ধর্মবিষয়ক উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেছেন, ধর্মকে ব্যবহার করে কেউ কটূক্তি করলে বা সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ছড়িয়ে সহিংসতায় জড়ালে তাকে আইনের আওতায় আনা হবে। অপরাধ করে কেউ পার পাবে না—সরকার আইন অনুযায়ী অপরাধীর বিচার করবে।
সোমবার (১৮ আগস্ট) চট্টগ্রামের পিটিআই অডিটোরিয়ামে হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট চট্টগ্রামের আয়োজনে অনুষ্ঠিত এক জেলা কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। কর্মশালার বিষয় ছিল, ‘টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জন এবং নৈতিক শিক্ষার প্রসারে মন্দিরভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রমের ভূমিকা’।
ড. খালিদ বলেন, ধর্মীয় অবমাননা, গুজব ছড়িয়ে উত্তেজনা তৈরি করা বা একজনের অপরাধে গোটা সম্প্রদায়কে দায়ী করা কোনো ধর্মেই অনুমোদিত নয়। এটি শুধু ঘৃণার জন্ম দেয় না, অপরাধ হিসেবেও গণ্য হয়। সামাজিক মাধ্যমে ধর্ম নিয়ে বিদ্বেষমূলক মন্তব্য কিংবা উত্তেজনা ছড়িয়ে সহিংসতায় জড়ানোর ঘটনাগুলো গুরুতর অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে—এমন হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, “অপরাধীকে অপরাধী হিসেবেই দেখা হবে, তার ধর্মীয়, সামাজিক বা রাজনৈতিক পরিচয় নয়। বাংলাদেশে ধর্মীয় সহাবস্থানের যে সংস্কৃতি রয়েছে, তা আমাদের গর্বের বিষয়। সম্প্রতি জন্মাষ্টমী অনুষ্ঠানও সব ধর্মের মানুষ মিলেই উদযাপন করেছে।”
অনুষ্ঠানে উপস্থিত বক্তারা দেবোত্তর সম্পত্তি উদ্ধার, সীতাকুণ্ডের চন্দ্রনাথ মন্দিরে সিঁড়ি নির্মাণ, শিক্ষক সম্মানী বাড়ানো এবং প্রকল্পের জনবল রাজস্বখাতে অন্তর্ভুক্তির দাবি জানান।
উক্ত দাবির প্রেক্ষিতে উপদেষ্টা বলেন, নির্দিষ্ট সম্পত্তি যদি বেহাত হয় এবং মামলা-মোকদ্দমামুক্ত হয়, তবে তা আইনি প্রক্রিয়ায় উদ্ধার করা হবে। সীতাকুণ্ডের সিঁড়ি নির্মাণ নিয়েও মন্দির কমিটির সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি জানান, মসজিদভিত্তিক শিক্ষা প্রকল্পে শিক্ষকদের সম্মানী ৬ হাজার টাকায় উন্নীত হয়েছে। পরবর্তী বাজেটে মন্দিরভিত্তিক প্রকল্পের শিক্ষক সম্মানীও একই হারে বৃদ্ধির জন্য উদ্যোগ নেওয়া হবে।
এছাড়া মন্দিরগুলোকে শুধু উপাসনালয় হিসেবে না দেখে সমাজসেবামূলক প্রতিষ্ঠান হিসেবেও গড়ে তোলার আহ্বান জানান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, অনাথ, বিধবা, অসুস্থ ও হতদরিদ্রদের জন্য মন্দিরে যেন সেবা পাওয়ার সুযোগ থাকে। দরিদ্র শিক্ষার্থীদের সহায়তার জন্য আবেদন গ্রহণের ব্যবস্থাও থাকবে, এবং সরকারের পক্ষ থেকে সে সাহায্য দেওয়া সম্ভব—এমন আশ্বাসও দেন তিনি।
দেশপ্রেম প্রসঙ্গে ড. খালিদ বলেন, যারা দেশের অর্থ বিদেশে পাচার করে, তারা কখনোই দেশপ্রেমিক হতে পারে না। প্রকৃত দেশপ্রেমিক হতে হলে দেশের মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মো. শরিফ উদ্দিন। আরও উপস্থিত ছিলেন প্রকল্প পরিচালক ও ধর্ম মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব ড. শ্রীকান্ত কুমার চন্দ, ট্রাস্টি দীপক কুমার পালিত, ববি বড়ুয়া, পরিমল কান্তি শীল, সরকার সারোয়ার আলম, রিংকু কুমার শর্মা প্রমুখ।