ধূমপান কমাতে সৌদি আরবের গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ

সৌদি আরব সরকার দেশের জনস্বাস্থ্য উন্নয়নে এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে, যার লক্ষ্য হলো- ১০ লাখ ধূমপায়ীকে ধূমপান ছাড়তে সহায়তা করা। সৌদি পাবলিক ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড (পিআইএফ)-এর অর্থায়নে ২০২৩ সালে প্রতিষ্ঠিত ধূমপানত্যাগে সহায়ক প্রতিষ্ঠান বাদাইল এ উদ্যোগকে আরও গতিশীল করেছে। 

তাদের প্রধান পণ্য ডিজার্ট, এটি একটি তামাকমুক্ত নিকোটিন পাউচ; যা ধূমপায়ীদের ধূমপান ছাড়তে সহায়তা করার উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছে।

ডিজার্ট হলো প্রথম সৌদিনির্মিত পণ্য, যা ধূমপায়ীদের ধূমপান ছাড়তে সহায়তা করার উদ্দেশ্যে তৈরি হয়েছে। মাত্র দুই বছরেরও কম সময়ে প্রতিষ্ঠানটি প্রায় ৪ লাখ ধূমপায়ীকে সিগারেট থেকে দূরে রাখতে সক্ষম হয়েছে, যার মধ্যে প্রায় ১ লাখ ৪০ হাজার মানুষ সম্পূর্ণভাবে নিকোটিনের ব্যবহার বন্ধ করেছেন। এই উদ্যোগটি সৌদি আরবের দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য ‘একটি তামাকমুক্ত দেশ’ গড়ে তোলার প্রচেষ্টাকে এগিয়ে নিচ্ছে, যেখানে সরকার ক্ষতি কমানোর নীতি বা নিরাপদ বিকল্পকে জীবনের সুরক্ষায় বাস্তবসম্মত পথ হিসেবে সমর্থন দিচ্ছে।

এদিকে বাংলাদেশ এখনও এশিয়ার তামাক ব্যবহারে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর একটি। জাতীয় স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, দেশের ৩৫ শতাংশেরও বেশি প্রাপ্তবয়স্ক কোনো না কোনোভাবে তামাক ব্যবহার করেন, যার ফলে প্রতিবছর প্রায় ১ লাখ ৬০ হাজার মানুষের মৃত্যু ঘটে। বহু বছর ধরে সচেতনতামূলক প্রচারণা, প্যাকেটে ভয়াবহ সতর্কবার্তা এবং কর বৃদ্ধি সত্ত্বেও দেশে আসক্তির মাত্রা এখনও দৃঢ়ভাবে বিরাজ করছে।

বাদাইল প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সৌদি আরবে ধূমপায়ীর সংখ্যা কমাতে, যেখানে তামাকের বদলে নিরাপদ বিকল্প পণ্য সরবরাহের মাধ্যমে ‘কোয়ালিটি অব লাইফ প্রোগ্রাম’- এর লক্ষ্য পূরণে কাজ করা হচ্ছে। এই প্রোগ্রামটি সৌদি ভিশন ২০৩০-এর অন্যতম উদ্যোগ। প্রতিষ্ঠানটি এখন আশা করছে, ২০৩২ সালের মধ্যে ১০ লাখ ধূমপায়ীকে ধূমপান ছাড়াতে সাহায্য করার মূল লক্ষ্যটি তারা আরও আগেই অর্থাৎ ২০২৬ সালের মধ্যেই অর্জন করতে পারবে। ধূমপায়ীদের ধূমপান ছাড়তে সাহায্য করার সৌদি সরকারের পরিকল্পনাটি এই অঞ্চলের সবচেয়ে সাহসী ও দূরদর্শী উদ্যোগগুলোর একটি। এই পরিকল্পনা কোনো নিষেধাজ্ঞা বা শাস্তির ওপর নির্ভর না করে, বরং তামাকের আসক্তি কমাতে নিরাপদ ও বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত বিকল্প ব্যবহারের ওপর জোর দিয়েছে।

নিকোটিন পাউচ হলো আধুনিক এবং ধোঁয়াবিহীন একটি বিকল্প প্রডাক্ট। এতে তামাক নেই, জ্বালানি নেই, ধোঁয়াও নেই ফলে ফুসফুসের ক্যান্সার, হৃদরোগ ও স্ট্রোকের মতো রোগের জন্য দায়ী বেশিরভাগ ক্ষতিকর উপাদান এতে থাকে না। বিশ্বের বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, নিয়ন্ত্রিত ও নিরাপদ বিকল্প ব্যবহারই ধূমপানের মহামারি শেষ করার কার্যকর উপায় হতে পারে।

ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়ন্ত্রিত ও সঠিকভাবে ব্যবহার করা হলে নিকোটিন পাউচ জ্বালানো সিগারেটের তুলনায় অনেক কম ক্ষতিকর। 

সৌদি আরবের প্রাথমিক রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, ধূমপানজনিত রোগে হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যা কমছে এবং মানুষ ধূমপান ছাড়ার সহায়ক পণ্যগুলোর প্রতি আরও ইতিবাচক মনোভাব দেখাচ্ছে। সেখানে মানুষকে শাস্তি নয়, বরং সহায়তা করা হচ্ছে তাদের আসক্তি থেকে মুক্ত হতে। 
 
এই বছরের শুরুতে এক বছর পূর্তি উপলক্ষে বাদাইল ‘লেটস ক্লিয়ার দ্য এয়ার’ নামে একটি ধূমপানবিরোধী প্রচারণা চালু করে। এই প্রচারণায় তারা ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও সরকারি সংস্থাগুলোকে একসঙ্গে কাজ করে ধূমপানমুক্ত সমাজ গঠনের আহ্বান জানায়। 

সৌদি আরবের জনস্বাস্থ্য কৌশলের অংশ হিসেবে, কম ঝুঁকিপূর্ণ ডিজার্ট-এর মতো পণ্য বৈজ্ঞানিক প্রমাণের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে। এর লক্ষ্য এক আসক্তিকে আরেকটিতে বদলানো নয়, বরং তামাক এবং পরে নিকোটিন থেকে ধীরে ধীরে মুক্তি পাওয়ার নিরাপদ উপায় দেওয়া। এটি বাংলাদেশেও একটি উদাহরণ হতে পারে, কারণ এখানে তামাকের ব্যবহার খুব বেশি। বাংলাদেশ সরকার এখান থেকে শিক্ষা নিতে পারে, নিয়ন্ত্রিত নিরাপদ বিকল্পের মাধ্যমে কীভাবে ক্ষতি কমানো যায় এবং জনস্বাস্থ্য রক্ষা করা যায়।

সৌদি আরবের মতো দেশও জনস্বাস্থ্য নীতি হালনাগাদ করেছে এবং সেই সঙ্গে তার মূল্যবোধ বজায় রেখে নাগরিকদের সার্বিক সুস্থতা নিশ্চিত করেছে। সে মোতাবেক বাংলাদেশেও বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ নীতির সীমায় থেকে  নিরাপদ নিকোটিন সরবরাহ পদ্ধতি ধীরে ধীরে চালু করতে পারে, যাতে দেশের তামাকমুক্ত করার লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *