃশ্য দেখা যায় দেশের সবচেয়ে বড় বিজ্ঞান বিতর্ক আসর বিএফএফ-সমকাল জাতীয় বিজ্ঞান বিতর্ক উৎসবের বিভাগীয় পর্যায়ের মঞ্চগুলোয়। 
বাংলাদেশ ফ্রিডম ফাউন্ডেশন (বিএফএফ) ও সমকালের যৌথ উদ্যোগে এবং সমকালের পাঠক সংগঠন সুহৃদ সমাবেশের আয়োজনে ১১তম আসরের পাওয়ার্ড বাই হিসেবে রয়েছে শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংক পিএলসি। ‘বিতর্ক মানেই যুক্তি, বিজ্ঞানে মুক্তি’ প্রতিপাদ্যে গতকাল বরিশাল ও সিলেটে দিনব্যাপী এ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। 

বরিশাল নগরীর আছমত আলী খান ইনস্টিটিউশনে অনুষ্ঠিত যুক্তি-তর্কের লড়াইয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে কাউনিয়া সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যলয়। রানার্সআপ হয় পটুয়াখালীর সরকারি জুবিলি উচ্চ বিদ্যালয়। শ্রেষ্ঠ বক্তা নির্বাচিত হয় রানার্সআপ দলের দলনেতা আবদুর নুর আলফি। 

সমকালের সহযোগী সম্পাদক সাইফুর রহমান তপনের সভাপতিত্বে সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সরকারি ব্রজমোহন কলেজের অধ্যক্ষ ড. শেখ মো. তাজুল ইসলাম। তিনি বিতর্ক শেষে চ্যাম্পিয়ন ও রানার্সআপ দলের হাতে সনদ ও ক্রেস্ট তুলে দেন। এর আগে সকালে বিতর্কের উদ্বোধন করেন বিসিএস জেনারেল এডুকেশন অ্যাসোসিয়েশনের বরিশাল জেলা সভাপতি অধ্যাপক কাজী জাবের আহমেদ। 
প্রধান অতিথি অধ্যক্ষ ড. শেখ তাজুল ইসলাম বলেন, মন ও মননের সঙ্গে বিজ্ঞানকে সম্পৃক্ত করতে হবে। বিজ্ঞান শিক্ষা সংবিধানে আবশ্যক করা হলে তার ধারাবাহিকতায় সমাজ, সংস্কৃতি, শিক্ষায় বিজ্ঞানের ব্যাপক প্রসার ঘটবে তৃণমূল পর্যন্ত। 

অতিথিরা বলেন, বিজ্ঞানের ইতিবাচক চর্চাকে আন্দোলনে রূপ দিয়ে এ আয়োজন অব্যাহত রাখতে হবে। সুখী-সমৃদ্ধিশালী দেশ গড়তে হলে তরুণ প্রজন্মকে বিজ্ঞানমনস্ক হতে হবে। উন্নত দেশের জন্য প্রয়োজন সৃজনশীল নাগরিক। আর সৃজনশীল নাগরিক হতে হলে বর্তমান প্রজন্মকে অনুসন্ধানী ও জ্ঞানপিপাসু হবে। সমকালের এ আয়োজন ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে কুসংস্কার, সন্ত্রাস ও মাদক থেকে দূরে রাখবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তারা। 

অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সুহৃদ সমাবেশের বরিশাল শাখার সভাপতি শামীম মাহমুদ ও সাংগঠনিক সম্পাদক শিমু আক্তার। সমন্বয়ক ছিলেন বরিশাল ব্যুরো ইনচার্জ 
সুমন চৌধুরী। 

এদিকে সিলেট জেলা পর্বের পর অঞ্চল পর্বেও চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বর্ডারগার্ড পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ। নগরীর জিন্দাবাজার এলাকায় সরকারি অগ্রগামী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের আর্ট গ্যালারিতে অনুষ্ঠিত প্রতিযোগিতায় রানার্সআপ হয়েছে হবিগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের দল। শ্রেষ্ঠ বক্তা হয় রানার্সআপ দলের মহিউদ্দিন ইফাদ। 
পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার (এসএমপি) আব্দুল কুদ্দুছ চৌধুরী পিপিএম। তিনি বলেন, বিজ্ঞান বিতর্ক মানে যুক্তিতর্কের খেলা। এটা সুস্থ ধারার প্রতিযোগিতাকে উৎসাহ দেয়। 

তিনি কিছু শিক্ষার্থীর ভুল সিদ্ধান্ত উল্লেখ করে বলেন, পরীক্ষায় ফেল করা মানে জীবন শেষ হওয়া নয়, অকৃতকার্য হওয়ার মধ্যে সফলতা নিহিত। জীবনের চেয়ে পরীক্ষার 
ফল বড় নয়। 
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন সমকালের সহকারী সম্পাদক জিয়া হাসান, বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য মোকাদ্দেস বাবুল। জিয়া হাসান বলেন, এমন প্রতিযোগিতা সবাইকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যায়। বিজ্ঞানের জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে জীবনে এগিয়ে 
যেতে হবে। 

এর আগে সকালে উৎসবের উদ্বোধন করেন অগ্রগামী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের প্রধান হ্যাপী বেগম। 
সমকাল সুহৃদ সমাবেশ সিলেটের সভাপতি তামিম রহমান চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও সমকাল সিলেটে ব্যুরোপ্রধান মুকিত রহমানীর পরিচালনায় সমাপনী অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন সমকালের স্টাফ রিপোর্টার ফয়সল আহমদ বাবলু, সুহৃদ সমাবেশের সাধারণ সম্পাদক এহসান মাজিদ সাদী। অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সুহৃদ সমাবেশের সহসভাপতি দুর্জয় রায়, সুহৃদ আরিফ হোসাইন, মিজানুর রহমান, তাহসিনা রিমা, মাছুম চৌধুরী, জাকারিয়া আহমদ, সাহিনা বেগম, মুনিরা রহমানী মাহা, আহমদ আদিলা তুবা প্রমুখ। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *