আড়াই বিলিয়ন ডলারে নির্মিত বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রায় অচল অবস্থায়

পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় নির্মিত ১,৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি চালু হলেও পূর্ণ উৎপাদনে যেতে পারছে না কয়লা সরবরাহ নিয়ে জটিলতার কারণে। দীর্ঘমেয়াদে কয়লা আমদানির জন্য ডাকা চতুর্থ দফার দরপত্রও বাতিল করেছে কর্তৃপক্ষ। দরপত্র প্রক্রিয়ায় নানা অনিয়ম ও ত্রুটির অভিযোগ তুলে মূল্যায়ন কমিটি এটি বাতিলের সুপারিশ করে। একইসঙ্গে পুনরায় নতুন দরপত্র আহ্বানের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

চতুর্থ দফায়ও দরপত্র বাতিল হওয়ায় এ প্রকল্পের ভবিষ্যৎ উৎপাদন নিয়ে নতুন করে বড় ধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে আরএনপিএল (আরপিসিএল-নরিনকো ইন্টারন্যাশনাল কোম্পানি লিমিটেড) বরাবর পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, কারিগরি ও আর্থিক মূল্যায়নের বিভিন্ন পর্যায়ে অনিয়ম পাওয়া গেছে। ভবিষ্যতে টেন্ডার প্রক্রিয়া আরও স্বচ্ছ ও প্রতিযোগিতামূলক করতে কয়লার মান, ক্যালরিফিক ভ্যালু, অ্যাশ ফিউশন টেম্পারেচার ইত্যাদি স্পেসিফিকেশন আরও স্পষ্টভাবে উল্লেখ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

তথ্য অনুযায়ী, বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির জন্য ২০২২ সাল থেকে চারবার দরপত্র আহ্বান করা হলেও প্রতিবারই নানা জটিলতায় তা বাতিল হয়েছে। একাধিকবার সিঙ্গাপুরভিত্তিক ইয়াংথাই এনার্জি দরপত্রে অংশ নিলেও শেষ পর্যন্ত আর্থিক মূল্যায়নে ত্রুটি দেখিয়ে তাদের প্রস্তাবও বাতিল করা হয়।

বর্তমানে কেন্দ্রটির দুটি ইউনিট প্রস্তুত থাকলেও পর্যাপ্ত কয়লা সরবরাহ না থাকায় মাত্র ৩০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে। অথচ এ প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে প্রায় ২ দশমিক ৫৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যার মধ্যে ১ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন ডলার চীনের ঋণ। চুক্তি অনুযায়ী প্রকল্প শেষ হওয়ার ছয় মাস পর থেকে ঋণ পরিশোধ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও এখনো বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হয়নি, যা সরকারকে বড় অঙ্কের লোকসানে ফেলতে পারে।

এছাড়া, কেন্দ্রটি ব্যবহার না করলেও সরকারকে ক্যাপাসিটি পেমেন্ট হিসেবে বিপুল অর্থ পরিশোধ করতে হচ্ছে, যা বিদ্যুৎ খাতে ব্যয় বাড়িয়ে দিচ্ছে এবং সেই বোঝা জনগণের ওপর ভর্তুকির মাধ্যমে পড়ছে।

জ্বালানি আমদানি ও সরবরাহে এই স্থবিরতার কারণে কেন্দ্রটির উৎপাদন পুরোপুরি অনিশ্চয়তায় পড়ে গেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এই পরিস্থিতিতে সরকার ও আরএনপিএল কর্তৃপক্ষ দ্রুত কার্যকর সিদ্ধান্ত না নিলে কয়লা সংকটে কোটি কোটি টাকার বিনিয়োগে গড়ে ওঠা কেন্দ্রটি পরিণত হতে পারে প্রায় অচল একটি প্রকল্পে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *