ক্যানসার স্ক্রিনিং কী? সব ক্যানসার কি স্ক্রিনিং করা যেতে পারে? কার কার ক্ষেত্রে ক্যানসার স্ক্রিনিং প্রয়োজন? এ ধরনের অনেক প্রশ্ন রয়েছে ক্যানসার স্ক্রিনিং নিয়ে। ক্যানসার আছে বা হতে পারে কি না, তা কীভাবে বুঝবেন এবং কী পরীক্ষা করাবেন, তা নিয়ে দ্বিধায় ভোগেন অনেকে।
কোনো উপসর্গ দেখা দেওয়ার আগে যেসব পরীক্ষা করে ক্যানসারের আশঙ্কা বা উপস্থিতি যাচাই করা যায় তা–ই হলো ক্যানসার স্ক্রিনিং। স্ক্রিনিংয়ের প্রথম দিকে ক্যানসার ধরা পড়লে এর চিকিৎসা বা নিরাময় করা সহজ হয়। আর একবার ক্যানসার লক্ষণীয় হয়ে ওঠার পর দশের মধ্যে নয়টি ক্ষেত্রে অনেক দেরি হয়ে যায়। তবে সব ধরনের ক্যানসার আসলে স্ক্রিনিং করা যায় না। তবে দুটি পরিচিত এবং প্রাণঘাতী ক্যানসার এবং যেগুলো নারীদের আক্রান্ত করে, সেগুলো স্ক্রিনিংয়ের আগেভাগেই শনাক্ত করা সম্ভব।
বাংলাদেশে নারীরা সবচেয়ে বেশি জরায়ুমুখের ক্যানসারে আক্রান্ত হন। এই ক্যানসার স্ক্রিনিং করে ও ভ্যাকসিন দিয়ে প্রায় সম্পূর্ণরূপে প্রতিরোধ করা যেতে পারে। স্তন, জরায়ুমুখ ও কোলন (বৃহৎ অন্ত্র) ক্যানসার তেমন উপসর্গ ছাড়াই প্রকাশ পেতে পারে অথচ স্ক্রিনিং করা সম্ভব। অন্যান্য ক্যানসার যা স্ক্রিনিং করা যেতে পারে তা হলো প্রোস্টেট (পুরুষদের মধ্যে), ফুসফুস (ধূমপায়ীদের মধ্যে) এবং ত্বকের ক্যানসার। এটা মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে আপনার চিকিৎসক যখন ক্যানসার স্ক্রিনিংয়ের পরামর্শ দেন, তার মানে এই নয় যে আপনার ক্যানসার হয়েছে। তাই আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। যেসব দেশে ক্যানসার স্ক্রিনিং নিয়মিতভাবে হয়, সেখানে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক জীবন রক্ষা করা সম্ভব হয়েছে।
নানা ধরনের স্ক্রিনিং
বিভিন্ন ধরনের স্ক্রিনিং পরীক্ষা আছে। যেমন শারীরিক পরীক্ষা (ব্রেস্ট এক্সামিনেশন)। কিছু ল্যাব পরীক্ষা, যেমন রক্ত, প্রস্রাব, মলের নমুনা পরীক্ষা; ইমেজিং পদ্ধতি, যেমন স্ক্যান, এক্স-রে বা ম্যামোগ্রাফি, আলট্রাসাউন্ড; ইনভেসিভ পরীক্ষা, যেমন এন্ডোস্কপি বা কলোনোস্কপি। স্তন ক্যানসার স্ক্রিনিংয়ের জন্য ৪৫ থেকে ৭৫ বছর বয়সী সব নারীকে ম্যামোগ্রাফি দিয়ে স্ক্রিনিং করার পরামর্শ দেওয়া হয়। ২০ থেকে ৫০ বছর বয়সী নারীদের প্রতি মাসে একবার স্তন পরীক্ষা এবং ৫০ বছর বয়স থেকে ম্যামোগ্রাম করাতে হবে। জরায়ুমুখ ক্যানসারের স্ক্রিনিংয়ের জন্য ২০ থেকে ৬০ বছর বয়সী সব নারীর (যাঁরা যৌন সক্রিয় ছিলেন) জন্য একটি প্যাপস্মিয়ার সুপারিশ করা হয়। প্রতি তিন বছরে একটি প্যাপস্মিয়া পরীক্ষা যথেষ্ট। যদি প্যাপস্মিয়া এবং এইচপিভি উভয় পরীক্ষা (একই নমুনায়) করা হয়, তাহলে প্রতি পাঁচ বছরে একটি পরীক্ষা যথেষ্ট। মলাশয়ের ক্যানসারের জন্য ৫০ থেকে ৭০ বছর বয়সী সব প্রাপ্তবয়স্কের জন্য বছরে একবার পরীক্ষার জন্য মলের নমুনা পাঠানোর মাধ্যমে স্ক্রিনিং করার প্রয়োজন রয়েছে।এ ছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের, যেমন ধূমপায়ী, পরিবারে কোলন ক্যানসারের ইতিহাস ইত্যাদি থাকলে চিকিৎসক নানা ধরনের স্ক্রিনিংয়ের পরামর্শ দিতে পারেন।