‘বিষণ্ণ দ্বীপ’

নরওয়ের আর্কটিক দ্বীপ সোয়ালবার্ড তার অনন্য এবং রহস্যময় নিয়মের জন্য বিখ্যাত। এটি বিশ্বের একমাত্র স্থান যেখানে মানুষের জন্ম এবং মৃত্যু নিষিদ্ধ। সূর্যহীন শীতের মাসগুলো হতাশার ঝুঁকি বৃদ্ধি পায় বলে এটি ‘বিষণœ দ্বীপ’ নামে পরিচিত। ৪০টিরও বেশি দেশ দ্বারা অনুমোদিত ১৯২০ সালের সোয়ালবার্ড চুক্তি দ্বারা পরিচালিত হয় সোয়ালবার্ড।
নরওয়ের এই দ্বীপে স্থায়ী হাসপাতাল এবং অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার ব্যবস্থা নেই। গর্ভবতী মহিলাদের ৩৬ সপ্তাহ পর নরওয়ের মূল ভূখ-ের ট্রমসোতে স্থানান্তর করা হয় এবং মৃতদেরও সেখানে স্থানান্তর করা হয়। এই নিয়মগুলো কেবল জীবনচক্র পরিচালনা করে না বরং দ্বীপের ভঙ্গুর বাস্তুতন্ত্রকেও রক্ষা করে। ইউরোপের উত্তর প্রান্ত থেকে ১ হাজার কিলোমিটার দূরে ব্যারেন্টস সাগরে অবস্থিত সোয়ালবার্ড দ্বীপপুঞ্জ। এর প্রধান শহর হল লংইয়ারবিয়েন, যেখানে প্রায় ২ হাজার ৫০০ জন লোক বাস করেন। বাসিন্দাদের মধ্যে প্রধানত বিজ্ঞানী, খনি শ্রমিক এবং পর্যটক।

এখানে পরিবার শুরু করা বা জীবনের শেষ কয়েকটা দিন কাটানো নিষিদ্ধ। একজন স্থানীয় ডাক্তার ব্যাখ্যা করলেন, আমাদের একটি মৌলিক চিকিৎসা পরিষেবা আছে কিন্তু জটিল প্রসব বা জীবনের শেষ পর্যায়ের যতেœর জন্য সম্পদের অভাব রয়েছে। রোগীদের তাৎক্ষণিকভাবে বিমানের মাধ্যমে ট্রমসোতে পাঠানো হয়।
২০১৭ সালে একজন মহিলা দ্বীপে সন্তান প্রসবের চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু নিয়ম মেনে তাকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। একইভাবে, ২০২৩ সালে মৃত্যুর সময় একজন বয়স্ক ব্যক্তিকে বিমানে করে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। এই ঘটনাগুলো বিরল, তবে নিয়মগুলো কঠোর। নরওয়েজিয়ান সরকার দাবি করে যে, স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য এই ব্যবস্থাগুলো অপরিহার্য, বিশেষ করে শীতকালে যেহেতু বিমান চলাচল বন্ধ থাকে।
সোয়ালবার্ডের ইতিহাসও সমানভাবে আকর্ষণীয়। প্রাথমিকভাবে ষোড়শ শতাব্দীতে তিমি শিকারের জন্য আবিষ্কৃত হলেও, পরে এটি কয়লা খনির কেন্দ্র হয়ে ওঠে। ১৯৯০ সাল থেকে পরিবেশ সুরক্ষা মূল উদ্দেশ্য হয়ে ওঠে। বিশ্বের বৃহত্তম বীজ সংরক্ষণ কেন্দ্র গ্লোবাল সিড ভল্ট এখানেই অবস্থিত। যেখানে ১ বিলিয়নেরও বেশি বীজ রয়েছে। এর ফলে এটিকে ‘ডুমসডে আর্ক’ নামে ডাকা হয়ে থাকে। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে ফসল রক্ষার জন্য এই ভল্টটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
দ্বীপে মানুষের কার্যকলাপ নিষিদ্ধ। কুকুর পালন এবং প্লাস্টিকের ব্যাগ ব্যবহার নিষিদ্ধ। জন্ম ও মৃত্যু নিয়ম নিশ্চিত করে যে কোনো নতুন কবরস্থান তৈরি করা হবে না, যা মাটি দূষণ রোধ করবে। যদিও সোয়ালবার্ডে ইতোমধ্যেই ১ হাজারটিরও বেশি কবর রয়েছে, তবুও কোনো নতুন কবর তৈরি করা হয় না এবং মৃতদের কবর দেওয়ার জন্য মূল ভূখ- নরওয়েতে নিয়ে যাওয়া হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *