চট্টগ্রাম বন্দরে ব্রাজিল থেকে আসা স্ক্র্যাপ লোহার একটি কনটেইনারে বিপজ্জনক তেজস্ক্রিয় পদার্থের উপস্থিতি শনাক্ত হয়েছে। বন্দরের ‘মেগাপোর্ট ইনিশিয়েটিভ রেডিয়েশন ডিটেকশন সিস্টেম’-এর মাধ্যমে এই তেজস্ক্রিয়তা ধরা পড়ে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক জানান, গত বুধবার বন্দরের ৪ নম্বর গেট দিয়ে কনটেইনারটি ছাড় করানোর সময় রেডিয়েশন শনাক্তকারী যন্ত্র তেজস্ক্রিয়তার সংকেত দেয়। এরপর অন্তত দুই দফা পরীক্ষায় তিন ধরনের তেজস্ক্রিয় উপাদান—থোরিয়াম-২৩২, রেডিয়াম-২২৬ এবং ইরিডিয়াম-১৯২ চিহ্নিত করা হয়।
প্রাথমিকভাবে রেকর্ডকৃত মাত্রা এক মাইক্রোসিভার্ট হলেও, নিরাপত্তাজনিত কারণে কনটেইনারটির ছাড়পত্র স্থগিত রেখে আলাদা স্থানে সরিয়ে রাখা হয়েছে। চট্টগ্রাম কাস্টমস জানিয়েছে, আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানকে উপাদানগুলোর উৎস ও প্রকৃতি সম্পর্কে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে।
বন্দর কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, এটি চট্টগ্রাম বন্দরে তেজস্ক্রিয় পদার্থ শনাক্তের দ্বিতীয় ঘটনা। এর আগে ২০১৪ সালে একটি কনটেইনারে রেডিয়াম-বেরিলিয়াম শনাক্ত হয়েছিল।
এই ঘটনার পর চট্টগ্রাম কাস্টমস এবং পরমাণু শক্তি কমিশনের মধ্যে যোগাযোগ করা হয়েছে। কমিশনের বিশেষজ্ঞরা তদন্ত করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন।
কাস্টমসের যুগ্ম কমিশনার মোহাম্মদ মারুফুর রহমান জানান, ব্রাজিল থেকে আসা পাঁচটি স্ক্র্যাপ লোহার কনটেইনারের একটি—যেটি ঢাকার ডেমরার লোহা প্রক্রিয়াকরণ প্রতিষ্ঠান আল আকসা স্টিল লিমিটেড আমদানি করেছে—তাতে তেজস্ক্রিয়তা ধরা পড়ে। ৩ আগস্ট এমভি মাউন্ট ক্যামেরন জাহাজের মাধ্যমে এটি বন্দরের জিসিবি ৭ নম্বর জেটিতে পৌঁছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, স্ক্র্যাপের ভেতরে পুরোনো শিল্প যন্ত্রাংশ বা চিকিৎসা সরঞ্জামের মাধ্যমে এসব তেজস্ক্রিয় উপাদান আসতে পারে, যা ভুল ব্যবহারে বড় ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করতে পারে। বিশেষ করে ইরিডিয়াম-১৯২ উপাদানটি অত্যন্ত উদ্বেগজনক বলে উল্লেখ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
তবে কাস্টমস কর্মকর্তারা বলছেন, বর্তমানে শনাক্তকৃত মাত্রা তাৎক্ষণিকভাবে উচ্চঝুঁকিপূর্ণ না হলেও, পরিস্থিতি মূল্যায়ন না হওয়া পর্যন্ত সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে কনটেইনারটি নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে রাখা হয়েছে।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম বন্দরে আমেরিকান সহায়তায় স্থাপিত মেগাপোর্ট ইনিশিয়েটিভ সিস্টেম দীর্ঘদিন ধরেই বিদেশি কনটেইনারে তেজস্ক্রিয় উপাদান শনাক্তে কার্যকর ভূমিকা রাখছে।