মাহমুদুর রহমানের সাক্ষ্য ও জেরার মধ্যে ‘বিদ্বেষ ও জিঘাংসা’ বিষয়ক বিতর্ক


আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছেন আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান। বুধবার, ট্রাইব্যুনালের বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ এর একক বেঞ্চে তার সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়। এই মামলায় জেরা চলাকালীন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের আইনজীবীরা মাহমুদুর রহমানকে ব্যক্তিগত বিদ্বেষ এবং জিঘাংসার কারণে সাক্ষ্য দেওয়ার অভিযোগ করেন।

মাহমুদুর রহমান গত সোমবার থেকে আদালতে তার সাক্ষ্য দেওয়া শুরু করেন। মঙ্গলবারও সাক্ষ্যগ্রহণ চলতে থাকে এবং এরপর শুরু হয় জেরা। সাক্ষী হিসেবে মাহমুদুর রহমান তার লেখালেখি ও বইগুলো উল্লেখ করেন, যা তিনি দাবি করেন তার গবেষণার অংশ। উল্লেখযোগ্য বইগুলোর মধ্যে ছিল— ‘হাসিনার ফ্যাসিবাদ নির্বাসন থেকে দেখা’, ‘গুমের জননী’, ‘The Political History of Muslim Bengal’, এবং ‘The Rise of Indian Hegemon in South Asia’।

জেরায়, শেখ হাসিনার আইনজীবী অ্যাডভোকেট আমির হোসেন তার বইগুলোর প্রসঙ্গ তুলে মাহমুদুর রহমানকে প্রশ্ন করেন, ‘‘আপনি কেন শেখ হাসিনার ভালো কাজগুলো উল্লেখ না করে শুধুমাত্র তার প্রতি বিদ্বেষপ্রসূতভাবে বইগুলো লিখেছেন?’’ এর উত্তরে মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘‘আমার লেখা ‘The Rise of Indian Hegemon in South Asia’ বইটি আমার পিএইচডি থিসিস। পিএইচডি থিসিসে কেউ বিদ্বেষপ্রসূত হয়ে লেখে না।’’

এরপর আইনজীবী অ্যাডভোকেট আমির হোসেন আরও বলেন, ‘‘আপনি ব্যক্তিগত বিদ্বেষ ও জিঘাংসার কারণে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছেন।’’ তবে, মাহমুদুর রহমান এই অভিযোগও অস্বীকার করেন এবং বলেন, ‘‘আমার সাক্ষ্য ও বই লেখার পেছনে কোনো ধরনের ব্যক্তিগত বিদ্বেষ নেই।’’

বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদার এবং ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী এই মামলার শুনানিতে উপস্থিত ছিলেন। মাহমুদুর রহমানের জেরার পর, ৪৬তম সাক্ষী হিসেবে নাহিদ ইসলাম, জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক, বুধবার বিকালে সাক্ষ্য দেবেন বলে জানা গেছে।

এছাড়া, মাহমুদুর রহমানের সাক্ষ্যগ্রহণের পর ট্রাইব্যুনালের প্রধান কৌঁসুলি মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, ‘‘আজকের সাক্ষ্যগ্রহণের মাধ্যমে ৪৬ জনের সাক্ষ্য শেষ হয়েছে। পরবর্তী সাক্ষী হিসেবে নাহিদ ইসলাম উপস্থিত হবেন।’’

এই মামলায় পলাতক আসামিরা— শেখ হাসিনা এবং আসাদুজ্জামান খান কামাল। তাদের বিরুদ্ধে কমান্ড রেসপন্সিবিলিটির অভিযোগ আনা হয়েছে।

শেষে, ট্রাইব্যুনাল আগামী দিনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে, যেখানে আরো সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *