নয়াদিল্লি ও ইসলামাবাদে বিস্ফোরণ, কাকতাল নাকি ষড়যন্ত্র

এক দিনের ব্যবধানে ভারতের রাজধানী দিল্লি ও পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদে প্রায় একই ধাঁচের বিস্ফোরণে প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। শুরু হয়েছে তদন্ত। সেই সঙ্গে ফিরে এসেছে শত্রুভাবাপন্ন প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে দোষারোপ এবং হুমকির রাজনীতিও।

পাকিস্তান ইসলামাবাদে বিস্ফোরণের জন্য এরই মধ্যে সরাসরি ভারতকে দায়ী করে তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। আবার সরকারিভাবে সরাসরি কিছু না বলা হলেও দিল্লিতে গাড়ি বিস্ফোরণের পেছনেও পাকিস্তান সমর্থিত সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর হাত রয়েছে বলে ইঙ্গিত করছে ভারতের বিভিন্ন মহল। ফলে এরই মধ্যে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, প্রতিবেশী দুই দেশের বিস্ফোরণ কি কাকতালীয় ঘটনা, নাকি এর সঙ্গে ছায়াযুদ্ধ জড়িত। 

গত সোমবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় দিল্লির জনাকীর্ণ লালকেল্লা এলাকার মেট্রো স্টেশনের কাছে গাড়ি বিস্ফোরণে এখন পর্যন্ত ১৩ জন নিহত ও শতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন। ঠিক তার পরের দিন দুপুরে ইসলামাবাদের জেলা আদালতের সামনে একটি গাড়িতে একই ধাঁচে বিস্ফোরণে কমপক্ষে ১২ জন নিহত ও ৩৬ জন আহত হন। এর আগে সোমবারই পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়ায় ক্যাডেট কলেজের গেটে হামলা হয়েছিল। 

নয়াদিল্লি ও ইসলামাবাদে বিস্ফোরণের ঘটনাস্থল ঐতিহাসিক ও প্রশাসনিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ। সন্ত্রাসী হামলার শঙ্কায় উভয় দেশ অন্য রাজ্যগুলোতেও সতর্কতা জারি করেছে। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ বিস্ফোরণের পেছনে ভারতের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ তুলেছেন। অন্যদিকে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, দিল্লি বিস্ফোরণের পেছনে গভীর ষড়যন্ত্র আছে।

ইসলামাবাদে বিস্ফোরণের পর নিজের এক্স হ্যান্ডেলে এক পোস্টে শাহবাজ শরিফ লেখেন, ইসলামাবাদ ও খাইবার পাখতুনখোয়ার দুটি হামলাই এ অঞ্চলে ভারতের রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসবাদের নিকৃষ্টতম উদাহরণ। বিশ্বের এখন সময় এসেছে ভারতের এ ধরনের জঘন্য ষড়যন্ত্রের নিন্দা জানানোর। সন্ত্রাসবাদের অভিশাপকে সম্পূর্ণভাবে নির্মূল না করা পর্যন্ত আমরা তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাব।’ যদিও নিজের বক্তব্যের সপক্ষে কোনো তথ্যপ্রমাণ দেননি তিনি।

পাকিস্তানের এই অভিযোগের জবাব এরই মধ্যে দিয়েছে ভারত। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় দেওয়া এক বিবৃতিতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেন, ইসলামাবাদ দেশে চলমান সামরিক-অনুপ্রাণিত সাংবিধানিক নাশকতা এবং ক্ষমতা দখলের প্রচেষ্টা থেকে নিজেদের জনগণের মনোযোগ সরানোর চেষ্টা করছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বাস্তবতার বিষয়ে অবগত এবং পাকিস্তানের মরিয়া মনোযোগ সরানোর কৌশল দ্বারা তারা বিভ্রান্ত হবে না।

এদিন ভুটান সফর করে দেশে ফিরেই গতকাল বুধবার দিল্লির লোক নায়ক হাসপাতালে বিস্ফোরণে আহতদের দেখতে গেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এ সময় তিনি দিল্লি বিস্ফোরণের পেছনে জড়িতদের খুঁজে বের করে সমুচিত জবাব দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। যদিও ভারতের তদন্ত সংস্থাগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে দিল্লির বিস্ফোরণকে এখনও সন্ত্রাসবাদী হামলা বলে ঘোষণা করেনি। 

এদিকে ইসলামাবাদে বিস্ফোরণের পর আফগানিস্তানের ভেতরে লক্ষ্যবস্তুতে অভিযান চালানোর হুঁশিয়ারি দিয়েছে পাকিস্তান। গত মঙ্গলবার জিও নিউজ এক প্রতিবেদনে জানায়, পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ বলেছেন, সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী হামলার পর সীমান্ত পার হয়ে আফগানিস্তানের ভেতরে অভিযান চালানোর সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তিনি আফগান তালেবান সরকারকে অভিযুক্ত করে বলেছেন, পাকিস্তানে হামলার পেছনে থাকা সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে তারা আশ্রয় দিচ্ছে।

ইসলামাবাদভিত্তিক একজন রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক ইমতিয়াজ গুল আলজাজিরা বলেছেন, যতক্ষণ পর্যন্ত পাকিস্তান সরকার জোর দিয়ে বলবে যে, তাদের ভূমিতে সব হামলার পরিকল্পনা আফগানিস্তানে থাকা পাকিস্তান তালেবান দ্বারা করা হয়েছে, ততক্ষণ পর্যন্ত উত্তেজনা কমার সম্ভাবনা নেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *