বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে এবার একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা, একাংশের শিক্ষকদের সংহতি

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শুচিতা শরমিনের পদত্যাগের দাবিতে আজ বৃহস্পতিবারও বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। এ সময় আগামী সোমবার থেকে সেমিস্টার পরীক্ষা ছাড়া অন্যান্য পরীক্ষা ও পাঠদান কার্যক্রম বন্ধের ঘোষণা দেন তাঁরা। এতে সংহতি প্রকাশ করেছে শিক্ষকদের একটি অংশ।এর আগে গত মঙ্গলবার প্রশাসনিক ভবনের সব বিভাগের ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেন শিক্ষার্থীরা। পরে বুধবার উপাচার্যের বাসভবনের কর্মচারী ও নিরাপত্তারক্ষীদের বের করে দিয়ে মূল ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়।

আজ সাড়ে বেলা ১১টার দিকে প্রশাসনিক ভবনের নিচতলায় অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। পরে ছাত্র-শিক্ষক সংহতি সমাবেশের ব্যানারে বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়ক ও ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়ে অংশ নেয় সিন্ডিকেট ও একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্য পদ থেকে সম্প্রতি বাদ দেওয়া ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক মুহসিন উদ্দীন, কোস্টাল স্টাডিজ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হাফিজ আশরাফুল হক, লোকপ্রশাসন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সিরাজিস সাদিক, বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মহসিনা হুসাইন, সমাজকর্ম বিভাগের মোস্তাকিম মিয়াসহ কয়েকজন শিক্ষক।

এ সময় উপাচার্য শুচিতা শরমিনকে ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও ছাত্রদলের নেতা মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘স্বৈরাচার উপাচার্যের পদত্যাগ চাই। আমাদের আগামী কর্মসূচি থাকবে উপাচার্যকে বাদ দিয়ে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা সফলভাবে সম্পন্ন করা এবং শনিবার সন্ধ্যায় মশাল মিছিল করা।’ তিনি বলেন, শিক্ষার্থী ও শিক্ষকেরা আন্দোলনে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন। উপাচার্য পদত্যাগ না করা পর্যন্ত আগামী সোমবার শুধু পরীক্ষা কার্যক্রম ব্যতীত পাঠদান, মিডটার্ম পরীক্ষা ও প্রশাসনিক সব কার্যক্রম বন্ধ থাকবে।

কোস্টাল স্টাডিজ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হাফিজ আশরাফুল হক বলেন, শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবির আন্দোলনকে দমানোর জন্য তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করা স্বৈরাচারের শামিল। এ ছাড়া উপাচার্য অনেক শিক্ষকের পদোন্নতি ঝুলিয়ে রেখেছেন। এতে শিক্ষকদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। তিনি বলেন, উপাচার্যের স্বৈরাচারী, অপেশাদার আচরণ ও অদক্ষতার কারণে বিশ্ববিদ্যালয় দিন দিন চরম অধঃপতনের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের সব যৌক্তিক দাবির সঙ্গে তাঁরা একাত্মতা পোষণ করছেন।

আইন বিভাগের শিক্ষার্থী এস এম ওয়াহিদুর রহমান বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষার্থীর সম্মতিতে আমরা প্রশাসনিক শাটডাউন করেছি। ইতিমধ্যে বিভিন্ন বিভাগ ও শিক্ষকেরা উপাচার্যের পদত্যাগ ও যৌক্তিক দাবির পক্ষে সংহতি প্রকাশ করেছেন।’

গত ২৭ এপ্রিল অধ্যাপক মুহসিন উদ্দীনকে পুনর্বহাল, রেজিস্ট্রার মনিরুল ইসলামকে অপসারণসহ চার দাবিতে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। তাঁরা রেজিস্ট্রারকে ‘ফ্যাসিবাদের দোসর’ দাবি করে কুশপুত্তলিকা দাহ করেন এবং রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে তালা দেন। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী রেজিস্ট্রার (নিরাপত্তা) কে এম সানোয়ার পারভেজ ১০ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাতনামা ১০ থেকে ১২ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। এরই ধারাবাহিকতায় গত শনিবার ঢাকায় সিন্ডিকেট সভায় মনিরুল ইসলামকে অপসারণ করা হয়। রোববার উপাচার্য শুচিতা শরমিন সংবাদ সম্মেলন করে ওই সিদ্ধান্তের কথা জানান। সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীরা মুচলেকা দিলে তাঁদের বিরুদ্ধে করা মামলা ও জিডি প্রত্যাহার করা হবে বলে জানান। একই সঙ্গে সিন্ডিকেট সভায় ফ্যাসিবাদী সরকারের সমর্থক শিক্ষক-কর্মকর্তাদের চিহ্নিত ও ব্যবস্থা নিতে একজন সিন্ডিকেট সদস্যকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলেও জানান উপাচার্য।

উপাচার্যের সংবাদ সম্মেলনের পর দুপুরে পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। এতে তাঁরা উপাচার্যের পদত্যাগ চেয়ে এক দফার আন্দোলনের কর্মসূচি দেন। পঞ্চম দিনের মতো আজ সেই দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত রেখেছেন শিক্ষার্থীরা। উপাচার্য শুচিতা শরমিন সোমবার থেকে ঢাকায় অবস্থান করছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *