বরিশালের মোস্তফা বলেন, ‘আমার নৌকায় উঠে অনেকেই বলে, বিমানে উঠছিলাম’

৩২ বছর ধরে ইঞ্জিন মেরামতের কাজ করি। এলাকায় ওয়ার্কশপ আর ছোট একটা ডকইয়ার্ড আছে আমার। ওয়ার্কশপে এর আগে কৃষকের জন্য ভাসমান পাওয়ার টিলার, স্টিলের লাঙলসহ বিভিন্ন জিনিস তৈরি করেছি। আর ডকইয়ার্ডে অর্ডার পেলে ট্রলার তৈরি করি।

ওয়ার্কশপে কাজ করতে অনেক সময় রাত হয়ে যায়। রাত জেগে কাজ করার সময় আকাশে বিমানের আসা-যাওয়া দেখি। সেখান থেকেই বিমানের আদলে নৌকা বাড়ানোর ইচ্ছা হয়। আগেও যেহেতু নানা কিছু বানিয়েছি, সেই ধারাবাহিকতায় বিমানের আদলে নৌকা বানানোর কাজ শুরু করি।

নৌকার ডিজাইন থেকে শুরু করে খুঁটিনাটি সবকিছু আমিই বানিয়েছি। ওয়ার্কশপের কাজের ফাঁকে ফাঁকে এসব করতাম। যেহেতু বানানোর ক্ষেত্রে তাড়া ছিল না। তাই টাকা জোগাড় করে ধীরে ধীরে কাজ করতাম। এ জন্য বানাতে বানাতে সব মিলিয়ে দুই বছরের মতো সময় লেগেছে। তবে নগদ টাকা থাকলে আর টানা কাজ করলে দুই মাসেই তৈরি করা সম্ভব হতো।

পুরো নৌকাটাই স্টিলের। ১৬ হর্স পাওয়ারের ডিজেল ইঞ্জিন ব্যবহার করেছি। ভেতরে যাতে গরম না হয়, তাই দুটি ফ্যানের ব্যবস্থা করেছি। লাইট লাগিয়েছি। সব মিলিয়ে খরচ হয়েছে ২ লাখ ৭০ হাজার টাকা।

বানানো শেষে দেড় বছর আগে এটি সন্ধ্যা নদীতে ভাসিয়েছি। তখন থেকে নিজেই এই নৌকা নিয়ে এদিক-সেদিক যাই। ১০–১২ জন নিয়ে সুন্দরভাবে চালানো যায়। তবে সর্বোচ্চ ১৮ জন নিয়েও চালিয়েছি। আপনারা ফেসবুকে আমার নৌকার যে ভিডিও দেখেছেন, সেটা উদ্বোধনের সময়ের।

ভিডিও দেখে এখন অনেকেই আসেন নৌকা দেখতে। কেউ কেউ আসেন একটু ঘুরে বেড়ানোর জন্য। আমার নৌকায় উঠে পোলাপান শান্তি পায়, বিমানে ওঠার মতো মজা পায়। আসলে অনেক মানুষ আছেন, যাঁরা বিমানে চড়তে পারবেন না; আমার নৌকায় চড়লে তাঁদের শখ পূরণ হয়। বাড়িতে গিয়ে আনন্দিত হয়ে তাঁরা বলেন, ‘বিমানে উঠছিলাম।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *