ঢাকার অভিজাত রেস্টুরেন্ট থেকে শুরু করে কমিউনিটি সেন্টার—সবখানেই এখন নতুন ট্রেন্ড ‘ডরি ফিশ ফ্রাই’। পার্টি, বিয়ে কিংবা পারিবারিক আয়োজনে এই খাবার যেন অপরিহার্য। শিশু থেকে বয়স্ক—সবার পছন্দের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে এই জনপ্রিয় মাছ। শুধু স্বাদ নয়, পুষ্টিগুণের কারণেও সামুদ্রিক এই মাছকে বলা হয় স্বাস্থ্যসম্মত। কিন্তু প্রশ্ন হলো—চড়া দামে যে ডরি ফিশ কিনে খাচ্ছেন, সেটি কি সত্যিই সামুদ্রিক ডরি নাকি অন্য কিছু?
বাংলাদেশ প্রতিদিনের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য—রেস্টুরেন্টে পরিবেশিত অধিকাংশ ডরি ফিশ আসলে কেমিক্যালে প্রক্রিয়াজাত পাঙ্গাস মাছ।
সরাসরি অনুসন্ধানে দেখা গেছে, রাজধানীর কারওয়ান বাজারের কিচেন মার্কেটে দুই ব্যক্তি মাছের মাথা, কাঁটা ও চামড়া আলাদা করে স্তুপ করে রাখছেন। প্রথমে দেখে বোঝার উপায় নেই এটি কোন মাছ। কিন্তু খোঁজ নিয়ে জানা গেল, সেটি পাঙ্গাস—যা বিশেষ প্রক্রিয়ায় ডরি ফিশে রূপান্তর করা হচ্ছে।
দোকানের কর্মচারীরা জানিয়েছেন, এই মাছ মূলত খাদ্য ও পোষা প্রাণীর খাবার হিসেবে বিক্রি হয়। তবে দীর্ঘ সময় পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, সেই মাছই ডরি ফিশের নামে বিক্রি হচ্ছে। বাজারের “ফিশ বাংলা মৎস্যবিদ্যান” নামের দোকান থেকে প্রতিদিন প্রায় ৪০০ কেজি মাছ কাটা হয় এবং পাঠানো হয় রাজধানীর গুলশান, বনানী, মহাখালী ও ধানমন্ডির রেস্টুরেন্টগুলোতে।
একজন কর্মচারী জানান, “প্রতিদিন সকালে অর্ডার পাই। বাসা-বাড়ি, হোটেল, রেস্টুরেন্ট—সব জায়গায় যায় এই মাছ। আমরা শুধু কাটাকাটি আর প্যাকেট করে দিই।”
তবে দোকান মালিকের দাবি, এটি মাত্র এক মাস আগে শুরু করা ব্যবসা। তার বক্তব্য, “পোলাপানের খাওয়ার লাইগা বিক্রি করি। কুকুর পালে, বিড়াল পালে অনেকে নেয়। হোটেলে আমরা দিই না।”
কিন্তু অনুসন্ধানী দল ক্রেতা সেজে গিয়ে দেখেছে, বিশেষ কেমিক্যাল ব্যবহার করে পাঙ্গাস মাছকে ডরির মতো রং ও স্বাদ দেওয়া হচ্ছে। ওই কেমিক্যাল মাছের ভেতরে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়, যাতে খেতে মনে হয় এটি আসল সামুদ্রিক ডরি।
আরও উদ্বেগজনক তথ্য হলো—রাজধানীর একাধিক অভিজাত রেস্টুরেন্ট এসব মাছ কিনে জেনেশুনেই পরিবেশন করছে ডরি ফিশ ফ্রাই নামে।
একজন স্থানীয় মাছ ব্যবসায়ী বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, “এই বাজারে পাঙ্গাস বিক্রি হইতেছে ডরি ফিশ কইয়া। আমি জীবনেও আসল ডরি দেখি নাই।”
ফলে এখন বড় প্রশ্ন—রেস্টুরেন্টে গিয়ে আপনি যে ডরি ফিশ ফ্রাই খাচ্ছেন, সেটি আসলে সামুদ্রিক ডরি, নাকি কেমিক্যালে প্রক্রিয়াজাত পাঙ্গাস?
এমন প্রতারণা শুধু ভোক্তা নয়, জনস্বাস্থ্যের জন্যও মারাত্মক ঝুঁকির কারণ হয়ে উঠছে।