চট্টগ্রাম বন্দরের কন্টেনার সংকট: ১০ হাজারের বেশি কন্টেনার বন্দরের ইয়ার্ডে আটকে, জরুরি পদক্ষেপের দাবি

চট্টগ্রাম বন্দরের গুরুত্বপূর্ণ ইয়ার্ডে ১০ হাজারের বেশি কন্টেনার আটকে রয়েছে, যা বন্দরের কার্যক্রমে বিপজ্জনক সংকট তৈরি করেছে। এসব কন্টেনারের মধ্যে অনেক পণ্য ইতোমধ্যে নষ্ট হয়ে গেছে এবং অনেক পণ্যের বাজারমূল্য হারিয়ে গেছে। বিশেষ করে, কেমিক্যালস বোঝাই কন্টেনারগুলো বন্দরের জন্য জনস্বাস্থ্য এবং নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

প্রতিবেদনে জানা গেছে, এসব কন্টেনার খালাসে জটিলতা দেখা দিচ্ছে এবং এর ফলে বন্দরের উৎপাদনশীলতা হ্রাস পাচ্ছে। বিভিন্ন আইনি জটিলতা, আমদানিকারকদের অবহেলা, মিথ্যা ঘোষণা এবং প্রশাসনিক জটিলতার কারণে এই পণ্যগুলো খালাস করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে চট্টগ্রাম বন্দরের আধুনিকায়ন এবং উৎপাদনশীলতা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, যেহেতু বন্দরের ইয়ার্ডে ৫৯ হাজার টিইইউএস ধারণক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও প্রায় ৪৫ হাজার টিইইউএস কন্টেনার থাকে, যার মধ্যে ১০ হাজার কন্টেনার দীর্ঘদিন ধরে আটকা পড়েছে।

সমস্যা এবং জটিলতাগুলি:

  1. আইনি জটিলতা: অনেক কন্টেনারের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে, যা খালাসে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। আদালতে চলমান মামলার কারণে কাস্টমস বা এনবিআর (জাতীয় রাজস্ব বোর্ড) কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না।
  2. প্রশাসনিক জট: কন্টেনারগুলো খালাস করতে নানা সরকারি সংস্থার সমন্বয়ের প্রয়োজন। পরিবেশ, পুলিশ, ফায়ার সার্ভিসসহ বিভিন্ন দপ্তরের অনুমোদন ছাড়া কোনো কন্টেনার ধ্বংস বা নিলাম করা সম্ভব নয়।
  3. অবৈধ ও নিষিদ্ধ পণ্য: অনেক কন্টেনারের মধ্যে অবৈধ বা নিষিদ্ধ পণ্য রয়েছে, যা পরিবেশ ও নিরাপত্তার জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
  4. মিথ্যা ঘোষণা: অনেক পণ্যের চালান মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে আনা হয়েছিল, যা ধরা পড়লে খালাসে আরও জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে।
  5. অর্থনৈতিক ক্ষতি: বছরের পর বছর আটকে থাকা কন্টেনারগুলো আমদানিকারকদের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, পাশাপাশি সরকারের রাজস্ব আদায়েও নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।

সরকারী পদক্ষেপ:

চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষ ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে, যেমন:

  • বিশেষ আদেশ: এনবিআর গত মে মাসে এক আদেশ জারি করে, যেখানে বলা হয়েছে ২০১৩ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত আটকে থাকা কন্টেনারগুলো দ্রুত নিলাম বা ধ্বংস করতে হবে।
  • নিলাম উদ্যোগ: কিছু কন্টেনার নিলাম করা হলেও, যেহেতু সংখ্যাটি অনেক বেশি, তাই বিশাল একটি পরিকল্পনা গ্রহণের প্রয়োজন।

বিশেষ ক্রাশ প্রোগ্রামের প্রস্তাব:

চট্টগ্রাম কাস্টমসের একজন কর্মকর্তা জানান, যেহেতু এসব কন্টেনারের সংখ্যা অত্যন্ত বেশি এবং বিষয়টি দীর্ঘমেয়াদী, তাই বিশেষ ক্রাশ প্রোগ্রাম চালু করার প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে। এই প্রোগ্রামে সরকারকে একটি দ্রুত, শক্তিশালী ও কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে, যাতে একযোগে কন্টেনারের সংকট সমাধান করা যায়।

এই সংকটের সমাধান না হলে কেবল বন্দরের কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটবে না, বরং আমদানিকৃত পণ্য নষ্ট হওয়ার কারণে রাষ্ট্রীয় রাজস্বও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *